‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আমার শুধু ভালোবাসাই আছে’

Author Topic: ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আমার শুধু ভালোবাসাই আছে’  (Read 576 times)

Offline habib

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 112
  • Test
    • View Profile
‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আমার শুধু ভালোবাসাই আছে’

রমিজ রাজা
     
আমি মনে করি, বাংলাদেশ হ্যাভ টু টেক ইট ইজি। বাংলাদেশ দারুণ একটা ক্রিকেট জাতিতে পরিণত হচ্ছে, তবে সেটির সঙ্গে দায়িত্ববোধের ব্যাপারও চলে আসে ।

নানা সময়ে নানা মন্তব্যে বাংলাদেশে তুমুল বিতর্কিত তিনি। বাংলাদেশ-বিরোধী হিসেবেও একটা পরিচিতি হয়ে গেছে। কিন্তু কাল ধর্মশালা স্টেডিয়ামের ধারাভাষ্যকক্ষে উৎপল শুভ্রকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে রমিজ রাজা দাবি করলেন, তাঁকে ভুল বোঝা হয়েছে।

* মোহাম্মদ আমিরকে না ফেরানোর ব্যাপারে আপনার তো শক্ত অবস্থান ছিল। আমির তো ঠিকই ফিরলেন। আপনার কী প্রতিক্রিয়া?
রমিজ: আমার অবস্থান এখনো পরিষ্কার। ওই বিতর্কে আমার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্ধকার একটা অধ্যায় আমি দেখেছি, ওই সময়টায় খেলেছি। আমিরের ব্যাপারে আমি যে অবস্থান নিয়েছিলাম, তা ছিল ক্রিকেট, আবেগ ও যুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে। আমি শুধু আমার মতটাই জানিয়েছিলাম। তার পরও আমির ফিরেছে, এখন ও মাঠে কেমন করছে, তা নিয়েই আলোচনা হওয়া উচিত। ওকে আবার দেশের পক্ষে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, আমাকে ধারাভাষ্য দিতে হচ্ছে, আমি সেটি নির্মোহভাবে দেব। তবে কলঙ্কিত খেলোয়াড়দের আবার খেলায় ফেরানোর ব্যাপারটা আমার পছন্দ নয়।

* আমির যখন বোলিং করেন আর আপনি ধারাভাষ্যে, আপনার অপছন্দ বেরিয়ে এল, এমন কোনো চাপ কি অনুভব করেন?
রমিজ: মোটেই না। আমার কাজ হলো, আবেগ-টাবেগ সব বাদ দিয়ে মাঠে যা হচ্ছে তা বর্ণনা করা। আমি সেটাই করি।

* ফেরার পর আমিরের সঙ্গে কি দেখা হয়েছে?
রমিজ: না, হয়নি। খেলোয়াড়দের জগৎ আলাদা, আমাদের আলাদা। পেশাগত প্রয়োজন ছাড়া আমি ওদের সঙ্গে কথা বলতে যাই না।

* পেশাগত প্রয়োজনেই যদি কখনো আমিরের সাক্ষাৎকার নিতে হয়, নেবেন?
রমিজ: ওই যে বললাম, পেশায় আবেগের স্থান নেই।

* আমিরের দুর্দান্ত কামব্যাকে আপনি কি একটু বিস্মিত?
রমিজ: অবশ্যই বিস্মিত। ওর ওপর নিশ্চয়ই প্রচণ্ড চাপ ছিল। আমি ভেবেছিলাম, পাঁচ বছর নির্বাসনে থাকার ধাক্কা ও সামলাতে পারবে না। কারণ পাঁচ বছরে টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং, ওয়ানডে ব্যাটিং অনেক বদলে গেছে। ও বরাবরই খুব স্মার্ট বোলার ছিল। শুধু ওই পাঁচ বছরের বিরতির ধাক্কা সামলানোই নয়, ওকে যখন পাকিস্তানের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বোলিং করতে হচ্ছে, ক্রিকেটীয় চাপ, পরিস্থিতির চাপ, দর্শকদের চাপ সবকিছুই একসঙ্গে সামলাতে হচ্ছে । ও দারুণভাবে তা সামলাচ্ছে।

* আপনি তো একসময় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। এখনো তা থাকলে কি আমিরকে ফিরতে দিতেন?
রমিজ: আমার যদি ক্ষমতা থাকত, আমি খেলাটাকে কলঙ্কিত করা সব খেলোয়াড়কেই বের করে দিতাম। কারণ অনেক বছর ধরে এদের কারণে পাকিস্তান ক্রিকেটের অনেক ক্ষতি হয়েছে এবং এরা বরাবরই বেনিফিট অব ডাউট পেয়ে এসেছে। আমার কথা হলো, আমির ভুল করেছে, গুরুতর ভুল করেছে। কিন্তু স্যরি, আমাদের কিছু করার নেই। কারণ এটি খেলাটির সমর্থক ও দর্শকদের বিশ্বাসটা ধ্বংস করে দেবে। আমরা তা চাই না।

