Bangladesh > Heritage/Culture

Birds of Bangladesh

(1/7) > >>

Lazminur Alam:
We will post here recognized, beautiful & rare birds of Bangladesh.

Lazminur Alam:
ডাকাত স্বভাবের পাখি। কাঠবিড়ালির বাসা ছিঁড়ে-খুঁড়ে ছানা বের করে খায়। অন্য শিকারি পাখিদের থোড়াই কেয়ার করে। দুঃসাহসী, তবে বাজ বা দস্যুবাজের মতো এরা জলাভূমিতে তেমন থাকে না, অন্য পাখিদের ধাওয়াও সহজে করে না। এই দুই ভাইয়ের আকার-গড়ন-ধরন-রং ইত্যাদির ভেতর এতটাই মিল যে মনে হয় যমজ ভাই, হাতে ধরেও বোঝা দুঃসাধ্য—এটি কি দারোগাবাজ নাকি তার ছোট ভাই (Indian Spotted Eagle)।
একনজরে কালচে-বাদামি পাখি। ডানার উপরিভাগে কালচে-বাদামি ছোট ছোট ছিট-ছোপ। ঋতুভেদে রং বদলায়। তখন হতে পারে ঘন চকলেট-বাদামি রং। পা হলুদাভ। পায়ের পাতা ঘোলাটে-হলুদ। নখর কালো। লেজের আগা সাদা। ঠোঁট অপেক্ষাকৃত ছোট। আমাদের আবাসিক এই পাখিটির ভেতর কেমন যেন একটা ‘বাউল বাউল’ ভাব আছে, বাউন্ডুলে স্বভাব এদের। শরীরের তলদেশ ও পায়ের পালক ফিকে-বাদামি, চোখ হলুদাভ-বাদামি বা গাঢ়, ঠোঁটের কিনারা হলুদ।
বিপদাপন্ন এই শিকারি পাখিটির চারণক্ষেত্র বন-বাগান-খোলা মাঠ-উঁচু ভূমি। বৈজ্ঞানিক নাম aquila pomarina. দৈর্ঘ্য ৬০-৬৫ সেন্টিমিটার। বাংলা নাম ছোট চিত্রা ইগল বা গুটি ইগল।
মূল খাদ্য এদের ছোট ও মাঝারি পাখি, গেছো ইঁদুর, ধেনো ইঁদুর, বেঁশো ইঁদুর, গিরগিটি, ব্যাঙ-হাঁস-মুরগির ছানা ও নির্বিষ ছোট সাপ, কাঁকড়া ইত্যাদি। পাখি শিকার করে এরা গেরিলা কৌশলে। বেছে নেয় দুর্বল, আহত বা আনাড়ি পাখিদের। কণ্ঠ তীক্ষ্ণ সুরেলা, মনে হয় আশপাশের সবাইকে ধমক দিচ্ছে।
বড় বড় গাছের মগডালে সরু ডালপালা-পাটকাঠি-কঞ্চি-বাঁশের চটা-নারকেলের ছোবড়া ইত্যাদি দিয়ে বড়সড় ডালার মতো বাসা বানায়। পুরুষটি উপকরণ আনে, মেয়েটি বাসা বানায় ও মনমতো সাজায়। ডিম পাড়ে ১টি। ক্বচিৎ ২-৩টি। মেয়েটি একাই তা দেয় ডিমে। পুরুষ থাকে পাহারায়। বউকে সে মাঝেমধ্যে পরম সোহাগে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়। ডিম ফোটে ৪২-৪৪ দিনে।

Lazminur Alam:
এরা এ দেশের দুর্লভ এক সুন্দর প্রজাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক ড. বাশার ওদের নাম দিয়েছেন ফটিক সিন্ধু (Common Bluebottle বা Blue Triangle)। পশ্চিমবঙ্গে এটি তুঁতচিল নামে পরিচিত। Papilionidae পরিবারভুক্ত প্রজাপতিটির বৈজ্ঞানিক নাম Graphium sarpendon।
প্রসারিত অবস্থায় ফটিক সিন্ধুর সামনের এক ডানার প্রান্ত থেকে অন্য ডানার প্রান্ত পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৮০-৯০ মিলিমিটার। ডানা ও দেহের ওপরটা কালো ও নিচটা বাদামি। সামনের ডানার শীর্ষ থেকে পেছনের ডানার ভেতরের প্রান্ত পর্যন্ত ওপর ও নিচে একটি ফ্যাকাশে সবুজ বা নীলচে-সবুজ থেকে গাঢ় নীল ডোরা চলে গেছে। পেছনের ডানার নিচের কিনারার দিকে এক সারি নীল ফোঁটা, অতিরিক্ত এক সারি লাল ফোঁটা ও ডানার গোড়ায় একটি লাল ফোঁটা রয়েছে। লম্বালম্বি সাদা ডোরাসহ দেহ ধূসর। শুঙ্গ (অ্যান্টেনা) ও চোখ কালো। শুঁড় ও পা ধূসর। পুরুষ ও স্ত্রী প্রজাপতি দেখতে একই রকম।
ফটিক সিন্ধু সচরাচর কম দেখা যায়। মূলত ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বন ও বনের কিনারা, উন্মুক্ত তৃণভূমি, ফুলের বাগানে বিচরণ করে। এরা বেশ চটপটে। দ্রুততার সঙ্গে গাছের ওপরের দিকে ওড়ে। বিভিন্ন ধরনের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের ফুলের রস পান করে।
স্ত্রী দেবদারু, কর্পূর, দারুচিনি, অ্যাভোকাডো প্রভৃতি গাছের কচি পাতার ওপর পাতাপ্রতি একটি করে হলদে ও গোলাকার ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে তিন দিনে। শূককীট প্রথম দিকে কালচে বা গাঢ় সবুজ হলেও পরে সবুজাভ হয়। ১২ দিনে পাঁচবার রূপান্তরিত হয়ে শূককীট সবুজ রঙের মূককীটে পরিণত হয়। ১০ দিন পর মূককীটের খোলস কেটে পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতি বের হয়ে নীল আকাশে ডানা মেলে।
বাংলাদেশ ছাড়াও পুরো ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও অস্ট্রেলিয়ায় এদের দেখা যায়।

Lazminur Alam:
শীত বিকেলে পাতাঝরা মাদারগাছটার সরু ডালপালায় বুক-পেট মিশিয়ে বসে আছে ৯-১০টি পাখি। রোদ পোহাচ্ছে পরম আয়েশে। ওর ভেতরে চারটি আছে সদ্য উড়তে শেখা ছানা।
দুরন্ত তিন বালক গুলতি হাতে এগিয়ে এল গাছটার তলায়, একজন খুব নিরিখ করে ছুড়ল গুলতি—একখানা ডালে গুরোল লেগে শব্দ হতেই ঝট করে উড়াল দিল সব কটি পাখি, একটু দূরে গিয়ে ঝাঁক বেঁধে চলে এল পশ্চিম দিকে।
এই পাখিদের নামও মটরঘুঘু। জাঁতায় যখন দ্রুতবেগে মসুর-মুগ বা মটর ডাল ভাঙা হয়, তখন যে রকম শব্দ হয় ‘মটর মটর’, এদের ডাকের শব্দটাও তেমনি। উঁচু গাছের ডালে বসে প্রজনন মৌসুমে পুরুষটি দ্রুততালে ডাকে, মাথা দোলায় নান্দনিক ভঙ্গিতে, বুক ফুলিয়ে আর ঘাড়-মাথা দুলিয়ে তালে তালে নাচে আর ডাকেও দ্রুততালে। ঠোঁট-পা ঠোকে গাছের ডালে, লম্ফঝম্ফ করে—মনের আনন্দে পতপত ডানায় উড়াল দিয়ে খাড়া উঠে পড়ে শূন্যের দিকে। স্ত্রী-পাখিটি চুপচাপ বসে তা উপভোগ করে।
বাসা করে জিকল, খুদিজাম, লোহাজাম, বাবলা, বরই, কলা, তাল ও খেজুরগাছের ডালে। শুকনো সরু ঘাস-লতা হলো বাসার প্রধান উপকরণ। তবে এদের বাসায় শরতে দুয়েক টুকরো কাশফুল ও গ্রীষ্মে দু-চারটা সাদা ঘাসফুল দেখা যাবেই। এরা সারা বছরই বাসা করে। দুজনে মিলে বাসার জায়গা নির্বাচনে ব্যয় করে দুই থেকে পাঁচ দিন। বাসা বানাতে সময় লাগে তিন থেকে ছয় দিন। তারপর স্ত্রী-পাখি ডিম পাড়ে দুটি, কখনো তিনটি। দুজনেই পালা করে তা দেয় ডিমে। ছানা ফোটে ১০-১৫ দিনে। প্রথম প্রথম ছানাদের কবুতরের দুধ (Pegion Milk) পান করায় এরা।
মটরঘুঘুর প্রধান খাবার নানা রকম শস্যবীজসহ ধান-তিল-কাউন-ডাল-সরষে ও ধুলোমাটি। ধুলোমাটি খায় শরীরের লবণের চাহিদা পূরণের জন্য। মটর ডাল এদের সবচেয়ে প্রিয়। শীতে এরা নাড়া ও ঘাসবনে নেমে ডানা ঝাপটে শিশির পান করে।
এদের ইংরেজি নাম Red Collared Dove। বৈজ্ঞানিক নাম Streptopelia tranquebarica। দৈর্ঘ্য ২৩ সেন্টিমিটার। ওজন ৯০ থেকে ১১০ গ্রাম। এদের পিঠের রং ইটগুঁড়ো করা সুরকির মতো লাল, তাতে হালকা গোলাপি আভা, ঘাড়-মাথা ঘন ছাই ও ধূসর। ঘাড়ে সাদা টানের ওপরে কালো বন্ধনী। চিবুক ও লেজের তলা সাদাটে। বুক হালকা গোলাপি। কালচে ঠোঁট। গোলাপি পা। মেয়েটি এক নজরে বাদামি রঙের পাখি। এদের দেখা মেলে সারা দেশেই। না দেখেও ডাক শুনে অনায়াসে শনাক্ত করা যায় পাখিটিকে। ঢোল ঘুঘু, ছোট ঘুঘু, পেঁচি ঘুঘু ও জংলাঘুঘু নামেও পরিচিত এরা।

