ঘুমন্ত অবস্থায় মস্তিষ্ক থেকে কিছু স্মৃতি হারিয়ে যায়। ফলে পরবর্তী সময়ে নতুন স্মৃতি রাখার জায়গা তৈরি হয়। হয়তো এটাই ঘুমের একটা কারণ। নতুন দুটি গবেষণার ভিত্তিতে সায়েন্স সাময়িকী এ তথ্য দিয়েছে।
প্রতিদিনের তিন ভাগের এক ভাগ সময় মানুষকে কী কারণে ঘুমাতে হয়, সেটা জানতে বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করছেন। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, ঘুমের সময় মস্তিষ্ক থেকে অনেক তথ্য হারিয়ে যায়। নতুন গবেষণায় সে সম্পর্কে কিছু সমর্থন মিলেছে। একজন গবেষক বলেন, ঘুমের ওষুধ সেবন করে একধরনের ঝিমুনি পাওয়া গেলেও সেটা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্রাহাম ডায়ারিং এ রকম একটি গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ঘুমানোর ফলে মানুষের চিন্তাভাবনা স্পষ্ট হয়। মোদ্দাকথা, ঘুমের সময় মস্তিষ্ক কোনোভাবেই নিষ্ক্রিয় থাকে না, বরং এ সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে নেয়। উন্নত বিশ্বে লোকজন ঘুমের সময় কমিয়ে ফেলায় সেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটছে।
মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোর মাঝখানে বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষিত থাকে বলে অনেকে ধারণা করেন। ডায়ারিং বলেন, মানবমস্তিষ্ক অনেক বেশি তথ্য জমিয়ে রাখতে পারে। পরে সেগুলোর ক্রমবিন্যাস করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে সেই ক্রমবিন্যাসের অভাবে স্মৃতিগুলো হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
দ্বিতীয় গবেষণাটি উইসকনসিন সেন্টার ফর স্লিপ অ্যান্ড কনশাসনেসের একদল বিজ্ঞানী পরিচালনা করেন। তাঁরা ইঁদুরের মস্তিষ্কের মধ্যবর্তী স্নায়ুকোষগুলোর কার্যক্রম ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, জাগ্রত অবস্থায় কোষগুলো শক্তিশালী ও প্রসারিত অবস্থায় থাকে। আর ইঁদুরের ঘুমন্ত অবস্থায় সেগুলোই আবার প্রায় ২০ শতাংশ সংকুচিত হয়ে পড়ে। সম্ভবত তখনই পরের দিন নতুন স্মৃতির স্থান সংকুলানের প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হয়। গবেষক দলটির সদস্য শিয়ারা সিরেলি বলেন, জাগ্রত অবস্থায় মস্তিষ্কের কোষগুলোর আকার ও শক্তির ভারসাম্য বিপর্যস্ত হয় এবং ঘুমন্ত অবস্থায় পুনরুদ্ধার হয়।