হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) সেরা রপ্তানিকারক পুরস্কার পেয়েছে ডিবিএল গ্রুপ, হা-মীম ডেনিম, এপিক গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ও ট্রেডেক্সেল গ্রাফিকস এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান।
শনিবার রাতে রাজধানীর রেডিসন হোটেলে এক অনুষ্ঠানে ‘এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ শীর্ষক এ পুরস্কার
দেয়া হয়।
রপ্তানি আয়ের পরিমাণ, রপ্তানিকৃত দেশের সংখ্যা, প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা, সুষ্ঠু ব্যবসায়িক পরিচালন নীতি এবং আরও কিছু গুণগত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিচারকেরা বিজয়ী প্রতিষ্ঠান বাছাই করেছেন বলে জানিয়েছে এইচএসবিসি।
২০১০ সাল থেকে এইচএসবিসি এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। এবার ছিল ষষ্ঠতম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
শুরুতে প্রয়াত শিল্প উদ্যোক্তা স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মেজর জেনারেল (অবঃ) আমজাদ খান চৌধুরীকে স্মরণ করা হয়।
তৈরি পোশাকশিল্প ও টেক্সটাইলস (গ্রুপ এ: রপ্তানি আয় ৫ কোটি ডলারের বেশি) শ্রেণিতে বিজয়ী ডিবিএল গ্রুপ ৪৭টি দেশে পণ্য রপ্তানি করছে। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটি এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো এইচএসবিসি পুরস্কার পেল। ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রহিম পুরস্কার গ্রহণ করেন।
তৈরি পোশাকশিল্প ও টেক্সটাইলস (গ্রুপ বি: রপ্তানি আয় ৫ কোটি ডলারের কম) শ্রেণিতে বিজয়ী হা-মীম ডেনিম ২০০৭ সালে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এটি দেশের সবচেয়ে বড় ডেনিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বলে জানায় এইচএসবিসি। এ প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ পুরস্কার গ্রহণ করেন।
রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) শ্রেণিতে বিজয়ী এপিক গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি হংকংয়ে প্রতিষ্ঠিত। এটি বাংলাদেশে প্রায় ৩০ বছর ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটি বিশেষ ধরনের (নো-আয়রন, নন-ওয়াশ) বটমস তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বিক্রি করে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াকার কাজী পুরস্কার নেন।
সনাতন ও উদীয়মান শ্রেণিতে বিজয়ী স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। এটি স্থানীয় বাজারে ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি এশিয়া ও আফ্রিকার ৩৯টি দেশে রপ্তানি করছে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী পুরস্কার গ্রহণ করেন।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে বিজয়ী প্রতিষ্ঠান ট্রেডেক্সেল গ্রাফিকস ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। এটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোকে গ্রাফিকস সেবা প্রদান করে। কোম্পানিটির রপ্তানি আয় গত তিন বছরে ৮৮ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান রেজওয়ান রহমান পুরস্কার গ্রহণ করেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘২০২১ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার কোটি ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। আমার আত্মবিশ্বাস, রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে অনেক বেশি হবে।’
বিজয়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অভিনন্দন জানিয়ে এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ফ্রাঁন্সওয়া দ্য ম্যারিকো বলেন, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ রপ্তানি খাত একটি দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। রপ্তানি খাতে উৎকর্ষ প্রদর্শন করে যাঁরা দেশের পণ্য ও সেবাকে বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দিয়েছে, তাদের সম্মানিত করতে পেরে এইচএসবিসি গর্বিত।
এইচএসবিসি ব্যাংকের গ্লোবাল হেড অব ট্রেড ও রিসিভেবলস ফিন্যান্স নাতালি ব্লিথ বলেন, ‘দেশকে বিশ্বদরবারে নিয়ে যাওয়া যাদের প্রত্যয়, সেই সব দূরদর্শী রপ্তানিকারককে স্বীকৃতি প্রদানই আমাদের লক্ষ্য।’
এইচএসবিসি বাংলাদেশের উপপ্রধান নির্বাহী এবং করপোরেট ব্যাংকিং প্রধান মাহবুবউর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দেশের রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৩০ কোটি ডলার। এখন সেই রপ্তানি আয় ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। আবার মোট রপ্তানি আয়ের ২৭ শতাংশই যাচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে।’ অর্থমন্ত্রীর মতো তিনিও ২০২১ সালের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে মন্তব্য করেন।