গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া
ব্যবসায় খরচ বাড়বে, বাড়বে পণ্যের দাম
গৃহস্থালি ও শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ব্যবসায় খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বাড়বে। রপ্তানিসহ সব দেশীয় শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে উৎপাদনকারী ও ভোক্তাস্বার্থ রক্ষা করা হয়নি।
গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) এই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য দাবি জানিয়েছে উভয় সংগঠন। গত বৃহস্পতিবার বাসাবাড়ি ও কলকারখানায় সরবরাহ করা গ্যাসের দাম দুই দফায় বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়।
ডিসিসিআই মনে করে, বর্তমানে গৃহস্থালি ও শিল্প খাতে চাহিদামাফিক গ্যাসসংযোগ প্রদান করা যাচ্ছে না। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পণ্য উৎপাদন, রপ্তানি এবং পণ্য পরিবহনসহ সব ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে খরচ বাড়বে। এতে খুচরা বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে; মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং সাধারণ জনগণ ভোগান্তিতে পড়বে। তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।
ডিসিসিআই আরও বলেছে, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে। তাই ভবিষ্যতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়লে দেশের কৃষি খাত, বিশেষ করে ধান উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ইএবি বলেছে, মাছ, হিমায়িত খাদ্যপণ্য, প্লাস্টিক, চামড়া ও তৈরি পোশাকের মতো রপ্তানি খাতের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এসব রপ্তানি খাতের সক্ষমতাও কমে যাবে। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে যখন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সক্ষমতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি একটি বড় বাধা হবে।
ইএবি আরও বলেছে, ইউরো অঞ্চলে ইউরোর দরপতন বা অস্বাভাবিক অবমূল্যায়ন, ব্রেক্সিটের প্রভাব ছাড়াও বিদেশি ক্রেতাদের ক্রমাগত কম দরে পণ্য কেনার ফলে বাংলাদেশ অসম অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতায় পড়েছে। এ ছাড়া রানা প্লাজা ধসের পর কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ নিশ্চিত করতে গিয়ে সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে একরকম দিশেহারা। এ অবস্থায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি রপ্তানি খাতের ওপর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
ইএবির মতে, রপ্তানিমুখী সব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন প্রক্রিয়ার অন্যতম দুটি প্রধান উপাদানের একটি হলো গ্যাস। গ্যাসের দাম বাড়লে সার্বিক উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন আরও কষ্টসাধ্য হবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ এবং সক্ষমতা হারাতে থাকবে।
ইএবি আরও বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দর কমে যাওয়ায় প্রতিযোগী দেশ যেমন: ভারত, চীন, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া একাধিকবার জ্বালানি পণ্যের দর সমন্বয় করেছে। ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক ডলারের বিপরীতে নিজেদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে। গত চার বছরে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম এবং টাকা অতিমূল্যায়িত হয়েছে।
source:http://www.prothom-alo.com/economy/article/1090135/ব্যবসায়-খরচ-বাড়বে-বাড়বে-পণ্যের-দাম