স্টেইনলেস ষ্টীল
লোহার সাথে সামান্য কার্বন মিশিয়ে তৈরি করা হয় ষ্টীল। লোহার চেয়ে ষ্টীলের কিছু সুবিধা পাওয়া যায় যেমন- কঠোরোতা, নমনীয়তা এবং প্রসারণ ক্ষমতা ইত্যাদি। কিন্তু এর বেশিরভাগই যেহেতু লোহা তাই এতে মরিচাও ধরতে পারে। ষ্টীলের তৈরি জিনিস ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গুঁড়ায় পরিণত হয়।
ধাতুবিদ্যা বিশারদগণ ষ্টীলে মরিচা পড়া রোধ করার জন্য অন্য উপাদান যোগ করেন এবং তারা কিছুটা সফলতা ও অর্জন করেন। কিন্তু ১৯১২ সালের পূর্বে মরিচারোধী ষ্টীল তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ব্রিটেনের শিলফিল্ডের ধাতুবিদ্যা বিশারিদ হ্যারি ব্রেয়ারলি ভালো একটি বন্দুক তৈরির চেষ্টা করছিলেন।
বেশীরভাগ বন্দুকের ব্যারেলই প্যাঁচানো বা খাঁজকাটা হয় বুলেটের ঘূর্ণন বৃদ্ধি করার জন্য। কিন্তু ব্যারেল ও বুলেটের ঘর্ষণ বৃদ্ধি করার জন্য ব্যারেলকে অনেক বড় করে তৈরি করা হয়। ব্রেয়ারলি ক্ষয় প্রতিরোধের জন্য ষ্টীল তৈরি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি বারবার ব্যর্থ হতে থাকেন। কয়েকমাসের চেষ্টা এবং ব্যর্থতার পরে ব্রেয়ারলি লক্ষ্য করেন যে, একটি ষ্টীল দ্যুতি ছড়াচ্ছিল কিন্তু অন্যগুলোতে মরিচা ধরেছিল।
ওই স্যাম্পলটিতে ১২% ক্রোমিয়াম ছিল যা বাতাসের অক্সিজেনের সাথে প্রতিক্রিয়ায় পাতলা প্রতিরক্ষামূলক ঝিল্লি তৈরি করে। এর মধ্যে দাগ পড়লেও তা পুনরায় ঠিক হয়ে যায়। ব্রেয়ারলি তার এই উদ্ভাবনকে ‘মরিচাহীন ষ্টীল’ নাম দেন।
১৬শ শতকে ব্রেয়ারলির নিজ শহর শিলফিল্ড কাটলারি উৎপাদনের শহর হিসেবে পরিচিতি পায়। ব্রেয়ারলি এর সহপাঠি মোজলে পোর্টল্যান্ড ওয়ার্কস এর ম্যানেজার তার উদ্ভাবিত ষ্টীলটি ভিনেগারের দ্রবণে ডুবিয়ে রেখে পরীক্ষা করেন এবং একে স্টেইনলেস ষ্টীল হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
প্লাস্টিক
প্লাস্টিকের পণ্য আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে। হালকা ওজনের চশমা অথবা দাগহীন লেন্স এমন হাজারো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি হয় প্লাস্টিক দিয়ে।
বেলজিয়ামে জন্মগ্রহণকারী রসায়নবিদ লিয়ো বায়েকল্যান্ড ১৯০৭ সালে প্রথম প্লাস্টিক তৈরি করেন। তার লক্ষ্য ছিল লাক্ষার প্রতিস্থাপক তৈরি, যা দক্ষিণ এশিয়ার স্কেল বাগ নিঃসৃত রেজিন। তিনি ফরমালডিহাইড ও ফেনল এর সমন্বয়ে নভোলাক তৈরি করেন। এটি কয়লার আলকাতরা থেকে নিষ্কাশিত একধরণের এসিড যা লাক্ষার প্রতিস্থাপক হতে পারেনি। কিন্তু তিনি লক্ষ্য করেন যে, দুটি যৌগের উপর নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা এবং চাপের ফলে অপরিবাহী এবং তাপ প্রতিরোধী যৌগ তৈরি হয়। তিনি এর সাথে উড ফ্লাওয়ার, অ্যাবেস্টস বা স্লেট ডাস্ট যোগ করেন।
পরবর্তী দশকে তিনি ইলেকট্রনিক উপাদান, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রাংশ, ক্যামেরা, টেলিফোন বাটন, ঘড়ি, খেলনা ইত্যাদি দশ হাজারের মত পণ্য তৈরি করেন।
২০ শতকে বাকেলাইট এবং তার বংশধরেরা প্লেক্সিগ্লাস, পলিয়েস্টার, ভিনাইল, নাইলন, পলিকারবোনেট তৈরি করেন। এর ফলে সারা বিশ্বেই কৃত্রিম প্লাস্টিকের পণ্য দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি হচ্ছে।