রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে জার্মানির বাজার

Author Topic: রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে জার্মানির বাজার  (Read 1061 times)

Offline shafayet

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 1024
  • Test
    • View Profile



একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্যস্থল যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় ধরে ফেলেছে জার্মানি। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৩৮৪ কোটি ৮ লাখ ৫৭ হাজার ডলারের পণ্য। একই সময়ে জার্মানিতে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৭৮ কোটি ৪৪ লাখ ২২ হাজার ৪৭৭ ডলারের। সেই হিসাবে আট মাসে দুই দেশের রপ্তানির ব্যবধান প্রায় ছয় কোটি ডলার।

গত অর্থবছরের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪১০ কোটি ৭ লাখ ডলার ও জার্মানিতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩২১ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের। অর্থাৎ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে জার্মানির চেয়ে প্রায় ৯০ কোটি ডলারের পণ্য বেশি রপ্তানি করে বাংলাদেশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাস (জুলাই-জানুয়ারি) শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আট মাস পর সেটি কমে ৩ দশমিক ২২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ দিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে জার্মানিতে রপ্তানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ, বলা যেতে পারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে জার্মানির বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধিই মূলত প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে।

তবে প্রথম আট মাসে চীনেও রপ্তানি বেড়েছে। গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে ২৯ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে বাংলাদেশের জন্য জার্মানির মতো বড় নয় চীনের বাজার। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে চীনে রপ্তানি হয়েছে ৬৩ কোটি ৬ লাখ ডলারের। গত বছরের এই সময়ে যা ছিল ৪৮ কোটি ৮৪ লাখ ডলার।

এই সব গন্তব্যস্থলে রপ্তানি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত বছরের প্রথম আট মাসে ৩৭১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। চলতি বছরের আট মাসে যা হয়েছে ৩৪২ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যেও কমেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি। তৃতীয় এই গন্তব্যস্থলে প্রথম আট মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাজ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২১১ কোটি ডলারের। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২২০ কোটি ডলার। অন্যদিকে, জার্মানিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি এই আট মাসে আগের সময়ের চেয়ে বেড়েছে ১৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে জার্মানিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৫৫ কোটি ডলারের। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩০০ কোটি ২৭ লাখ ডলার।

শুধু ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪০ কোটি ৭৮ লাখ ৬৩ হাজার কোটি ডলারের। মূলত এ খাতের নিট পোশাকের চাহিদাই জার্মানিতে রপ্তানি বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে মূলত ওভেন পোশাক (প্যান্ট, শার্ট, ট্রাউজার) আমদানি করে। ইউরোপের দেশগুলো করে নিট পোশাক (গেঞ্জি, সোয়েটার)। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে নিটের চাহিদা বেড়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর জানান, অর্থনৈতিক গতিতে মন্থরতার কারণে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি কমেছে বাংলাদেশের। জার্মানিতে বেড়েছে মূলত নিট ওয়্যারের চাহিদা বাড়ায়। তৈরি পোশাকের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে জার্মানিতে। নিট ওয়্যারের চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশর জন্যই ভালো হয়েছে। ‘ভ্যালু অ্যাডেড’ হচ্ছে বেশি। বাংলাদেশের কাপড় ব্যবহার করা হচ্ছে। ওভেন ওয়্যারে কাঁচামাল বিদেশ থেকে আনতে হয়। তাই জার্মানিতে রপ্তানি বাড়ার বিষয়টি ইতিবাচক বলা যায়।

একই কথা বললেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মূলত নিট পোশাক তৈরিতে ওভেন পোশাকের চেয়ে সময় কম লাগে, এ ছাড়া কাঁচামালও দেশেরটা ব্যবহার করা যায়। তাই আমাদের গার্মেন্টসগুলো এখন এই নিট পোশাকের দিকেই বেশি ঝুঁকছে। আর নিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি ইউরোপীয় ইউনিয়নে বিশেষ করে জার্মানিতে। তাই তৈরি পোশাকের বাজার ঘুরে যাচ্ছে জার্মানির দিকে।’

রপ্তানি কমেছে জাপান, কানাডাতেও। আট মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে জাপানে রপ্তানি কমেছে ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ। কানাডাতে কমেছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে বেড়েছে স্পেন, ফ্রান্স ও ইতালিতে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে স্পেনে ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ, ইতালিতে বেড়েছে ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও ফ্রান্সে বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘ইউরোপের বাজারে আমাদের নিট ওয়্যার বাড়ছে। এটা কিছুদিন ধরেই আমরা দেখছি। তবে যুক্তরাজ্যে কমেছে মূলত ব্রেক্সিটের (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের সরে আসা) কারণে। যুক্তরাজ্যের ক্রেতারা এবং বাংলাদেশের পোশাক ব্যবসায়ীরা একটু সতর্ক অবস্থানে আছেন। আগামী কয়েক বছরই মনে হয় এর একটা প্রভাব থাকবে অর্থনীতিতে। কানাডায় আমরা যেসব পণ্য রপ্তানি করি, সারা বছর সেগুলোর চাহিদা ওদের থাকে না। তাই বছরের একটা সময় একটু রপ্তানি কমতে দেখা যায়। এটা মূলত “সিজনাল ইমপ্যাক্ট”।’

এ দিকে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির বলেন, ‘১২ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আমাদের। অথচ প্রবৃদ্ধি তার কিছুই হয়নি। কেবল জার্মানি ছাড়া আর কোথাও আশানুরূপ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়নি। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’

অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ১ হাজার ৮৬৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে নিট পোশাক থেকে ৯০৭ কোটি ডলার আর ওভেন পোশাক থেকে ৯৫৬ কোটি ডলার এসেছে। গতবারের চেয়ে এবার পোশাক রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮২ শতাংশ।

Offline A.S. Rafi

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 672
    • View Profile
Abu Saleh Md. Rafi
Senior Lecturer,
Department of English.
Faculty of Humanities and Social Sciences
Daffodil International University.