« on: April 12, 2016, 01:42:14 PM »
পরিশ্রম না করলে ‘আফতাব’ হবে!
আফতাব আহমেদ
আফতাব আহমেদ কোচ! ভাবতেই অবাক লাগে। পরিশ্রমের কথা শুনলেই যাঁর জ্বর উঠত, সেই তিনিই কিনা এখন তরুণ ক্রিকেটারদের বলেন, ‘ওয়ার্ক হার্ড’!
গত পরশু দুপুরে প্রিমিয়ার লিগের ‘প্লেয়ার ড্রাফটের’ ফাঁকে লা মেরিডিয়ান হোটেলের পুলপাড়ে কথা হচ্ছিল আফতাবের সঙ্গে। লম্বা দাড়িতে মুখ ঢেকে গেলেও সারল্যমাখা হাসিটা এখনো অমলিন। গত কয়েক বছরে মনের সাগরে বহুবার ঝড় উঠে থেমে গেছে। কিন্তু আফতাবের সঙ্গে কথা বলে সেসব বোঝার উপায় নেই। চরম দুঃখের কথাটি বলেও ‘হা হা’ করে হাসেন।
চট্টগ্রামে বছর খানেক ধরে নিজের নামে ক্রিকেট একাডেমি চালাচ্ছেন। এবার প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের ব্যাটিং কোচেরও দায়িত্ব পেলেন। তা কোচ তিনি হতেই পারেন। ২০১০ সালের মাঝামাঝি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যাওয়া আফতাব ১৬টি টেস্ট খেলেছেন, ৮৫টি ওয়ানডে ও ১১টি টি-টোয়েন্টি। তবে সহজাত প্রতিভা নিয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকলেও পরিশ্রমে অরুচি ছিল সর্বজনবিদিত। কোচ আফতাবের আবির্ভাব তাই প্রশ্ন জাগায়, অন্য কোচদের মতো তিনিও কী করে খেলোয়াড়দের ‘ওয়ার্ক হার্ড’ বলেন!
প্রশ্নটা আফতাবকেই করা হলো। পাওয়া গেল দারুণ এক উত্তর—
‘প্রথম কথা বলব, যদি পরিশ্রম না করো, তাহলে আমার মতো খেলোয়াড় হবে। আর পরিশ্রম করলে আমার চেয়ে অনেক ভালো খেলোয়াড় হতে পারবে। যেটা আমি করিনি, আমার যে ভুল ছিল, সেটা আমি কোনো খেলোয়াড়ের মধ্যে দেখতে চাই না। অনেক ছাত্র আছে আজ আসে, কাল আসে না। পরশু আসে, তরশু আসে না। নো ওয়ে, পরিশ্রম করতেই হবে।’
ক্রিকেটার আফতাবের পরিণতি নিয়ে তাঁর দুঃখটাও বোধ হয় অনুমান করা গেল এ কথায়। পরে পরিষ্কারই বললেন, ‘আমি অবশ্যই ভুল করেছি। বাবা-মা বকা দিলে বাচ্চারা অনেক সময় বোঝে না। কেন বকা দেওয়া হলো, তা কেবল বাবা-মাই বোঝে। আমাকেও তখন অনেকে অনেক কথা বলত, আমি বুঝতে পারিনি। তখন আমিও বাচ্চাই ছিলাম মনে হয়। এখন বুঝতে পারছি, অনেক সিদ্ধান্তই ভুল ছিল।’
আফসোস বেশি হয় বাংলাদেশের খেলা দেখার সময়। সাব্বির আর সৌম্যের ব্যাটিং নেশা ধরিয়ে দেয় চোখেও। কেউ হয়তো ১৫ বলে ৩০ রানের ঝোড়ো ইনিংসে দল জিতিয়ে দিচ্ছে, ইগলের ক্ষিপ্রতায় লুফে নিচ্ছে ক্যাচ। এসব দেখলে আফতাবের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। দর্শকদের চিৎকারের ভেতর লুকিয়ে থাকা অদ্ভুত বাজনা প্রবলভাবে টানতে থাকে। আরেকটিবার যদি ওই বাইশ গজে গিয়ে দাঁড়ানো যেত! হাতে ব্যাট, মাথায় লাল-সবুজ স্কার্ফ...। আফতাব এই দৃশ্য এখন শুধু কল্পনাতেই দেখেন। বাস্তবতা যদিও পুরোই ভিন্ন। সেটার বর্ণনায় কাতর হয়ে ওঠে তাঁর কণ্ঠ, ‘ক্রিকেট ছাড়ার পর বুঝতে পারি, আমাদের দেশের মানুষ বর্তমান নিয়েই ভাবে বেশি। কেউ একটু পিছিয়ে গেলেই তাঁকে সবাই ভুলে যায়। আউট অব সাইট, আউট অব মাইন্ড।’
