« on: April 16, 2016, 12:23:56 PM »
মুস্তাফিজকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি: মাশরাফি বিন মুর্তজা
মুস্তাফিজকে ওয়ানডে অভিষেকের ক্যাপ পরিয়ে দিচ্ছেন মাশরাফি
মুস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম দেখেছিলাম নেট অনুশীলনে, গত এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওর আন্তর্জাতিক অভিষেক হওয়ার কিছুদিন আগে। তাকে হঠাৎ একাদশে নেওয়ার পেছনে বাংলাদেশ দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ভূমিকাই বেশি। কোচ আমাকে বললেন, ‘এই ছেলেটা কিছুটা ভিন্ন ধরনের। ওর স্লোয়ার ডেলিভারিটা খেলা বেশ কঠিন।’ দলের সিনিয়র ব্যাটসম্যানরাও তাতে একমত হলো।
কোচ হাথুরু যদি উদ্যোগ না নিতেন, আমার মনে হয় এখনো সে নেট বোলার হয়েই থাকত। কারণ, ওর তো তেমন ক্রিকেট ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না। একজন ক্রিকেটারকে জাতীয় দলে খেলার আগে ঘরোয়া, বয়সভিত্তিক কিংবা বিভিন্ন পর্যায়ে ভালো খেলে আসতে হয়। মুস্তাফিজের ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি। ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা বয়সভিত্তিক ক্রিকেট সে খেলেছে। তবে ততটা নয়। নেট বোলিং থেকে তার দ্রুত জাতীয় দলে আসার ঘটনা ব্যতিক্রমই বলতে হবে।
আন্তর্জাতিক অভিষেকেই মুস্তাফিজের হাতে শুরুতেই বল তুলে দেওয়ার প্রধান কারণ অবশ্যই তার ব্যতিক্রমী প্রতিভা। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগে ভেবেছিলাম, ওরা সবাই তো আমাদের বোলারকে চেনে। একজন অচেনা বোলারকে খেলতে হয়তো অসুবিধা হতে পারে।মুস্তাফিজুর রহমান
মুস্তাফিজের ওয়ানডে অভিষেকের কথা বলি। ভারত-সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে তার খেলারই কথা ছিল না। পেসার তাসকিন আহমেদ-রুবেল হোসেন বিশ্বকাপে দারুণ খেলে এসেছে। দুজনই একাদশে থাকবে। সঙ্গে আছি আমি। এমন পরিস্থিতিতে দলে আরেকজন পেসার নেওয়া কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ড্রেসিংরুমে তখন সাকিবের সঙ্গে আলোচনা করলাম, মুস্তাফিজের মতো বোলার বসিয়ে রাখা অপচয় হবে। সাকিব আমার সঙ্গে একমত হলো। কোচের সঙ্গে আলোচনা করলে তিনিও রাজি হলেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্রই পা রাখা নতুন একজন খেলোয়াড়কে অধিনায়কের নানাভাবে উজ্জীবিত করতে হয়, উত্সাহ দিতে হয়। কিন্তু মুস্তাফিজকে উজ্জীবিত করতে অধিনায়ক হিসেবে আমাকে তেমন কিছুই করতে হয়নি। সে নিজেই জানে, তার বিশেষ ডেলিভারি অর্থাৎ কাটার খেলা কতটা কঠিন।
নিঃসন্দেহে কাটারই মুস্তাফিজের বড় শক্তি। তার বোলিং নিয়ে প্রতিপক্ষ অনেক কাটাছেঁড়া করবে। মনে হয় না তাতে খুব একটা কাজ হবে। পেসার হিসেবে আমি নিজেও কাটারে সাফল্য পেয়েছি বহুবার। কিন্তু আমার কাটার ব্যাটসম্যানরা খেলছে, চার-ছক্কা মারছে। তবে ওর কাটার ভিন্ন ধরনের, ভয়ংকর! অনেক ব্যাটসম্যান ভাবে, মুস্তাফিজের বলে রান নেব না, তবু উইকেট দেব না। কিন্তু ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে রান করতে না পারলেই তো চাপে পড়ে যায় দল।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে সে অসাধারণ করেছে। ৯ ওয়ানডেতে ২৬ উইকেট ও ১৩ টি-টোয়েন্টিতে ২২ উইকেট সেটিই বলছে। অবশ্য তার টেস্ট অভিষেকও হয়েছে দুর্দান্ত। তবে নিজেকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে ভবিষ্যতে টেস্টে তাকে আরও উন্নতি করতে হবে।
বাংলাদেশে আর সবার মতো মুস্তাফিজকে নিয়ে আমিও বিরাট স্বপ্ন দেখি। আমার প্রত্যাশা, বাংলাদেশের হয়ে সে অন্তত ১০-১৫ বছর খেলবে। ওকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও ১০টি ছেলে উঠে আসবে। সেটি হলে কখনো বাংলাদেশের পেস বোলারের ঘাটতি হবে না।
মুস্তাফিজ বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন বোলার হবে, যার নামের পাশে থাকবে ৪০০-৫০০ উইকেট। সে যদি ফিট থাকে এবং ভুল পথে পরিচালিত না হয়, এটা মোটেও অসম্ভব নয়। মুস্তাফিজ এখন তরুণ, বয়স মাত্র ২০। সামনের দিনগুলোয় বুঝতে হবে কোন ক্রিকেট সে খেলবে আর কোনটি খেলবে না। বিশ্ব ক্রিকেটে এখন অনেক টুর্নামেন্ট। কাউন্টি, বিগ ব্যাশ, আইপিএল, সিপিএল—নানা টুর্নামেন্টে খেলার হাতছানি। আর দেশের বিপিএল তো আছেই। সবাই ওকে চাইবে। তবে তাকে বেছে বেছে খেলতে হবে। এখানে প্রচুর টাকাপয়সার ব্যাপার আছে। অবশ্যই সে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট খেলবে। তবে বেছে খেলার মানসিকতাও থাকতে হবে।
বাংলাদেশ দলের হয়ে ১০-১৫ বছর খেলতে চাইলে আপনাকে বেছে খেলতেই হবে। এত ক্রিকেট খেলে আসলে ফিট থাকা কঠিন। মুস্তাফিজ বাংলাদেশের হয়ে কদিন খেলেছে? এই সময়ে সে কিন্তু দুবার চোটে পড়েছে। তাকে তাই সতর্ক থাকতেই হবে। এমনকি ওর আশপাশে যারা থাকবে, ওকে ব্যবহারে তাদেরও সচেতন থাকতে হবে।
মুস্তাফিজের মতো ক্রিকেটারকে যদি বাংলাদেশ হারায়, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। আর সে যদি অনেক দিন বাংলাদেশ দলে খেলতে পারে, আমি বলব তার হাত ধরে এমন সাফল্য আসবে, যেটি অনেকের কল্পনাতেও নেই।
অনুলিখিত
লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক (ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি)
Logged
Md. Habibur Rahman
Officer, Finance & Accounts
Daffodil International University (DIU)
Corporate Office, Daffodil Family
Phone: +88 02 9138234-5 (Ext: 140)
Cell: 01847-140060, 01812-588460