যখন–তখন ব্যথানাশক নয়

Author Topic: যখন–তখন ব্যথানাশক নয়  (Read 1013 times)

Offline Lazminur Alam

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 337
  • Test
    • View Profile
যখন–তখন ব্যথানাশক নয়
« on: February 10, 2017, 11:40:11 AM »
মাথা ধরেছে? দুটো প্যারাসিটামল খেয়ে ঘুম দিলেই সেরে যাবে। হাঁটু ব্যথা করছে? একটা ব্যথানাশক বড়ি খেয়ে নিলেই হলো। নানা সময়ে, নানা কারণে আমরা এভাবে বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক খেয়ে ফেলি। আমাদের দেশে এ ধরনের ব্যথার বড়ি কিনতে ও খেতে চিকিৎসকের কোনো ব্যবস্থাপত্রও দরকার হয় না। ইচ্ছে হলেই কিনে খাওয়া যায়। কিন্তু আসলে কি এভাবে যেকোনো কারণে ব্যথার বড়ি খাওয়া উচিত?

প্রচলিত ব্যথার ওষুধ আসলে মূলত চার ধরনের—এসিটামিনোফ্যান বা প্যারাসিটামল, নন–স্টেরয়ডাল অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি ওষুধ, স্টেরয়েড এবং ওপিয়ড জাতীয় ওষুধ। এর মধ্যে প্যারাসিটামল ও আইবুপ্রোফেন, ন্যাপরোক্সেন জাতীয় নন–স্টেরয়ডাল অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি সারা বিশ্বেই ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ হিসেবে স্বীকৃত, অর্থাৎ ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই কেনা যায়। তবে অন্যান্য ওষুধ কিনতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র লাগে। কিন্তু আমাদের দেশে অন্য ওষুধগুলোও কেনা যায়। তবে ওপিয়ড, যেমন মরফিন, প্যাথিডিন ইত্যাদির ব্যাপারে কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। এখন আসুন, জেনে নিই, সাধারণ ব্যথানাশকে কোনো ঝুঁকি আছে কি না।

এক. এসিটামিনোফেন বা প্যারাসিটামলের খুব বেশি ঝুঁকি না থাকলেও যাদের যকৃতের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আমাদের দেশে অনেকেরই ক্রনিক লিভার ডিজিজ, হেপাটাইটিস বি ও সি সংক্রমণ এখনো লুক্কায়িত অবস্থায় আছে। না জেনে তাদের বেশি প্যারাসিটামল খাওয়া বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। যাঁরা অ্যালকোহল পান করেন, তাঁদের জন্যও এটি ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকে জ্বর হলে একই সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা পর পর সাপোজিটরি, মুখে খাবার বড়ি ইত্যাদি বারবার ব্যবহার করেন। তাই মাত্রা যাতে না ছাড়িয়ে যায়, সেদিকে লক্ষ রাখুন।

এসিটামিনোফেন বা প্যারাসিটামলের খুব বেশি ঝুঁকি না থাকলেও যাদের যকৃতের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে
দুই. নন–স্টেরয়েডাল অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি দুনিয়াজুড়ে বাত, ব্যথা, প্রদাহজনিত ব্যথায় এবং কাটা–ছেঁড়া শল্যচিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। প্রয়োজনে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এ ধরনের ওষুধ রোগ সারাতে ও তীব্রতা কমাতে কার্যকর। কিন্তু কিডনি অকার্যকারিতা, হাঁপানি রোগী ও পেপটিক আলসারের রোগীর জন্য কখনো এরা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কারও অ্যালার্জিও হতে পারে। সম্প্রতি হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকেরা বলছেন, অ্যাসপিরিন, নন–স্টেরয়ডাল অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি এমনকি প্যারাসিটামল নিয়মিত সেবনকারীর শ্রবণ ঘাটতি হতে পারে। গর্ভাবস্থার প্রথম ২০ সপ্তাহের মধ্যে নন–স্টেরয়েডাল অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি আছে। যাঁদের গ্যাস্ট্রাইটিস বা আলসার আছে, এবং যাঁরা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, তাঁদের পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায় এগুলো।

তিন. ব্যথা কমানোর আরেকটি ওষুধ হলো স্টেরয়েড। চিকিৎসাবিজ্ঞানে নানা পরিস্থিতিতে এই স্টেরয়েড ব্যবহারের নির্দেশনা আছে। কিন্তু না জেনে–বুঝে স্টেরয়েড ওষুধ দিনের পর দিন খাওয়া, স্টেরয়েড–সংবলিত টোটকা ওষুধ খেতে থাকা নানা ধরনের শারীরিক বৈকল্য করে; যা জীবনসংহারীও হতে পারে। তাই চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া স্টেরয়েড সেবন করা উচিত নয়।

চার. মোদ্দা কথা হলো, ব্যথার ওষুধ আমাদের জীবনে প্রায় প্রায়ই খেতে হয়। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলাই ভালো। সম্ভব হলে অবশ্যই ব্যথানাশক খাবার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ঠিক কী মাত্রায় কত দিন খাবেন, ভালো করে বুঝে নিন। আপনি অন্য কোনো ওষুধ খাচ্ছেন কি না, তা কী; অন্য কোনো রোগবালাই আছে কি না, অন্তঃসত্ত্বা কি না বা সন্তান ধারণের চেষ্টা করছেন কি না, এগুলো চিকিৎসককে অবহিত করুন। কোনো ওষুধে এর আগে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল কি না, তা–ও জানান। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ব্যথার ওষুধ খেয়ে ব্যথা কমিয়ে আমরা অনেক সময় আসল রোগকে দাবিয়ে ফেলি। ফলে রোগ ধরা পড়তে সময় নেয়। তাই ওষুধ খেয়ে ব্যথা দাবিয়ে না রেখে প্রয়োজনে পরীক্ষা–নিরীক্ষার মাধ্যমে কারণ নির্ণয় করুন। ব্যথার চিকিৎসার চেয়ে কারণটির চিকিৎসাই জরুরি।

অধ্যাপক খাজা নাজিমুদ্দিন

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
MD.LAZMINUR ALAM
|| BA (Hons) in English || || MBA in Marketing ||

Senior Student Counselor
Daffodil International University
Cell: 01713493051
E-mail: lazminur@daffodilvarsity.edu.bd
            lazminurat@yahoo.com
Web: www.daffodilvarsity.edu.bd