ভারত ভ্রমণে শীর্ষে বাংলাদেশী পর্যটক
প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য দিন দিনই বাড়ছে। এছাড়া চিকিত্সার প্রয়োজনেও অনেক বাংলাদেশীর গন্তব্য এখন ভারত। পাশাপাশি লেখাপড়া ও বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ভারত যাচ্ছেন অনেকে। ভারত গমনের এ ধারাবাহিকতায় চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে টপকে ভারতে আসা পর্যটকের সংখ্যায় বাংলাদেশ উঠে এসেছে শীর্ষে। ভারতের অভিবাসন ব্যুরো প্রকাশিত নথিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নথিতে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) ভারতে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ লাখ ৮০ হাজার; যার মধ্যে ৯ লাখ ২০ হাজার বা ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশই গেছে বাংলাদেশ থেকে। দেশটি ভ্রমণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটকরা, শতাংশে যা ১৪ দশমিক ৫৫। আর যুক্তরাজ্য থেকে ভারতে গেছে মোট পর্যটকের ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
পর্যটন খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত সম্প্রতি ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করায় আগের তুলনায় অনেক বেশি বাংলাদেশী দেশটি ভ্রমণ করছে। চিকিত্সাসেবা, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেখাপড়াসহ ভ্রমণের সব ক্যাটাগরিতেই ভারতে বাংলাদেশীদের যাতায়াত বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে ‘ভিজিটিং ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি’ ক্যাটাগরিতে। বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার বাংলাদেশীকে ভারতীয় ভিসা দেয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) নবনির্বাচিত সভাপতি তাসকিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ভ্রমণকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এর মধ্যে প্রথমটিই হলো ব্যবসা-বাণিজ্য। কারণ ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে দেশটির সঙ্গে যোগাযোগের প্রায় সব মাধ্যমই ব্যবহার করা সম্ভব হয়। এতে পণ্য আমদানি-রফতানির খরচ ও সময় দুটোই বাঁচে ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ী ভ্রমণকারীর পরই রয়েছে মেডিকেল ট্যুরিজম। উন্নত চিকিত্সা ব্যবস্থার জন্য দেশটির চেন্নাই পরিণত হয়েছে মেডিকেল ট্যুরিজমের কেন্দ্র হিসেবে। তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অনেকেরই বন্ধু বা আত্মীয়স্বজন রয়েছে। তাদের সঙ্গে সাক্ষাত্সহ ভ্রমণের সব ক্যাটাগরিতেই ভারতে বাংলাদেশীদের যাতায়াত বাড়ছে।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত সম্প্রতি ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি গত সেপ্টেম্বরে বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহে তিনটি ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র উদ্বোধন করেছে। ভিসা আবেদনের জন্য ১০টি শ্রেণীতে প্রার্থীদের ভাগ করা হয়েছে। ভিসার জন্য কেবল পর্যটক ছাড়া অন্য শ্রেণীতে প্রার্থীরা সরাসরি আবেদন করতে পারছে। ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের (আইভিএসি) ঢাকার গুলশান, মতিঝিল, ধানমন্ডি ও খুলনা কেন্দ্রে পর্যটক ছাড়া অন্যসব শ্রেণীর ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাতের প্রয়োজন হচ্ছে না।
২০১৪ সালে ভারতে বিদেশী ভ্রমণকারীর সংখ্যা ছিল ৭৬ লাখ ৮০ হাজার। ওই বছর দেশটিতে বাংলাদেশী ভ্রমণকারীদের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়; যা মোট পর্যটকের ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ। সে সময় ১৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ ভ্রমণকারী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল প্রথম। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্যের ভ্রমণকারী ছিল ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ।
২০১৩ সালে ভারতে বিদেশী ভ্রমণকারীর সংখ্যা ছিল ৬৯ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র, ১১ দশমিক ৬২ যুক্তরাজ্য ও ৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিল। এছাড়া ২০১২ সালে ৬৫ লাখ ৮০ হাজার ভ্রমণকারীর মধ্যে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ও ২০১১ সালে ৬৩ লাখ ১০ হাজার ভ্রমণকারীর মধ্যে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশই ছিল বাংলাদেশী।
ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান ক্যারাভান বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান বলেন, ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি চিকিত্সার প্রয়োজনে প্রচুর বাংলাদেশী ভারত ভ্রমণ করছে। মূলত বাংলাদেশের চিকিত্সাসেবার ওপর আস্থা হারানোয় এ প্রবণতা বাড়ছে। চেন্নাইয়ে অনেক হাসপাতাল রয়েছে, যেগুলোয় বিদেশী রোগীর প্রায় অর্ধেকই যায় বাংলাদেশ থেকে। তাছাড়া ভিসা প্রক্রিয়া সহজ ও চিকিত্সা ব্যয় কম হওয়ায় অনেকেই ভারতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে পাঁচটি এয়ারলাইনস। আর ভাড়া তুলনামূলক কম হওয়ায় আকাশপথেও যাতায়াত অনেক বেড়েছে।
ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত নথিতে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটন খাত থেকে ৯ হাজার ৬১১ কোটি রুপি আয় করেছে দেশটি; যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে দেশটিতে সবচেয়ে কম পর্যটক গেছে পাকিস্তান থেকে; যা মোট পর্যটকের মাত্র ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ভারত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৬২ কোটি ১০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করে; যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে রফতানি করে ৬০০ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের পণ্য।
source:
http://www.bonikbarta.com/2015-12-02/news/details/57951.html