অর্থনৈতিক বিভিন্ন খাতের ইতিবাচক অগ্রগতি ও শেয়ারবাজার চাঙ্গা হওয়ার মধ্য দিয়ে এশিয়ায় ভোক্তা আস্থা সূচকে সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের প্রথম ভাগের চেয়ে দ্বিতীয় ভাগে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট অর্জন করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান মাস্টার কার্ড।
একটি দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান সম্ভাবনা, নিয়মিত আয়ের সম্ভাবনা, শেয়ারবাজার ও জীবনযাত্রার মান ইত্যাদি বিষয়ে ভোক্তাদের প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে মাস্টার কার্ড তৈরি করেছে ষাণ্মাসিক এ ভোক্তা আস্থা সূচক। এতে এশিয়ার ১৭ দেশের মধ্যে ৯৫.৩ পয়েন্ট নিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত। তবে ৮২.৮ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ তালিকায় পঞ্চম স্থানে অবস্থান করলেও ২০১৬ সালের প্রথম ভাগের চেয়ে দ্বিতীয় ভাগে বাংলাদেশের ভোক্তা আস্থা সূচক বেড়েছে ১১.২ পয়েন্ট, যা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় উন্নতি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মুহূর্তে এশিয়ায় সবচেয়ে আশাবাদী পাঁচটি দেশ হচ্ছে ভারত, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশ। তবে চমকপ্রদ অগ্রগতি বাংলাদেশের। যেখানে আগের জরিপে বাংলাদেশের ভোক্তা সূচক বেড়েছিল ৪.২ পয়েন্ট, সেখানে এবার তা বেড়েছে ১১.২ পয়েন্ট। বেশ কিছু খাতের অবদানের মধ্য দিয়েই এ সাফল্য অর্জন করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন এসেছে শেয়ারবাজার থেকে। শেয়ারবাজারে বাংলাদেশের ভোক্তা আস্থা সূচক বেড়েছে ২৪.৬ পয়েন্ট। এর পাশাপাশি পূর্বাভাস সম্ভাবনায় বাংলাদেশ পেয়েছে ১০ পয়েন্ট, জীবনধারায় অগ্রগতি ১২ পয়েন্ট এবং অর্থনীতিতে ১১.৭ পয়েন্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্বিক হিসাবে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আস্থা সূচক স্থিতিশীল রয়েছে। বিশেষ করে ১৭টি দেশের মধ্যে ৯ দেশের আস্থা সূচকই স্থিতিশীল রয়েছে আর আটটিতে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৬ সালের প্রথম ভাগের চেয়ে দ্বিতীয় ভাগে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সার্বিক স্কোর বেড়েছে ১.২ পয়েন্ট। এশিয়া অঞ্চল আশাবাদী ৬০ পয়েন্টের ওপরে অবস্থান করছে। সবচেয়ে বড় আশাবাদ হ্রাস পেয়েছে তাইওয়ানে, মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারের। জরিপ অনুযায়ী এই হ্রাসের অন্যতম কারণ শেয়ারবাজারে দর পতন।
এ জরিপটি করা হয় মূলত এশিয়া প্যাসিফিকের ১৭টি বাজারের ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সী ভোক্তাদের জবাব থেকে। আট হাজার ৭২৩ জন ভোক্তাকে পাঁচটি অর্থনৈতিক ফ্যাক্টর যথাক্রমে—অর্থনীতি, কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা, নিয়মিত আয়ের সম্ভাবনা, স্টক মার্কেট ও তাঁদের জীবনধারা নিয়ে ছয় মাসের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে বলা হয়েছিল। এই সূচক হিসাব করা হয়েছে শূন্য থেকে ১০০ পর্যন্ত। শূন্য সবচেয়ে বেশি হতাশাপূর্ণ, ১০০ সবচেয়ে বেশি আশাবাদী এবং ৪০ থেকে ৬০ নিরপেক্ষ।
এ তালিকায় সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা পাঁচটি দেশ হচ্ছে সিঙ্গাপুর ৩০.০ পয়েন্ট, মালয়েশিয়া ৩১.২ পয়েন্ট, দক্ষিণ কোরিয়া ৩১.২ পয়েন্ট, তাইওয়ান ৩৪.২ পয়েন্ট এবং শ্রীলঙ্কা ৪০.১ পয়েন্ট।
মাস্টার কার্ড ইনডেক্স অব কনজ্যুমার কনফিডেন্স জরিপটি ২০ বছর ধরে বিভিন্ন সময় এশিয়া প্যাসিফিকের বিভিন্ন অঞ্চলে করা হয়। জরিপটি ১৯৯৩ সালের প্রথমার্ধে শুরু হয় এবং বছরে দুইবার করা হয়ে থাকে। এশিয়া প্যাসিফিকের ১৭টি মার্কেটে এই জরিপটি করা হয়। এগুলো হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, চীন, হংকং, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।
Source: মাস্টার কার্ডের জরিপ