খ্রীষ্টাব্দের মত বঙ্গাব্দেও ৩৬৫ দিনে বছর হয়। কিন্তু পৃথিবী তো সূর্যের চারিদিকে ঘুরতে ৩৬৫ দিনের থেকে একটু বেশি সময়ে নেয়। ঐ বেশি সময়টুকু যোগ করে চার বছর বাদে একবার করে লিপ ইয়ার হয়। সেই বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ২৯ দিন হয়, তাহলে?
প্রথমদিকে বাংলা পঞ্জিকা ঐ বেশি সময়ের হিসাব রাখত না। ১৯৬৬ সালে বাংলাদেশের বাংলা একাডেমির তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা হয়। এই মতে, বৈশাখ থেকে ভাদ্র, প্রতি মাস হয়ে ৩১ দিনে। আশ্বিন থেকে চৈত্র, প্রতি মাস হয়ে ৩০ দিনে। চার বছর পরে পরে চৈত্র মাসে ৩১ দিন হয়।
৭. বঙ্গাব্দের বারো মাসের নামকরণ করা হযেছে নক্ষত্রমন্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে । এই নাম সমূহ গৃহীত হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ “সূর্যসিদ্ধান্ত” থেকে।বাংলা মাসের এই নামগুলি হচ্ছে –
ক বৈশাখ – বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
খ জ্যৈষ্ঠ – জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
গ আষাঢ় – উত্তর ও পূর্ব আষাঢ়ে নক্ষত্রের নাম অনুসারে
ঘ শ্রাবণ – শ্রবণা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
ঙ ভাদ্র -উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম অনুসারে
চ আশ্বিন – অশ্বিনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
ছ কার্তিক – কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
জ অগ্রহায়ণ(মার্গশীর্ষ) – মৃগশিরা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
ঝ পৌষ – পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
ঞ মাঘ – মঘা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
ট ফাল্গুন – উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
ঠ চৈত্র – চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত তারিখ-ই-ইলাহী-র মাসের নামগুলি প্রচলিত ছিল পারসি ভাষায়, যথা: ফারওয়াদিন, আর্দি, ভিহিসু, খোরদাদ, তির, আমারদাদ, শাহরিযার, আবান, আযুর, দাই, বহম এবং ইসক্নদার মিজ।
৮. বাংলা সন অন্যান্য সনের মতোই সাত দিনকে গ্রহণ করেছে এবং এ দিনের নামগুলো অন্যান্য সনের মতোই তারকামন্ডলীর উপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে।
ক সোমবার হচ্ছে সোম বা শিব দেবতার নাম অনুসারে কারো মতে চাঁদের নাম অনুসারে
খ মঙ্গলবার হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের নাম অনুসারে
গ বুধবার হচ্ছে বুধ গ্রহের নাম অনুসারে
ঘ বৃহস্পতিবার হচ্ছে বৃহস্পতি গ্রহের নাম অনুসারে
ক্স শুক্রবার হচ্ছে শুক্র গ্রহের নাম অনুসারে
চ শনিবার হচ্ছে শনি গ্রহের নাম অনুসারে
ছ রবিবার হচ্ছে রবি বা সূর্য দেবতার নাম অনুসারে
বাংলা সনে দিনের শুরু ও শেষ হয় সূর্যোদয়ে । ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির শুরু হয় যেমন মধ্যরাত হতে ।
৫৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বরাহমিহির পঞ্চসিদ্ধান্তিকা নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। গ্রন্থটি পাঁচটি খণ্ডে সমাপ্ত। এই গ্রন্থটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের সংক্ষিপ্তসার বলে অভিহিত করা হয়। পঞ্চসিদ্ধান্তিকার পাঁচটি খণ্ডের নাম– এই সিদ্ধান্তগুলো হলো– সূর্যসিদ্ধান্ত, বশিষ্ঠসিদ্ধান্ত, পৌলিশ সিদ্ধান্ত, রোমক সিদ্ধান্ত ও ব্রহ্ম সিদ্ধান্ত। প্রাচীন ভারতে দিন, মাস, বৎসর গণনার ক্ষেত্রে ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বরাহমিহিরের পরে ব্রহ্মগুপ্ত নামক অপর একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী (জন্ম ৫৯৮) একটি সিদ্ধান্ত রচনা করেছিলেন। এই গ্রন্থটির নাম ব্রহ্মস্ফুট সিদ্ধান্ত। এই গ্রন্থটি খলিফা আল-মনসুরের আদেশে সিন্দহিন্দ নামে আরবি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে সৌর-মাস নির্ধারিত হয়, সূর্যের গতিপথের উপর ভিত্তি করে। সূর্যের ভিন্ন অবস্থান নির্ণয় করা হয় আকাশের অন্যান্য নক্ষত্রের বিচারে। প্রাচীন কালের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যের বার্ষিক অবস্থান অনুসারে আকাশকে ১২টি ভাগে ভাগ করেছিলেন। এর একটি ভাগকে তাঁরা নাম দিয়েছিলেন রাশি। আর ১২টি রাশির সমন্বয়ে যে পূর্ণ আবর্তন চক্র সম্পন্ন হয়, তার নাম দেওয়া হয়েছে রাশিচক্র। এই রাশিগুলোর নাম হলো– মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ ও মীন। সূর্যের বার্ষিক অবস্থানের বিচারে, সূর্য কোনো না কোন রাশির ভিতরে অবস্থান করে। এই বিচারে সূর্য পরিক্রমা অনুসারে, সূর্য যখন একটি রাশি থেকে অন্য রাশিতে যায়, তখন তাকে সংক্রান্তি বলা হয়। এই বিচারে এক বছরে ১২টি সংক্রান্তি পাওয়া যায়। একেকটি সংক্রান্তিকে একেকটি মাসের শেষ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।[৪] যেদিন রাত্রি ১২টার মধ্যে সূর্য্য ০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে প্রবেশ করে তার পরদিনই ১ বৈশাখ (পয়লা বৈশাখ) হয়। যেদিন রাত্রি ১২টার মধ্যে সংক্রান্তি হয় তার পরদিনই মাসের প্রথম দিন।[৫] মূলত একটি সংক্রান্তির পরের দিন থেকে অপর সংক্রান্ত পর্যন্ত সময়কে এক সৌর মাস বলা হয়। লক্ষ্য করা যায় সূর্য পরিক্রমণ অনুসারে সূর্য প্রতিটি রাশি অতিক্রম করতে একই সময় নেয় না। এক্ষেত্রে মাসভেদে সূর্যের একেকটি রাশি অতিক্রম করতে সময় লাগতে পারে, ২৯, ৩০, ৩১ বা ৩২ দিন। সেই কারণে প্রতি বছর বিভিন্ন মাসের দিনসংখ্যা সমান হয় না। এই সনাতন বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছর ঋতুভিত্তিক থাকে না। একেকটি মাস ক্রমশঃ মূল ঋতু থেকে পিছিয়ে যেতে থাকে।