বিস্মৃত বিজ্ঞানী জর্জেস লেমাতরঃ যাকে তুলনা করা হয় আইনস্টাইনের সাথে

Author Topic: বিস্মৃত বিজ্ঞানী জর্জেস লেমাতরঃ যাকে তুলনা করা হয় আইনস্টাইনের সাথে  (Read 657 times)

Offline subrata.ns

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 255
  • Test
    • View Profile
    • https://www.daffodilvarsity.edu.bd/
বর্তমান যুগের যেসকল শিক্ষার্থী রয়েছেন, তারা সকলেই বিজ্ঞান বিষয়ক নানা শিক্ষা পেয়েছেন নামকরা সব শিক্ষকদের কাছে। শিক্ষা বলতে বুঝিয়েছি, তারা বিজ্ঞানের সকল সূত্র কিংবা কৌশল জানতে পেরেছেন স্বনামধন্য সব পদার্থবিদ, রসায়নবিদ কিংবা গবেষকদের মাধ্যমে। যেমনঃ আলবার্ট আইনস্টাইন, আইজ্যাক নিউটন, গ্যালিলিও গ্যালেলিই, চার্লস ডারউইন, মারি কুরি প্রমুখ বিজ্ঞানীগণ।
এবার যদি তাদেরকে জর্জেস লেমাতরের কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, তারা একটু থমকে যাবেন।
আপনি কি জানেন, যে বিজ্ঞানী প্রথম বিগ ব্যাং তত্ত্ব দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন পৃথিবী সম্প্রসারণশীল-তার কথা গুগলে সার্চ দিলে পাওয়া যায় না? আপনি যদি গুগলে “Famous Scientists” লিখে সার্চ দেন এবং যাদের নাম উঠে আসে তাদের লক্ষ্য করেন, দেখবেন জর্জের লেমাতরের কথা কোথাও নেই। সত্যি কথা বলতে গেলে জর্জের লেমাতর তার কাজের মাধ্যমে নিজেকে এতোটাই উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন যে, তাকে আইনস্টাইনের সাথে তুলনা করলেও অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু এই বিজ্ঞানীর নাম খুব কম পৃথিবীবাসীই জানে।
আসুন আজ সংক্ষেপে এই মহান বিজ্ঞানী সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া যাকঃ

১৮৯৪ সালে বেলজিয়ামের শারলেরইয়ে এই বিজ্ঞানীর জন্ম। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন ও কৌতুহলী। প্রকৌশল বিদ্যার প্রতি তার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। ১৯ বছর বয়সেই তিনি তার ডিগ্রী হাসিল করে ফেলেন। কিন্তু আরও সামনে অগ্রসর হবার আগেই সমগ্র ইউরোপকে আচ্ছন্ন করে ফেলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। লেমাতর খুব সাহসিকতার পরিচয় দেন এই যুদ্ধে এবং আমেরিকার সিলভার স্টার খেতাব অর্জন করেন।গণিতের প্রতি ভালবাসা থেকে তিনি যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন এবং তারপরেই নিজের মনের একটি সুপ্ত ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটান। যোগ দেন চার্চে।
লেমাতরের প্রকৃত মেধা আস্তে আস্তে প্রস্ফুটিত হতে শুরু করে চার্চে যোগ দেয়ার পর কিন্তু তার জ্ঞানের স্পৃহা কখনো কমে যায় নি। কেমব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস ইত্যাদি জায়গায় তিনি মহাকাশবিজ্ঞান পড়ার জন্য যান এবং এমআইটি থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। বিষয় ছিল গণিত। তার শিক্ষকতার জীবন শুরু হয় গণিত পড়ানোর মাধ্যমেই। ক্যাথোলিক ইউনিভার্সিটি অব লুভনের সাথে তার প্রথম শিক্ষকতা বিষয়ক সম্পৃক্ততা শুরু।

লেমাতরের সূচনাঃ
১৯২৭ সালে লেমাতর বলেন যে মহাবিশ্ব ক্রমেই সম্প্রসারণশীল হচ্ছে। তিনি আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব থেকে গাণিতিকভাবে এটি প্রমাণ করেন। আইনস্টাইনের সাথে লেমাতরের ঐ বছরেই দেখা হয়ে যায়। আইনস্টাই তাকে বলেন,
“তোমার যুক্তি নির্ভুল ও গাণিতিকভাবে সঠিক। কিন্তু তোমার পদার্থবিদ্যা বিষয়ক যে জ্ঞান রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়।” আইনস্টাইন লেমাতরের গণিতজ্ঞান সম্পর্কে কোন প্রশ্ন তুলেন নি কিন্তু তিনি লেমাতরের যে বক্তব্য রয়েছে, সেটিও মেনে নিতে পারেন নি। এডউইন হাবলের মহাকাশবিজ্ঞানের সূত্রের মাধ্যমে যখন এটি প্রমাণিত হল যে লেমাতরের কথাই সত্য ছিল, তখন সে যুগে আইনস্টাইনসহ স্বনামধন্য সকল বিজ্ঞানী তার কথায় চমৎকৃত হন।

ঐ একই সময়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্নের উদয় হয়েছিল প্রশ্নটি হচ্ছে, যদি মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল হয়, এর মানে কি এটাই বোঝায় যে একটি নির্দিষ্ট স্থান ও সময় থেকে এর সূচনা হয়েছিল? ১৯৩১ সালে লেমাতর বলেন যে, “হ্যাঁ এটি সত্য। একটি ছোট কণিকা থেকেই মহাবিশ্বের সৃষ্টি।” বর্তমানে তার দেয়া এই তত্ত্বকেই আমরা সবাই বিগ ব্যাং হিসেবে জানি।

মৃত্যুর প্রায় ৮০ বছর পর লেমাতরের থিওরি এখন সর্বজনজ্ঞাত। ১৯৬৬ সালের আগ পর্যন্ত লেমাতরকে তেমনভাবে কেউ স্মরণ করে নি। ১৯৬৬ সাল ছিল তার মৃত্যুর বছর। ২০১৭ সালেও এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি মহান বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সমকক্ষ এই বিজ্ঞানীকে আমরা এখনো মনে রাখতে পারি নি। ধর্মের প্রতি আগ্রহ তাকে টেনে নিয়ে গিয়েছে প্রিস্ট কর্মের প্রতি। একদিকে তিনি মানুষকে দিয়েছেন ধর্মের সেবা, অপরদিকে বিজ্ঞান নিয়ে করেছেন চর্চা। প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। কিন্তু কখনো দমে যান নি। আজকের দিনের বিজ্ঞানের প্রতি যাদের অনুরাগ রয়েছে, জর্জেস লেমাতর তাদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার নাম।

সূত্রঃ লাইভ সাইন্স
Subrata Banik
Lecturer (Physics)
Department of General Educational Development