আফতাব কেন অসময়ে ‘আউট অব সাইট’ হয়ে গেলেন, সেটাও অবশ্য প্রশ্ন। ৩০ বছর বয়সেই খেলা ছেড়ে কোচ হয়ে যাওয়া আফতাব এই প্রশ্নে কিছুটা আবেগপ্রবণ, ‘বাংলাদেশে একটা কথা আছে, সেটা হচ্ছে গিয়ে “চলে না”। এ কথাটা আমি কখনো শুনতে চাইনি। শেষ দিকে আমি ও রকম অবস্থায় চলে আসছিলাম। খেলাটা উপভোগ করছিলাম না। মনে হয়েছিল, সম্মান নিয়ে সরে যাই।’ তবে ভুলের শুরুটা আইসিএলে যাওয়ার মাধ্যমেই হয়েছিল বলে মনে হয় তাঁর। বিসিবির নিষেধাজ্ঞার কারণে ফিরে আসার পরও এক বছর মাঠে নামতে পারেননি। আফতাবের ভাষায়, ‘বসে থেকে থেকে আমাদের শরীর হয়ে গিয়েছিল ইয়া বড়। ফেরাটা খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল।’
এক বছরে শরীরে জমা মেদ আর ব্যাটে ধরা মরচে ঝরাতে কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন ছিল। আরামপ্রিয় আফতাবের সেটা পছন্দ না হওয়ারই কথা। কিন্তু কোচের কাজও অনেক, অনেক পরিশ্রম। আফতাবের দৃষ্টিতে তো খেলোয়াড়দের চেয়ে কোচের পরিশ্রমই বেশি, ‘একজন ক্রিকেটার যখন মাঠে আসে, সে ব্যক্তিগত চিন্তা করে। ব্যাটিং শেষ, ওর কাজ শেষ। কিন্তু একজন কোচ, তিনি যদি একাডেমির হন তাকে ৭০-৮০ জনের দায়িত্ব নিতে হবে। দলের কোচ হলে অন্তত ১৫-২০ জনের দায়িত্ব। কোচিংটা পুরোপুরি ভিন্ন। অনেক পরিশ্রম। হা হা হা...।’
পরিশ্রমের কথা হাসতে হাসতে বলতে পারছেন আফতাব! পারছেন, কারণ কোচ-খেলোয়াড়ের পরিশ্রমে ভিন্নতা দেখেন তিনি, ‘পরিশ্রম দুই ধরনের। একটা শারীরিক, আরেকটা মানসিক। ক্রিকেট খেললে শারীরিক পরিশ্রম হতো। শারীরিক পরিশ্রম আমার পছন্দ না। কোচিংয়ে মানসিক পরিশ্রম বেশি। অনেক কাজ একসঙ্গে করতে হয়। চাপ থাকে বেশি। একটা মিনিটও বসতে পারবেন না।’ দ্বিতীয় ধরনের পরিশ্রমের সঙ্গে আফতাব এতটাই মানিয়ে নিতে পেরেছেন যে, একদিন একাডেমিতে না গেলেই কেমন কেমন লাগে। কীভাবে এটা পারছেন তা ভেবে অবাক হন আফতাবও, ‘নিজেও জানি না, এটা আমার মধ্যে কীভাবে এল।’
যেভাবেই আসুক, এসে তো গেছে! এখন কোচ হিসেবেও শীর্ষে যাওয়ার লক্ষ্য। সে জন্য অবশ্য আফতাবের নিজেকেও নিজে বলতে হবে, ‘ওয়ার্ক হার্ড’।
Logged
Md. Habibur Rahman
Officer, Finance & Accounts
Daffodil International University (DIU)
Corporate Office, Daffodil Family
Phone: +88 02 9138234-5 (Ext: 140)
Cell: 01847-140060, 01812-588460