বিপিএল: বিদেশি খেলোয়াড়দের অর্থ দেওয়ায় ‘নিয়মভঙ্গ’

Author Topic: বিপিএল: বিদেশি খেলোয়াড়দের অর্থ দেওয়ায় ‘নিয়মভঙ্গ’  (Read 730 times)

Offline shahadat.ns

  • Newbie
  • *
  • Posts: 18
  • Test
    • View Profile
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলছেন, কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি অনুমোদন ছাড়া বিদেশি মুদ্রায় পাওনা পরিশোধ করলে তা মুদ্রা পাচার আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

গত ২২ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর বিপিএলের এবারের আসরে ক্রিস গেইল, কুমার সাঙ্গাকারা, শহিদ আফ্রিদি, সুনিল নারাইনের মতো তারকা খেলোয়াড়সহ মোট ৬৫ জন বিদেশি ক্রিকেটার খেলে গেছেন। এই টুর্নামেন্টে খেলার জন্য ছয়টি দলের সঙ্গে ৩০ হাজার থেকে ৭০ হাজার ডলারের চুক্তি ছিল তাদের।

বিপিএলের তৃতীয় আসরে দল গঠন হয় প্লেয়ার্স বাই চয়েজ পদ্ধতিতে। লটারির মাধ্যমে স্থানীয় ও বিদেশি খেলোয়াড়দের বেছে নেয় ছয় ফ্র্যাঞ্চইজি।

অবশ্য ২২ অক্টোবরের প্লেয়ার্স বাই চয়েজের বাইরেও কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড়ের সঙ্গে চুক্তি করে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। এসব চুক্তিতে ক্রিকেটাররা কত টাকা পেয়েছেন তা গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি।

বিসিবি অবশ্য বলেছে, সব বিদেশি ক্রিকেটারের পারিশ্রমিকের ব্যাপারে তারা এনবিআরকে অবহিত করেছে।

গত ২০ ডিসেম্বর মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান জানান, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, চিটাগং ভাইকিংস সবার শতভাগ পারিশ্রমিক শোধ করেছে। রংপুর বিদেশি খেলোয়াড়দের শতভাগ ও দেশি খেলোয়াড়দের ৭৫ শতাংশ পরিশোধ করেছে। বাকি সবাই ৭৫ শতাংশ করে দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়দের প্রাপ্য পারিশ্রমিক শোধ করেছে।

বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের নিয়ম অনুযায়ী, টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই পারিশ্রমিকের ৫০ শতাংশ পেয়ে যাওয়ার কথা ক্রিকেটারদের। টুর্নামেন্ট চলার সময় পাওয়ার কথা আরও ২৫ ভাগ। বাকি ২৫ ভাগ টুর্নামেন্ট শেষের এক মাসের মধ্যে।

কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এই বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে কেবল নয়জনের পাওনা পরিশোধের জন্য তাদের অনুমতি নিয়েছে সংশ্লিষ্ট ফ্র্যাঞ্চাইজি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেবল একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি তাদের নয়জন বিদেশি খেলোয়াড়ের পাওনা বিদেশি মুদ্রায় পরিশোধের অনুমাদন চেয়ে আবেদন করেছে। আমরা অনুমোদন দিয়েছি।”

এ ধরনের অনুমোদনের বিষয়টি দেখভাল করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সেচেঞ্জ অপারেশনস ডিপার্টমেন্ট।

ওই বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বরিশাল বুলস তাদের নয় বিদেশি খেলোয়াড়ের  পাওনা বাবদ মোট দুই লাখ ২৫ হাজার ডলার বিদেশি মুদ্রায় পরিশোধের অনুমোদন চেয়েছিল। বিসিসিও এ বিষয়ে সুপারিশ করেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের অনুমতি দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গণমাধ্যম ও যোগাযোগ কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কীভাবে বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে হবে সে নিয়ম ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোই জানে।

“পারিশ্রমিক পরিশোধের বিষয়টি চুক্তিতেও আছে। প্রোপার চ্যানেলেই তাদের পরিশোধ করার কথা, আশা করছি তারা সেভাবেই করছেন।”

সবচেয়ে বেশি অর্থে বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে আসা বরিশাল বুলস ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক এমএ আওয়াল চৌধুরী বলেন, “আমরা বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়েছি। বিদেশি খেলোয়াড়দের টাকা পরিশোধে ব্যংকের অনুমোদন নেওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা ছিল। আমরা নিয়ম মেনেই এগোচ্ছি।”

শুভঙ্কর সাহা জানান, বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন বিধিমালা অনুযায়ী, যেসব লেনদেন প্রাধিকারভুক্ত, সেসব লেনদেন ছাড়া সবক্ষেত্রেই বিদেশি প্রার্থীর অনুকূলে অর্থ পাঠানোর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হয়।

কোনো বিদেশি খেলোয়াড় বাংলাদেশে খেলে যাওয়ার পর পাওনা বুঝে নিতে কী করতে হবে সে বিষয়ে আরও স্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায় চলতি বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জারি করা একটি পরিপত্রে (এসআরও)।

সেখানে বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি নাগরিককে বাংলাদেশ থেকে বিদেশি মুদ্রায় পারিশ্রমিক দেওয়া হলে ওই ব্যক্তি ৩০ শতাংশ কর দেবেন। আর বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ওই বিদেশিকে পারিশ্রমিক পরিশোধ করবে- তারা সরকারকে দেবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।

বিপিএলে কোনো দলের হয়ে খেলতে আসা কোনো বিদেশি খেলোয়াড় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই পারিশ্রমিকের অর্থ তার দেশে নিয়ে গেলে তা মুদ্রা পাচার আইনে অপরাধ হবে কি না জানতে চাইলে শুভঙ্কর সাহা বলেন, “কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি কাকে কতদিনের মধ্যে অর্থ পরিশোধের চুক্তি করেছে সে তথ্য আমাদের কাছে নেই। কাল যদি কেউ আমাদের কাছে আবেদন নিয়ে আসে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি অনুমতি দেয়, সেক্ষেত্রে তো আর একে মানি লন্ডারিং বলা যাবে না।”

তবে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি অনুমোদন না নিয়েই অর্থ পরিশোধ করে দিলে তা মুদ্রা পাচার আইনের লঙ্ঘন হবে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
Shahadat Hossain
Lecturer in Physics
Department of Natural Sciences