জীবনের প্রথম টেস্টের মতো শেষ টেস্টেও জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠা ক্রিকেট-ইতিহাসে বেশ বিরল ঘটনা। এমন বিরল অভিজ্ঞতার সাক্ষী শিবনারায়ণ চন্দরপল। সেই ১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল। সুদীর্ঘ ২২ বছরের পথ পরিক্রমার সমাপ্তি হলো অবশেষে। জাতীয় দলকে বিদায় জানালেন ওয়েস্টইন্ডিজের এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
১৯৯৪ সালের মার্চে স্বদেশ গায়ানায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক। অভিষেকেই ৬২ রানের দৃঢ়তাভরা ইনিংস খেলে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ‘লম্বা রেসের ঘোড়া’। ম্যাচটা ইনিংস ব্যবধানে জিতে চন্দরপলের আগমন রঙিন করে তুলেছিল ক্যারিবীয়রা। কাকতালীয়ভাবে এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের শেষ টেস্টের প্রতিপক্ষও ইংল্যান্ড। গত বছরের মে মাসে ব্রিজটাউনে জীবনের শেষ টেস্টেও জয়ের আনন্দে মেতে উঠেছিলেন তিনি। পাঁচ উইকেটে জয়ের সুবাদে তিন ম্যাচের সিরিজ অমীমাংসিত রাখতে পেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
চন্দরপল অবশ্য তখনো জানতেন না যে সেটাই তাঁর শেষ টেস্ট হতে যাচ্ছে। ওই সিরিজে ছয় ইনিংসে সব মিলিয়ে মাত্র ৯২ রান করার পর জুনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের দলে সুযোগ পাননি তিনি। ৪১ বছর বয়সে এসে আর লড়াই করার উদ্যমও হয়তো নেই। তাই শুক্রবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন চন্দরপল। ঘরোয়া ক্রিকেটে অবশ্য আরো কিছুদিন খেলবেন।
বিদায়টা বেশ আক্ষেপজাগানো হলেও চন্দরপলের ক্যারিয়ার দারুণ বর্ণাঢ্য। ১৬৪ টেস্টে ৩০টি শতক ও ৬৬টি অর্ধশতকসহ ৫১.৩৭ গড়ে তাঁর রান ১১,৮৬৭। ব্রায়ান লারার চেয়ে মাত্র ৮৬ রান পিছিয়ে থেকে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। টেস্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় তাঁর অবস্থান সপ্তম। টেস্টে চন্দরপলের সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ২০৩। তা-ও একবার নয়, দু-দুবার। প্রথমবার ২০০৫ সালে ঘরের মাঠ জর্জটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ২০১২ সালে মিরপুরে পরের প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ। তবে চন্দরপলের জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ইনিংস নিঃসন্দেহে ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০৪ রান। অ্যান্টিগায় সেই টেস্টে রেকর্ড ৪১৮ রান তাড়া করে তিন উইকেটের নাটকীয় জয় পেয়েছিল ক্যারিবীয়রা।
চন্দরপলের ওয়ানডে ক্যারিয়ারও দারুণ সমৃদ্ধ। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ২৬৮ ম্যাচে ১১টি শতক ও ৫৯টি অর্ধশতকসহ ৪১.৬০ গড়ে ৮,৭৭৮ রান করেছেন তিনি। সর্বোচ্চ ১৫০ রান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। চন্দরপলের শেষ ওয়ানডের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম। ২০১১ বিশ্বকাপে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালই তাঁর জীবনের শেষ ওডিআই। টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য তেমন সুবিধা করতে পারেননি। ২২ ম্যাচ খেলে ২০.১৭ গড়ে সাকুল্যে ৩৪৩ রান করেছেন।
চন্দরপলের অনমনীয় দৃঢ়তা আর লড়াকু মানসিকতা দেখে অস্ট্রেলিয়ার স্পিন-কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন একবার বলেছিলেন, ‘লোকটাকে ক্রিজ থেকে বের করার জন্য শাবল দরকার!’ তাঁর অবসরের ঘোষণায় প্রতিপক্ষ বোলাররা নিশ্চয়ই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। এখন যে আর ‘শাবল’ প্রয়োজন নেই!