বহুতল ভবন হোক আর বাসাবাড়ি৷ বাণিজ্যিক ভবন বা কয়েক তলার শপিং মল৷ গোড়া থেকে চূড়ায় ওঠার সহজ উপায় কী? একবাক্যে সবাই মেনে নেবেন লিফট! কিন্তু লিফট ব্যবহারে এমন সব আচরণ করা নিশ্চয়ই ঠিক নয়, যা অন্যের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই লিফটে উঠে লোকে আপনার কাছ থেকে সামান্য হলেও সৌজন্যবোধটুকুই চাইবে, বিরক্তি নয়।
জীবনযাপনভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল হংকং টেটলার ডটকমের একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, লিফট মূলত অনেকের সঙ্গে মিলে ব্যবহার করতে হয়। তাই যদি আপনি লিফটে ওঠার পর লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার আগে অন্য কাউকে আসতে দেখেন, তাহলে দরজা খোলার বোতাম চেপে ধরে তাঁকে উঠতে সাহায্য করুন। এটাও একধরনের ভদ্রতা।
সাধারণত ভবনের তলা হিসেবে লিফটের ভেতরে ফ্লোর নম্বর দেওয়া বোতাম থাকে। তবে কিছু ভবনে ব্যতিক্রম থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগেই জেনে নিন ভবনের কত তলায় যাবেন আর সেটা লিফটের কত নম্বর।
‘অতি আবশ্যক’ না হলে লিফটের মধ্যে নীরব থাকতে পারেন৷ উচ্চ স্বরে কথা বলা তো নয়ই। লিফটে পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে সৌজন্যমূলক কথা বলুন। অতিরিক্ত গালগপ্প যেন নাহয় লিফট থেকে নেমেই সারুন।
লিফটের মধ্যে মুঠোফোনে কথা না বলাই ভালো৷ লিফটে মুঠোফোনের নেটওয়ার্কও ওঠানামা করতে পারে। তাই কথা না শোনা গেলে অযথা উচ্চ স্বরে কথা বলে অন্যদের চোখে বিরক্তির কারণ হওয়ার দরকার কী! জরুরি ফোন হলে সেটা ধরে বলতে পারেন, ‘আমি তো লিফটে আছি, নেমে ফোন দিই?’ এক বা দোতলায় যেতে লিফট ব্যবহার না করাই ভালো। তবে শারীরিকভাবে অক্ষম কিংবা অতিরিক্ত মালপত্র বোঝাইয়ের ক্ষেত্রে লিফটের সাহায্য নিতে পারেন। লিফটে ওঠার জন্য অনেক মানুষ অপেক্ষায় থাকলে লাইন করে লিফটে উঠুন৷ পেছনে এসে আগে ওঠার চেষ্টা করবেন না৷ এতে অন্যরা খেপে যেতে পারে৷
লিফটে প্রয়োজনের বেশি জায়গা দখল না করাই ভালো। এতে লাইনে দাঁড়ানো অন্য ব্যক্তিটিও সহজে ওঠার সুযোগ পেতে পারেন। লিফটে হাঁচি-কাশি আসতেই পারে, মুখে রুমাল চেপে সামলে নিন। তাতে অন্যের কাছে নিজেকে ‘অস্বস্তির কারণ’ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন।
ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত হলে লিফট স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকেত দিতে থাকে। এমন সময়ে সবচেয়ে শেষে যিনি উঠেছেন, তাঁরই বাইরে বেরিয়ে আসা উচিত৷ লিফট থেকে নামার সময়েও হুড়োহুড়ি না করে একজনের পর একজন করে নামতে পারেন৷
লিফট যেহেতু একটা যন্ত্র, তাই গোলযোগ হতেই পারে৷ এই সময়ে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই৷ লিফটে যান্ত্রিক সমস্যায় পড়লে কী করবেন, সে বিষয়ে পরামর্শ দিলেন মান বাংলাদেশ লিফট সার্ভিসের প্রধান প্রকৌশলী মো. মাসুদ করিম। তিনি বলেন, ‘যান্ত্রিক ত্রুটি কিংবা লোডশেডিং বা অন্য কোনো কারণে লিফট মাঝপথে আটকে গেলে ভয় পাবেন না। আছে “অটো সিকিউরিটি ডিভাইস”। এতে লিফটে অন্ধকার হবে না, আছে ইমারজেন্সি লাইটিংয়ের ব্যবস্থা৷ লিফট এক জায়গায় আটকে না থেকে তা গিয়ে থামবে নিকটবর্তী মেঝেতে। তখন ভেতর থেকে সাবধানে দুই হাতে লিফটের দরজা খুলে বেরিয়ে আসুন। তবে নামার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নেবেন, আপনি সত্যিই কোনো ফ্লোর বা মেঝেতে নামছেন কি না৷’
ভূমিকম্প কিংবা ভবনে আগুন লাগলে, লিফট ব্যবহার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিলেন মাসুদ করিম। কারণ, বদ্ধ লিফট থেকে নিজে যেমন বেরোতে পারবেন না, তেমনি উদ্ধারকারী দলও আপনাকে খুঁজে পাবে না। ফলে পরিণতি হতে পারে আরও মারাত্মক।
আর যদি লিফটের রুফ বা দড়ি ছিঁড়ে যায়? লিফট তখন অতি দ্রুত নিচে নামতে থাকে। প্রতিটি লিফটেরই একটি নির্দিষ্ট গতিবেগ আছে, এর অতিরিক্ত বেগে নিচে নামতে গেলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে থামিয়ে দেবে স্পিড গভর্নর সেফটি ডিভাইস। মাসুদ করিম উল্লেখ করেন, ইউরোপ, আমেরিকা থেকে আমদানি করা ভালো ব্র্যান্ডের একেকটি লিফটে এমন প্রায় ২৪টি সেফটি ডিভাইস থাকে। সে ক্ষেত্রে ভবনে লিফট বসানোর ক্ষেত্রে ভালোভাবে জেনেশুনে কেনা উচিত।