* আপনি শুনেছেন কি না পিএসএলে আপনাকে নিয়ে বাংলাদেশে বড় একটা বিতর্ক হয়েছে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আপনি তামিম ইকবালের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, “ইংলিশ অর হোয়াট?” যেটিকে অনেকের কাছেই মনে হয়েছে তামিমকে দিয়ে আপনি উর্দুতে কথা বলাতে চেয়েছিলেন...
রমিজ: (হাসি) ওরা পুরোপুরি ভুল বুঝেছে। তামিমকে আমি প্রশ্নটা করেছিলাম, কারণ আমি বাংলা বলতে পারি না। সে হয়তো উর্দু জানে না। তাহলে কী হবে—ইংলিশ না উর্দু? এটা ছিল খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। কিন্তু পরে আমি বুঝেছি, এটিকেই অনেক বড় বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। একটা নন-ইস্যুকে এমন বিশাল বিতর্কিত ব্যাপার বানিয়ে ফেললে সেটি নিয়ে দিনের পর দিন ব্যাখ্যা দিয়ে যাওয়া কঠিন।

* এর আগেও কি কেউ আপনার কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছে?
রমিজ: না, কেউ একজন আমাকে এটা বলেছে।

* এমন তীব্র প্রতিক্রিয়ার একটা কারণ হলো, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে যাঁরা ভালো ইংরেজি বলতে পারেন, তামিম সম্ভবত তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে। এটা তো আপনার জানা না থাকার কারণ নেই...
রমিজ: না, আমি জানতাম না। ওর সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল না।

* আগে কখনো আপনি তামিমের ইন্টারভিউ করেননি?
রমিজ: না, করিনি।

* এই যে আপনি দাবি করছেন, একটা নন-ইস্যুকে বিরাট বিতর্কিত ব্যাপার বানিয়ে ফেলা হয়েছে, এ নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
রমিজ: আমি মনে করি, বাংলাদেশ হ্যাভ টু টেক ইট ইজি। বাংলাদেশ দারুণ একটা ক্রিকেট জাতিতে পরিণত হচ্ছে, তবে সেটির সঙ্গে দায়িত্ববোধের ব্যাপারও চলে আসে। বাংলাদেশকে এমন ভালো করতে দেখাটা দারুণ ব্যাপার, তবে একটা ভারসাম্য কিন্তু রাখতে হবে। সব সময়ই এমন আক্রমণাত্মক হয়ে থাকলে কীভাবে হবে? আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশের কিছু সমর্থক মনে করে পুরো বিশ্বই বাংলাদেশের বিপক্ষে। সবাই মিলে বাংলাদেশকে টেনে ধরার চেষ্টা করছে। এটা একদমই ঠিক নয়। আমাদের পেশাটা খুব স্বচ্ছ। ভালো কোনো পারফরম্যান্স দেখলে আমরা তা বর্ণনা করি, সেটির প্রশংসা করি, খুশিও হই। পারফরম্যান্স খারাপ হলে সেটিও আমাদের বলতে হবে। পাকিস্তানেও লোকজন মনে করে, আমি পাকিস্তানের স্বার্থ সেভাবে তুলে ধরি না। আমি বারবারই বলে এসেছি, আমার কাজ হলো যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ থাকা। বাংলাদেশ আধুনিক মানসিকতার একটা জাতি, অর্থনীতি ও অন্য অনেক ক্ষেত্রেই খুব ভালো করছে। এখন এটা বোঝার সময় এসেছে যে, কারও কোনো মন্তব্য পছন্দ না-ই হতে পারে। সবকিছুতেই এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখালে তাতে নিজেদেরই ক্ষতি।

* আপনি যা বললেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটকে টেনে নামানোর চেষ্টা হচ্ছে, এমন একটা ধারণা কিন্তু বাংলাদেশে আছে। তাসকিন-সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাকেও যেমন দেখা হচ্ছে একটা ষড়যন্ত্র হিসেবে...
রমিজ: এটি এই উপমহাদেশেরই চরিত্র—যেন পুরো বিশ্বই আমাদের বিপক্ষে। ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব খুব বাজার পায় এখানে। পাকিস্তানের বোলারদের অ্যাকশন প্রশ্ন ওঠার সময়ও পাকিস্তানে সবাই বলতে শুরু করল, অন্য দেশের বোলারদের কেন ধরা হচ্ছে না, ওই বোলার কেন খেলে যাচ্ছে...। এসব না ভেবে যেখানে নিজেদের সমস্যা সমাধান করা উচিত।

* বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উত্থান কি আপনাকে চমকে দিয়েছে?
রমিজ: কিছুটা তো বটেই। তবে এর কারণ হলো, বাংলাদেশ দারুণ কিছু নতুন খেলোয়াড় পেয়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে আত্মবিশ্বাস। ওরা খুব অনুপ্রাণিত, আগের ১০ বছরে যত হতাশা জমেছে, ম্যাচ জিতে যেন সেই হতাশা ঘোচাতে চাইছে। এটা দারুণ ব্যাপার। হতাশা-ক্ষোভ এসব মেটানোর মাধ্যম যদি পারফরম্যান্স হয়, এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে! কে কী বলল, তাতে পাত্তা দেওয়ার কী দরকার? এখন বাংলাদেশ এমন এক দল যেটি ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সমানে সমানে লড়তে পারে। গত দুই-আড়াই বছরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স দারুণ এক গল্প। এটা বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য ভালো, এশিয়ান ব্লকের জন্য আরও বেশি ভালো।

* পাকিস্তান তো ব্যতিক্রমী বোলার উপহার দেওয়ার জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশও এমন একজনকে পেয়েছে। মুস্তাফিজুর রহমানকে কি দেখেছেন?
রমিজ: হ্যাঁ, দারুণ বোলার। মুস্তাফিজ অনেকটা মোহাম্মদ আমিরের মতো। কীভাবে উইকেট নিতে হয়, তা জানে। আমাদের এদিকে তো অল্প বয়সে সব হাতে ধরে শেখাতে হয়। কিন্তু ও বয়সের তুলনায় অনেক পরিণত। মাঠে ওকে দেখে মনেই হয় না নতুন এসেছে। ও স্লোয়ার দিচ্ছে, বোঝার পরও অনেক সময়ই ব্যাটসম্যানদের কিছু করার থাকে না। তার মানে ওর মধ্যে বিশেষ কিছু আছে। ম্যাচ রিড করার ক্ষমতা দারুণ, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভয় পাওয়ার বদলে উল্টো জ্বলে ওঠে। শুধু বোলিং না, যেভাবে ও চ্যালেঞ্জ নেয়, সেটাই বুঝিয়ে দেয় ও মানসিকভাবে কত পরিণত।

* আপনি জানেন কি না, মুস্তাফিজের আইডলও তো কিন্তু আমির...
রমিজ: আমির আর মুস্তাফিজ এশিয়ার সবচেয়ে স্মার্ট দুই বোলার। ওর এখন উচিত, টেস্টে ভালো করার দিকে মন দেওয়া। টেস্টে ভালো করলে বাকি সব ফরম্যাটেও ভালো করবে।

* আগের বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশের মধ্যে কী পার্থক্য দেখেন?
রমিজ: নিজেদের ওপর বিশ্বাস। এই বিশ্বাস তখনই আসে, যখন জানবেন আপনি ভালো। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এখন বিশ্বাস করে, ওরা সেরাদের সমকক্ষ। যে কারণে চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পায় না। মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রভাবও ভুলে গেলে চলবে না। ও খুব আক্রমণাত্মক, বাংলাদেশের উত্থানে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ কারণেই বাংলাদেশ খুব আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে। দারুণ কিছু ফাস্ট বোলার পেয়ে যাওয়ায় বোলিং এখন খুব ভালো, ফিল্ডিংটায় আরেকটু উন্নতি করতে হবে। ব্যাটিংটা এমনিতেই ভালো হবে, কারণ এখনো ওরা তরুণ।

* শেষ প্রশ্ন ও অপ্রীতিকর প্রশ্ন—বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে বাংলাদেশ-বিরোধী মনে করে। এটা শুনে আপনার কেমন লাগছে?
রমিজ: আমার জন্য এটা খুব দুঃখজনক। কারণ "বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আমার শুধু ভালোবাসাই আছে।" কিছু কথার ভুল ব্যাখ্যা হওয়ায় আমাকে সবাই ভুল বুঝেছে। আমি আশা করব, এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সবাই আমাকে একটু বুঝতে পারবে।
Md. Habibur Rahman
Officer, Finance & Accounts
Daffodil International University (DIU)
Corporate Office, Daffodil Family
Phone: +88 02 9138234-5 (Ext: 140)
Cell: 01847-140060, 01812-588460