পাল্টা আক্রমণে আবদুল্লাহ আসাদুল্লাহ প্রায় মাঝমাঠ থেকে বলটা যখন টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, আবাহনীর শেষ ডিফেন্ডার রায়হান শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ। পারলেন না মাজিয়ার স্ট্রাইকারকে আটকাতে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে সর্বনাশের শেষটা টেনে দিলেন আবদুল্লাহ।
১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচে সমতাসূচক গোলটা পেতে আক্রমণে ওঠা আবাহনীর জালে উল্টো দ্বিতীয় গোল, ৮৬ মিনিটে। অন্তত ড্রয়ের আশায় এএফসি কাপের প্রথম ম্যাচে আকাশি-নীলের ২-০ হারটা তুলে ধরল বাংলাদেশ-মালদ্বীপের ফুটবলের পার্থক্যও।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ফুটবল রোমান্টিকদের অনেকে তখন ফিরে যাচ্ছেন আশি, নব্বই দশকে। মালদ্বীপের ভ্যালেন্সিয়াকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে মোহামেডানের সেই উৎসব চোখে ভাসে তাঁদের! ওই ভ্যালেন্সিয়াই খাবি খেয়েছে আবাহনীর কাছেও (৭-২)। দ্বীপ দেশটির জাতীয় দলকে আসলাম-কায়সার হামিদরা ভাসিয়েছেন আট গোলে। সেই দিন আর নেই! গত মাসেই চট্টগ্রামে শেখ কামাল টুর্নামেন্টে মালদ্বীপের টিসি এফসির কাছে এই আবাহনী হেরেছে ১-০ গোলে।
পঞ্চম মিনিটেই পাওয়া গোল ধরে রাখতে আবাহনীর সামনে কাল মাজিয়া দাঁড় করিয়েছে নিখুঁত রক্ষণ। যদিও বল পজেশন ঢাকার দলটিরই ছিল বেশি। আক্রমণেও একক প্রাধান্য। আবাহনী ক্রস করেছে প্রচুর, কিন্তু তা আটকাতে প্রস্তুত ছিলেন মাজিয়ার দীর্ঘদেহী কিরগিজ গোলরক্ষক পাভেল।
আবাহনী কোচ দ্রাগো মামিচ বিরক্ত এমন ক্রস দেখে। ম্যাচ শেষে বলছিলেন, ‘আমি উঁচু গলায় বারবার বললাম, ‘তোমরা মাটিতে খেলো। কিন্তু ওরা ক্রস করতে থাকল আর তা প্রতিহত হলো।’ এমনিতে আবাহনীর খেলায় মামিচ খুশি। শেখ কামাল কাপে খেলা দলের পাঁচজন নেই। জোড়াতালির নতুন দলটাকে গড়ার সময় পাননি। সেই তুলনায় দল খারাপ খেলেনি বলেই মনে করেন মামিচ।
কিন্তু দুটি ভুল পাস ডেকে এনেছে সর্বনাশ। প্রথমবার অধিনায়ক মামুন মিয়ার ভুল থেকে বল পেয়ে মোহাম্মদ উমাইরের প্লেসিংয়ে ১-০। দ্বিতীয় গোলটা ইয়াসিনের ভুল পাসের খেসারত। অথচ চারজন বিদেশি নিয়ে খেলা মাজিয়া আক্রমণই করেছে মাত্র চারটি! এর মধ্যে দুটি ঠেকিয়েছেন আবাহনীর গোলরক্ষক সোহেল। শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের অভাবই পার্থক্য হয়ে দাঁড়াল। প্রথমার্ধে রাইট উইং ব্যাক পজিশনে খেলা আবাহনী অধিনায়ক মামুন মিয়া ওপরে উঠেছেন বারবার। কিন্তু সৃষ্টিশীলতার অভাবে আক্রমণগুলো দানা বাঁধেনি। কিছুটা আহত মামুন মিয়াকে দ্বিতীয়ার্ধে বসিয়ে কোচ চলে গেলেন দ্বিতীয় স্ট্রাইকারে, নামালেন জীবনকে।
কিন্তু মাজিয়া প্রতিপক্ষকে শুটিং রেঞ্জে কোনো জায়গাই দেয়নি। উল্টো আবাহনী মাঝমাঠে অনেক ভুল পাস দিয়েছে, পাল্টা আক্রমণের জন্য রক্ষণও তৈরি ছিল না। সর্বনাশটা হয়েছে এখানেই। তবে ইরানি রেফারি কিছু ফ্রি-কিক দেননি বলেও ক্ষোভ আবাহনী কোচের।
আকাশি-নীলের পরের ম্যাচটা আগামী ৪ এপ্রিল কলকাতায় স্থানীয় মোহনবাগানের সঙ্গে। আরেকটি বড় পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে!