কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পর্যটন শিল্পের নতুন দুয়ার উন্মুক্ত করছে। সাগর আর সড়কের অপরূপ মেলবন্ধন, পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার জলরাশি, ইনানীর পাথুরে বিচ, পাটোয়ার টেকের পাথরের স্তূপ ও সড়কের পাশ দিয়ে বেড়ে ওঠা বিস্তৃর্ণ উপকূল জুড়ে ঝাউবাগান দেশি-বিদেশি পর্যটকদের বিমোহিত করছে। পর্যটকদের আকর্ষণের নতুন কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি। এটির কল্যাণে সাগরের এবং স্থলের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য একই সাথে উপভোগের সুযোগ এসেছে পর্যটকদের কাছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সড়কের উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এটির তৃতীয় ধাপের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে জোর চেষ্টা চলছে।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে তত্কালীন সরকারের সময়ে ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কটি নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প গৃহিত হয়। তখন প্রকল্পের প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৩ কোটি ২১ লক্ষ টাকা। এ সময় সড়ক ও জনপদ বিভাগ কক্সবাজার কলাতলী পয়েন্ট থেকে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করে। সওজ বিভাগের ঠিকাদার কর্তৃক নির্মিত কলাতলী মোড় থেকে পাইওনিয়ার হ্যাচারী পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক সাগরের প্রবল ঢেউয়ের ধাক্কা সামলাতে না পেরে সাগরে বিলীন হয়ে যায়।
পরবর্তীতে মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় সেনাবাহিনীর প্রকৌশল নির্মাণ ব্যাটালিয়নকে। বর্তমানে সড়কটি ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য থেকে বেড়ে ৮০ কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে নব উদ্যোমে কাজ শুরু করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। কাজের গুণগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের সদস্যরা মূল সড়ককে তিন ধাপে ভাগ করে প্রথম ধাপে কলাতলী থেকে ইনানী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপে ইনানী থেকে শিলখালী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার ও তৃতীয় ধাপে শীলখালী থেকে টেকনাফের সাবরাং পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
সওজ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৪৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দে নির্মাণাধীন মেরিন ড্রাইভ সড়কের দুইপার্শ্বে থাকবে ওয়াক ওয়ে, পর্যটকদের সুবিধার্থে থাকবে সড়ক জুড়ে ফ্রেক্সিবল পেভম্যান, শেড, গাড়ি পার্কিং ও মহিলা পর্যটকদের চেঞ্জিং রুম। ৮০ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে তিনটি বড় আরসিসি সেতু, ৪২টি কালভার্ট, ৩ হাজার মিটার সসার ড্রেন ও ৫০ হাজার মিটার সিসি ব্লক ও জিও ট্যাক্সটাইল থাকবে। কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া জানান, মূল প্রকল্পের কাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে। আগামী ২ মে প্রধানমন্ত্রী মেরিন ড্রাইভ সড়কের উদ্বোধন করতে পারেন।