ক্ষুদ্রঋণে বরং দারিদ্র্য লালন হয় :প্রধানমন্ত্রী

Author Topic: ক্ষুদ্রঋণে বরং দারিদ্র্য লালন হয় :প্রধানমন্ত্রী  (Read 1040 times)

Offline Md. Alamgir Hossan

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 935
  • Test
    • View Profile
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুদ্র ঋণের বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘আমার দুঃখ লাগে সেদিন অর্থমন্ত্রী এমন একজনের প্রশংসা করে ফেললেন, যার কারণে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় বিশ্ব ব্যাংক। এরপর আমাকে আমেরিকা থেকে বারবার থ্রেট করা হয়। আমার ছেলেকে বারবার স্টেট ডিপার্টমেন্টে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এখন কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয়েছে পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। অথচ তিনি (অর্থমন্ত্রী) এখন তার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষতিকর প্রভাবের বিপরীতে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষুদ্র সঞ্চয় নীতির উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ক্ষুদ্রঋণে দারিদ্র্য বিমোচন হয় না, বরং দারিদ্র্য লালন-পালন করা হয়। আর যারা ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা করেন, তারা হন সম্পদশালী।

গতকাল শনিবার রাজধানীর ?কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহিলা আওয়ামী লীগের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকেই ক্রেডিট নেন। কদিন আগে আমাদের অর্থমন্ত্রী ক্ষুদ্র ঋণের খুব প্রশংসা করে বললেন যে ক্ষুদ্র ঋণের জন্য নাকি দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন যদি তার জন্যই হতো, তা হলে ৬০ ভাগের মতো দারিদ্র্য থাকে কেন। কীভাবে এটা ২২ ভাগে নেমে এসেছে, কবে নেমে এসেছে? অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অর্থমন্ত্রীকেই বলব, দারিদ্র্য যে ২২ ভাগে নেমে এসেছে, সেটা কাদের আমলে? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে এটা হয়েছে। যেটির জন্য অর্থমন্ত্রীও কর্মসূচি দিয়েছেন, আবার অর্থমন্ত্রী থাকাকালে কিবরিয়া সাহেবকে দিয়েও আমি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কর্মসূচি দিয়েছিলাম। সেসব কর্মসূচির ফলেই আজ দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে।’

গরিবের মেয়েরা যে টাকা কামাই করে তা সুদ হিসেবেই চলে যায়

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষুদ্র ঋণে সপ্তাহে সপ্তাহে উচ্চহারে সুদ দিতে হয়। ওই গরিবের মেয়েরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা কামাই করে সে টাকা সুদ হিসেবেই চলে যায়। সে কোনো মতে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু দারিদ্র্যের হাত থেকে উঠে আসতে পারে না। যারা এই ব্যবসা করে, তারা চায়ও না এরা দারিদ্র্য থেকে উঠে আসুক। কারণ দারিদ্র্য থেকে উঠে আসলে তাদের ব্যবসাই চলে যাবে। তারা কাকে নিয়ে ব্যবসা করবে? শেখ হাসিনা বলেন, আমরা রাজনীতি করতে এসেছি, ব্যবসা করতে নয়। মানুষের ভাগ্য গড়ার জন্য এসেছি। দরিদ্র মানুষকে নিয়ে ব্যবসা করে বিত্তশালী হওয়ার জন্য আসিনি, এসেছি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে।

বিএনপি দেশবাসীর ওপর পাশবিক অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো দেশবাসীর ওপর পাশবিক অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের নির্যাতন আরো ভয়াবহ রূপ নেয়। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে তারা নির্যাতন চালিয়েছে। বিএনপির নির্যাতনের হাত থেকে ১০ বছরের শিশু থেকে ৬৫ বছরের নারী, এমনকি অন্তঃসত্ত্বা মহিলা পর্যন্ত রেহাই পায়নি। সারাদেশে ৩ হাজার ৩৩৬ জন অগ্নিদগ্ধ এবং সাড়ে ৩শ’ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। স্কুল ছাত্র অনিক আর হূদয়কে আমি চিকিত্সা করাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে বলেন, ভোলার লালমোহন ও আশপাশের গ্রামে ১০ বছরের শিশু থেকে ৬৫ বছরের বৃদ্ধ কেউই বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি। পাক হানাদারবাহিনীর মতই তারা বর্বর সন্ত্রাস-নির্যাতন চালিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, রংপুরের নিসবেদগঞ্জে যারা তীর ধনুক নিয়ে এক সময় পাক পানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল তারাও ভয়াবহ সন্ত্রাস, নির্যাতন ও পাশবিকতার শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, মাদারীপুরে ২ বছরের শিশু রোকসানাকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে চুলায় নিক্ষেপ করে হত্যা করেছে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। সেই যন্ত্রণা নিয়ে এখনো অনেকে বেঁচে আছেন।

সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে

প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, সন্তানের সঙ্গে মায়েদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে আর কেউ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকাশক্তির পথে না যায়। তিনি বলেন, সন্তানের জন্য সব থেকে বড় বন্ধু হবেন ‘মা’। মায়ের কাছে সন্তান যেন নির্দ্বিধায় তার যে কোনো সমস্যার কথা বলতে পারে সেই ধরনের একটা সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যেটা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা কথা মা-বোনদের বলে রাখি— বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। মাদকাশক্তি থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে হবে। 

নারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের কখনো অপাঙেক্তয় ভাবা যাবে না। প্রত্যেকটি মানুষেরই কর্মদক্ষতা আছে, কর্মক্ষমতা আছে। যার যেটুকু আছে সেটা দেশের কাজে লাগাতে হবে। বিশেষ করে যারা রাজনৈতিক কর্মী তাদের একটাই লক্ষ্য থাকতে হবে— রাজনীতির মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে কি দিতে পারলাম, মানুষকে কি দিতে পারলাম সেটাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। আর আমাদের মা-বোনদের কাছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যেতে হবে। তাদের জন্য আমরা যে কাজগুলো করেছি সেগুলো তাদের বলতে হবে। তিনি বলেন, এখন শুধু বাংলাদেশ না সমগ্র বিশ্বে একটা নতুন উপসর্গ হচ্ছে জঙ্গিবাদের আবির্ভাব। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে নারীরাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। মেয়েরা মায়ের জাত আর ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানুষ হত্যা করে কিভাবে তারা ইসলাম ধর্ম পালন করছে আমি জানি না। যারা এরকম নিরীহ মানুষ হত্যা করবে তাদের স্থান কখনো বেহেশতে হতে পারে না।

সম্মেলন উপলক্ষে সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্চ মাস আমাদের স্বাধীনতার মাস। এই মাসেই জাতির পিতা ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। আবার এই মাসের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার মায়েরা বিরাট ভূমিকা পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি আমার মা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের কথা। তিনি ছিলেন জাতির পিতার ছায়াসঙ্গী।

‘বিশ্বে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তাঁর নর।’ মায়ের সম্পর্কে বলতে গিয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচনা থেকে এ অংশটি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধে সম্ভ্রমহারা নারীদের পুনর্বাসনে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু তাদের জন্য পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন। তিনি বলেন, সুইজারল্যান্ড থেকে বঙ্গবন্ধু নার্স, ডাক্তার নিয়ে এসে তাদের চিকিত্সা করান। যাদের অ্যাবরশন করানো যায় অ্যাবরশন করান এবং যাদের অ্যাবরশন করানো সম্ভব হয়নি তাদের সন্তান জন্ম দিয়ে বিশ্বের বহুদেশে পাঠিয়ে পুনর্বাসন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব নারীদের অনেকেরই বিয়ের সময় সমস্যা দেখা দিলে বাবার নামের স্থলে বঙ্গবন্ধু বলেন- ‘লিখে দাও পিতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান, বাড়ি ধানমন্ডি ৩২।’

আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রেও নারীর অধিকার নিশ্চিত করা হয়

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সমাজ গড়ে তুলতে হলে সমাজের সকলের জন্যই সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। মানুষ যেন স্বাচ্ছন্দ্যে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারে সেজন্য বর্তমান সরকারের আমলে সরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন সেক্টরে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছে। বিশ্বের কোনো দেশের সরকারের এত বেতন বৃদ্ধির রেকর্ড নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগই বাংলাদেশের একমাত্র সংগঠন যেখানে গঠনতন্ত্র এবং ঘোষণাপত্রেও নারীর অধিকার নিশ্চিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার সরকারের আমলে দেশে নারীর ক্ষমতায়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, প্রথম সচিব, মহিলা পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, আর্মি, নেভি, এয়ার ফোর্সে প্রথম নারী সদস্যদের তার সরকারই নিয়োগ প্রদান করে। শুধু তাই নয়, মহিলা বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, হাইকোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের জজ হিসেবেও নারীদের নিয়োগ করা হয়। স্থানীয় সরকারের সকল পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদে বর্তমানে ২১ জন সরাসরি নির্বাচিত নারী সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনে ৫০ জন প্রতিনিধি রয়েছেন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিসহ কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কাউন্সিলররা অংশ নেবেন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আওয়ামী লীগ যেন পুনরায় সরকার গঠনে সক্ষম হয় সে জন্য মহিলা আওয়ামী লীগের সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি তার সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে দেশবাসীকে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের অবহিত করারও আহ্বান জানান। শতশত নেতাকর্মীর উদ্দেশে বক্তৃতার শুরুতেই শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে আপনাদের অনেকের সাথে চোখের দেখা হয় না, কিন্তু মনের দেখা ঠিকই হয়। সবার কথা মনে পড়ে।’

সম্মেলনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এরপর সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। পরে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মহিলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক শিরিন রোকসানা। এরপরই শোক প্রস্তাবে আনা নিহতদের, একাত্তরের শহীদ এবং সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মাহুতি দানকারী সকল শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আশরাফুননেছা মোশাররফ। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাফিয়া খাতুন স্বাগত বক্তৃতা করেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের মহিলা ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুননেছা ইন্দিরা এমপি। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খান এমপি।

Offline MD. ABDUR ROUF

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 82
  • Test
    • View Profile
    • Google Scholar
Dr. Md. Abdur Rouf
Associate Professor of Accounting
Faculty of Business and Economics
Daffodil International University

Offline Shah Alam Kabir Pramanik

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 542
  • Test
    • View Profile