বিদেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে বাণিজ্যিক ব্যাংক
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেছেন, ‘বিদেশে বিনিয়োগের বিষয় আসলে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেকে দূরে রাখে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রকল্প পরিদর্শন করে মন্তব্য করেন—অর্থ পাচার হয়ে যেতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন কেস টু কেস ভিত্তিতে বিনিয়োগের অনুমতি দিচ্ছে। যাঁরা সুন্দর পোশাক পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভাইয়া ও তাঁদের স্ত্রী–কন্যাদের ভাবি ও ভাতিজি বলে সম্বোধন করছেন, তাঁরাই অনুমোদন পাচ্ছেন। বাকিরা অনুমতি পাচ্ছেন না।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে মসিউর রহমান বলেন, বিদেশে বিনিয়োগের বিষয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের দায়িত্বে ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন। তারাই সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এর অনুমোদন নেবে। ফলে বেছে বেছে অনুমোদন দেওয়ার প্রবণতা কমবে।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগসংক্রান্ত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক ইনে আইবিএফবির সভাপতি হাফিজুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সব বক্তা বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দাবি করেন।
মসিউর রহমান বলেন, দেশে এখন সঞ্চয় হচ্ছে অনেক। এটিই এখন সরকারের প্রধান দুশ্চিন্তার কারণ।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘আমাকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আগের মেয়াদের সময় উগান্ডায় জমি খুঁজতে বলেছিলেন। আমি জমি খুঁজে পেয়েছিলাম, কিন্তু বিনিয়োগের অনুমতি পাইনি। তিন বছর বাংলাদেশ ব্যাংকে দৌড়ঝাঁপ করে শেষ পর্যন্ত আশা ছেড়ে দিয়েছি। এভাবে আমাদের ছোট অর্থনীতির মধ্যে আটকে রাখলে দেশেরই ক্ষতি হবে।’
মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘দেশে এখন বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ ৩২ বিলিয়ন ডলার। এই রিজার্ভ নিয়ে বসে থাকলে অন্যায় করা হবে। আমরা যাঁরা উদ্যোক্তা, তাঁদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে কত দিনের মধ্যে এ অনুমোদন মিলবে, কী পরিমাণ মুনাফা দেশে আনতে হবে, তা বলা হয়নি।
এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিস উদ দৌলা বলেন, যাঁরা ইতিমধ্যে বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। তাঁদের ক্ষমা করে সহজেই বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের যে আইন আছে, তা অনেক পুরোনো। এটাকে আধুনিক করে যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, এ কারণে রেমিট্যান্স কমছে। যেসব প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করছে, সরকার তাদের দেশের বাইরে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে পারে।
আবদুল মোনেম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন মোনেম বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আমাদের সুবিধামতো বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হোক। আমরাই মুনাফা করে রেমিট্যান্স নিয়ে আসব।’
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এ নিয়ে ভিন্নমত দিয়েছেন। যোগাযোগ করলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের এমন দাবির সঙ্গে আমি একমত না। বাংলাদেশ তো এখনো বিদেশি বিনিয়োগ খুঁজছে। তাহলে নিজের দেশ থাকতে কেন বিদেশে বিনিয়োগ করতে দেওয়া হবে। ছোট আকারে যেসব অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। এটা বেছে বেছে চলতে পারে। তবে বড় কোনো বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া ঠিক হবে না।’
source:http://www.prothom-alo.com/economy/article/1022885/বিদেশে-বিনিয়োগের-সিদ্ধান্ত-নেবে-বাণিজ্যিক-ব্যাংক