শিশুরা কৌতূহল প্রিয় এবং সব কিছুই তাদের মুখের মধ্যে পুরে ফেলতে পছন্দ করে। তারা যেকোন জিনিস খেতে বা পান করতে চেষ্টা করে। শিশুরা আকর্ষণীয় প্যাকেট, উজ্জ্বল রঙ, সুঘ্রাণ পছন্দ করে এবং ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন পণ্য টেনে আনতে পছন্দ করে। আসলে শতকরা ৯০ ভাগ বিষক্রিয়া সংগঠিত হয় ঘরে। ছোট শিশুর কৌতূহল তাকে বিষক্রিয়ার ঝুঁকিতে ফেলে। অন্য যেকোন বয়সের শিশুদের চেয়ে পাঁচ বছর বয়সের শিশুরা এবং তার নীচের বয়সের শিশুরাই ঘটনাক্রমে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি। বিষক্রিয়ার প্রভাবে বড়দের চেয়ে শিশুরা বেশি ভোগে কারণ তারা ছোট, ওদের বিপাক খুব দ্রুত হয় এবং ওদের শরীর বিষাক্ত রাসায়নিক মোকাবিলা করতে সক্ষম না। আপনার গৃহের বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করতে এবং শিশুর সুরক্ষার জন্য কিছু পরিবর্তন করতে পারেন :
বিপদজনক গৃহস্থলী দ্রব্য শিশুর নাগালের বাইরে রাখুন, যেমন-
· যে কোন ধরণের ঔষধ (বিশেষ করে আয়রন জাতীয় ঔষধ)
· পরিষ্কারক দ্রব্য যেমন- ডিশ ওয়াশার, লন্ড্রি ডিটারজেন্ট, ব্লিচ, অ্যামোনিয়া এবং আসবাবপত্র পলিশ করার দ্রব্য
· জমাট বিরোধী পদার্থ, পেইন্ট থিনার, উইন্ডশিল্ড পরিস্কারক
· গ্যাসোলিন বা পেট্রল, কেরোসিন ও বাতি জ্বালানোর তেল
· কীটনাশক
· অ্যালকোহল
ঔষধ এবং অন্যান্য দ্রব্য তাদের নির্দিষ্ট পাত্রেই রাখুন। এই পাত্রে যদি আপনি পূর্বে খাদ্য রেখে থাকেন তাহলে শিশু দ্বিধান্বিত হতে পারে। এছাড়াও কিছু বিপদজনক জিনিস আছে যা খাবার বা পানীয়ের মতোই দেখতে যেমন- শিশুরা গুঁড়া সাবানকে চিনি মনে করে ভুল করতে পারে, লেবুর সুগন্ধযুক্ত তরল পরিষ্কারককে লেবুর শরবত বলে ভুল করতে পারে।
গৃহের বিপদজনক বিষাক্ত পদার্থ গুলো যেভাবে রাখবেন :
১। রান্নাঘরে
· ডিশ ওয়াশার, লন্ড্রি ডিটারজেন্ট, পরিষ্কারক দ্রব্য ও অন্যান্য বিষাক্ত দ্রব্য ক্যাবিনেটের মধ্যে তালা লাগিয়ে রাখুন। শিশু যেন এগুলো ধরতে না পারে এমন জায়গায় রাখুন।
· যদি সিঙ্কের নীচে রাখেন তাহলে অবশ্যই এগুলোর মুখ ভালো করে আটকাবেন এবং ক্যাবিনেটে রেখে তালা মেরে রাখুন।
২। বাথরুমে
· সাবান, শ্যাম্পু ও টুথপেস্ট, বিপদজনক দ্রব্য থেকে আলাদা ক্যাবিনেটে রাখুন।
৩। গ্যারেজ ও বেসমেন্টে
· রঙ, রঙ পাতলা করার দ্রব্য, বার্নিশ ও কীটনাশক নির্দিষ্ট জায়গায় না ক্যাবিনেটে তালা দিয়ে রাখুন।
· এগুলো কেনার সময় লেবেল দেখে কম বিষাক্ত ও নিরাপদ দ্রব্য কিনুন।
· কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য গাড়ি স্টার্ট করার পূর্বেই গ্যারেজের দরজা খুলে নিন।
৪। ঘরে
· মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ ও না খাওয়া ঔষধ জমিয়ে না রেখে ফেলে দিন।
· শিশুদের নাগালের বাইরে যেভাবে ঔষধ রাখতে হয় তেমনি ওদের সামনে ঔষধ না খাওয়াও ভালো কারণ শিশুরা অনুকরণ প্রিয়।
· ঔষধকে চকলেট বা ক্যান্ডি না বলে এর সঠিক নাম বলুন যাতে শিশু বিভ্রান্ত না হয়।
· শিশুকে ঔষধ খাওয়ানোর পূর্বে প্রেসক্রিপশন ভালোভাবে দেখে কোন ঔষধের কতটুকূ পরিমাণ খাওয়াতে হবে তা নিশ্চিত হয়ে খাওয়ানো শুরু করুন। বেশি সতর্কতার জন্য প্রথম প্রথম প্রতিবারই নির্দেশিকা দেখে নিন। মধ্যরাতে ঔষধ খাওয়ানোর প্রয়োজন হলে অবশ্যই আলো জ্বালিয়ে নিন।
· শিশুর সামনে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন।
· কীটনাশক দ্রব্য ও সার শিশু যাতে ধরতে না পারে এমন জায়গায় রাখুন।
· আপনার ঘরে বা বারান্দায় বা বাগানে বিষাক্ত উদ্ভিদ আছে কিনা চিহ্নিত করে সরিয়ে ফেলুন বা শিশু যাতে ধরতে না পারে এমন জায়গায় রাখুন।
· সামান্য পরিমাণ অ্যালকোহলও শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। তাই শিশুর নাগালের বাইরে সিগারেট ও অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য রাখুন।
কোন কারণে শিশুর বিষক্রিয়া হলে যা করবেন :
· যদি বুঝতে পারেন যে, শিশু বিষাক্ত কিছু খেয়ে ফেলেছে তাহলে আপনার শিশুকে কিছু পান করতে দিবেন না।
· আপনার শিশুটি কোন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ সেবন করেছে সেটা বুঝতে পারলে সেটার বাকী অংশটুকু ডাক্তারকে দেখানোর জন্য নিয়ে যান।
· দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। কতক্ষণ পূর্বে এবং কোথায় বিষক্রিয়া হয়েছে তা ডাক্তারকে বলুন।
- See more at:
http://www.priyo.com/2016/Feb/07/195658-