Lazminur Alam:
ধূসর এই পাখি এ দেশের সাবেক আবাসিক পাখি পুটিয়াল ধনেশ (Common Grey Hornbill or Indian Grey Hornbill)। Bucerotidae গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Ocyceros birostris।
পুটিয়াল ধনেশ লম্বায় প্রায় ৬১ সেন্টিমিটার। পুরুষের ওজন প্রায় ৩৭৫ গ্রাম। একনজরে পুরো দেহ রুপালি-ধূসর। চোখের ওপরের পালক ফ্যাকাশে ও কান-ডাকনি কালচে। পেট হালকা ধূসর। লেজের আগা সাদা এবং তাতে কালো বন্ধনী। চোখের মণি বাদামি-লাল ও চোখের পাতায় লোম থাকে। পায়ের পাতা ও নখ কালো। পুরুষের ওপরের ঠোঁট গাঢ় ও নিচের ঠোঁট হলদে। স্ত্রীর হলুদ ঠোঁটের গোড়া কালো। ওপরের ঠোঁটের বর্ধিত অংশ বা বর্ম কালো, যা অন্যান্য ধনেশ প্রজাতির তুলনায় ছোট ও চোখা। পুরুষের বর্ম স্ত্রীর তুলনায় বড়। বাচ্চাদের বর্ম নেই।
রাজশাহী বিভাগের একসময়ের আবাসিক পাখি পুটিয়াল ধনেশ বর্তমানে এ দেশে আবাসিক না অনিয়মিত, তা জানতে গবেষণার প্রয়োজন। তবে আশার কথা, ওরা হারিয়ে যায়নি এ দেশ থেকে। এরা মূলত ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের আবাসিক পাখি। শুষ্ক বন, ফলের বাগান ও কুঞ্জবনে এরা বাস করে। শহরাঞ্চলের খোঁড়লযুক্ত পুরোনো গাছসমৃদ্ধ রাজপথেও এদের দেখা যায়। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ১ হাজার ৪০০ মিটার উচ্চতায়ও থাকতে পারে। এরা মূলত বৃক্ষচারী। পাকা ফল ও বাসার জন্য মাটি সংগ্রহ ছাড়া সহজে মাটিতে নামে না। মূলত ফলখেকো হলেও ফুলের পাপড়ি, কীটপতঙ্গ, গিরগিটি, ইঁদুর ইত্যাদিও খায়। চেঁচামেচি আর মারামারিতে ওস্তাদ।
এপ্রিল-জুন প্রজননকাল। ডিমের রং সাদা ও সংখ্যায় এক থেকে পাঁচটি। জন্মের ১৩ দিন পর বাচ্চারা উড়তে শেখে।

Navigation

[0] Message Index

[#] Next page

Go to full version