তথ্যপ্রযুক্তির যুগে নানা প্রয়োজনে বায়োমেট্রিক্স ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিতর্ক বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হলেও উন্নত বিশ্বে তা দীর্ঘদিন ধরে চলমান। বেলজিয়ামে এ বিতর্ক এমনকি সংসদ পর্যন্তও গড়িয়েছে। কিন্তু তাই বলে এর ব্যবহার থেমে নেই, বরং পৃথিবীজুড়েই দ্রুত বেড়ে চলেছে। এর প্রধান কারণ সম্ভবত বায়োমেট্রিক্সের মাধ্যমে আরও দ্রুততা ও নির্ভরযোগ্যতার সঙ্গে কারও পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব। বহু দেশে পরিচয়পত্র, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ইমিগ্রেশন ইত্যাদিসহ নানা কার্যকলাপে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা কর্তৃক এর ব্যবহার সম্পর্কে আমরা জানি। বেসরকারি পর্যায়েও, বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টরে বায়োমেট্রিক্সের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। লন্ডনভিত্তিক সংস্থা গুডে ইন্টেলিজেন্সের ধারণা অনুযায়ী, বিশ্বে ইতিমধ্যে ৪৫ কোটি মানুষ ব্যাংকিংয়ের জন্য বায়োমেট্রিক্স ব্যবহার করছে এবং ২০২০ সাল নাগাদ এটাই হয়ে উঠবে গ্রাহক পরিচিতির প্রধান মাধ্যম। টেলিযোগাযোগ সংস্থা টেলস্ট্রার পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি নাগরিক মনে করেন বায়োমেট্রিক্সের ব্যবহার জালিয়াতি দমনে সহায়ক। তবে বায়োমেট্রিক্স ব্যবহারে সুবিধার পাশাপাশি ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা ও অপব্যবহারের আশঙ্কার কথাও বারবার আলোচনায় উঠে এসেছে।
বাংলাদেশে এই বিতর্কের প্রেক্ষাপট সিম নিবন্ধনে আঙুলের ছাপ ব্যবহারের অবতারণা। প্রাসঙ্গিক প্রশ্নগুলোর অন্যতম হচ্ছে, পরিচয় যাচাইয়ে আবার আঙুলের ছাপের কী দরকার? আমাদের সব তথ্য তো জাতীয় তথ্যভান্ডারে রয়েছেই, তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখলেই হয়। সিম নিবন্ধনে বেশির ভাগ দেশেই আঙুলের ছাপের প্রয়োজন নেই, অনেক দেশে এমনকি সিম নিবন্ধনেরও প্রয়োজন হয় না, বাংলাদেশে কেন প্রয়োজন? আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য এই মোবাইল অপারেটরদের হাতে নিরাপদ তো? প্রশ্নগুলো যৌক্তিক। তবে প্রশ্নকর্তার একাংশ প্রশ্ন রচনা করেই তুষ্ট এবং একাংশ ত্বরিত উপসংহার টানতে লিপ্ত হওয়ায় উত্তরগুলো অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে—কিছু প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে অনুচ্চারিত—ফলে সাধারণ মানুষ কিছুটা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।