সুলতানি আমলের মুদ্রায় ইসলামী ভাবধারার প্রতিফলন

Author Topic: সুলতানি আমলের মুদ্রায় ইসলামী ভাবধারার প্রতিফলন  (Read 2179 times)

Offline Faruq Hushain

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 86
  • Test
    • View Profile
বাংলায় ১৩ শতকের প্রথম দশকে প্রথম মুসলিম শাসনের সূত্রপাত হয়। ধীরে ধীরে পরবর্তী ১৩০ বছরের মধ্যে পুরো বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৩৩৪ খ্রিস্টাব্দে ২০০ বছরব্যাপী স্বাধীন সুলতানি যুগের সূচনা হয়। সুলতানি যুগের রৌপ্যমুদ্রাই তত্কালীন মুসলিম সুলতানদের মুখ্য পরিচায়ক। মুদ্রালিপির মাধ্যমে বাংলার সুলতানদের ধর্মীয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। অনেক সুলতানই তাঁদের ইসলামের প্রতি ভালোবাসা থেকে মুদ্রায় কালেমায়ে তাইয়্যেবা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ উত্কীর্ণ করেছিলেন। আলী মর্দান খলজির (১২১০-১৩ খ্রি.) মুদ্রার সম্মুখ দিকের প্রান্তলিপিতে সর্বপ্রথম কালেমা দেখা যায়। পরে শিহাবুদ্দিন বায়জিদ শাহ (১৪১২-১৪ খ্রি.), জালালুদ্দিন মুহম্মদ শাহ (১৪১৮-৩৫ খ্রি.), নাসিরুদ্দিন মাহমুদ (১৪৩৪-৫৯ খ্রি.), রুকনুদ্দিন বারবাক শাহ (১৪৫৯-৭৪ খ্রি.), শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ (১৪৭৪-৮১ খ্রি.), নুরুদ্দিন সিকান্দার (১৪৮১ খ্রি.), জালালুদ্দিন ফতেহ শাহ (১৪৮১-৮৭ খ্রি.), সাইফুদ্দিন ফিরোজ শাহ (১৪৮৮-৯০ খ্রি.), কুতুবুদ্দিন মাহমুদ (১৪৯০ খ্রি.), শামসুদ্দিন মুজাফফর (১৪৯০-৯৩ খ্রি.) এবং আলাউদ্দিন হোসেন শাহের (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি.) মুদ্রার একদিকে কালেমায় তাইয়্যেবা অঙ্কিত রয়েছে। বাংলার অনেক সুলতানই ইসলামের প্রথম চার খলিফাকে শ্রদ্ধা করতেন এবং মুদ্রায় তাঁদের নাম উত্কীর্ণ করতেন। সিকান্দার শাহ (১৩৫৭-৮৯ খ্রি.), গিয়াসুদ্দিন আজম (১৩৮৯-১৪১০ খ্রি.), শিহাবুদ্দিন বায়জিদ শাহ, শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ ও শামসুদ্দিন মুজাফফর শাহের মুদ্রায় খোলাফায়ে রাশেদিন বা ইসলামের প্রথম চার খলিফা হজরত আবু বকর, হজরত ওমর, হজরত ওসমান ও হজরত আলী (রা.)-এর নাম উত্কীর্ণ রয়েছে। এ ছাড়া প্রায়ই দেখা যায়, সুলতানরা নিজেদের তাঁদের মুদ্রায় ‘গাউসুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন’ (ইসলাম ও মুসলিমদের ত্রাণকর্তা) বা ‘নাসির-উল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন’ (ইসলাম ও মুসলিমদের সাহায্যকারী) হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কোনো কোনো সুলতান নিজেকে সরাসরি আল্লাহর প্রেরিত প্রতিনিধি হিসেবে মুদ্রায় প্রচার করেছেন। কুতুবুদ্দিন মাহমুদ শাহের মুদ্রায় তিনি নিজেকে ‘আল মুয়িদ বিতাইদ আল রহমান, খলিফাতুল্লাহ বিল হুজ্জাত ওয়াল বুরহান’ ঘোষণা করেছেন। অনেক সুলতান তাঁদের রাজ্যবিস্তারের কৃতিত্ব মহান আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেছেন। সিকান্দার শাহর অনেক মুদ্রার লিপিতে দেখা যায়, ‘নাসির আল দ্বীন, আল্লাহ, আল-কাহির, অলি আল্লাহ’—ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে ইসলামী ভাবধারার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর অনেক মুদ্রায় নিজেকে ‘আল মুজাহিদ ফি সাবিলির রহমান’—অর্থাৎ আল্লাহর পথ অনুসরণকারী যোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তাঁর ৮৯৯ হিজরির মুদ্রায় নিজেকে ‘আল আদিল, আল বাজিল, ওয়ালাদু সাইয়্যেদিল মুরসালিন’—অর্থাৎ ন্যায়বিচারক ও দানশীল, নবীদের নেতা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশধর হিসেবে প্রচার করেছেন।