চিনের প্রাচীর নিয়ে আমাদের বিস্ময়ের সীমা নেই। ছেলেবেলা থেকেই এটা সম্পর্কে অনেক জানা শোনা হয়েছে, তার পরেও কেন জানি না মনে হয়, এখনো অনেক কিছু অজানাই রয়ে গেছে। তাই চলুন আজ জেনে নেই চিনের মহাপ্রাচীর সম্পর্কে আরও দশটি আকর্ষণীয় ও চমকপ্রদ তথ্য:
১। সাধারণ বিশ্বাসের বিপক্ষে এটা বলা হয়ে থাকে যে, চিনের মহাপ্রাচীর খালি চোখে দেখা যায় না। কোনোকিছুর সাহায্য নিয়ে তবেই এই প্রাচীর দেখা যায়।
২। কিন রাজবংশের (২২১-২০৭ খ্রীস্টপূর্ব) প্রথম দিকে যখন এই মহাপ্রাচীর তৈরি হয়, তখন ইটের গাঁথুনিতে মশলা হিসেবে আঠালো ভাত ও আটা ব্যবহার করা হয়েছিল।
৩। আমরা সাধারণত চিনের মহাপ্রাচীরের যে অংশটি দেখে থাকি, তা মিং রাজবংশের দ্বারা নির্মিত হয়। এটি মহাপ্রাচীরের শেষ অংশ, যা ইট দিয়ে তৈরি এবং অনেক পর্যংবেক্ষন টাওয়ার দ্বারা সজ্জিত।
৪। চিনের মহাপ্রাচীরকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কবরস্থান বলা হয়ে থাকে। এ প্রাচীর তৈরিতে দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা যায়। পরবর্তীতে প্রত্নতাত্বিকরা প্রাচীর নিচের অংশে মানুষের দেহাবশেষের সন্ধান পেয়েছেন।
৫। সরকারি গণনামতে চিনের মহাপ্রাচীরের দৈর্ঘ্য ৮,৮৫১.৮ কিলোমিটার (৫,৫০০ মাইল) হলেও, হাজার বছর পূর্বে যখন এই মহাপ্রাচীর নির্মিত হয়, তখন এর দৈর্ঘ্য ছিল ২১,১৯৬.১৮ কিলোমিটার (১৩,১৭০ মাইল)। এর নিরক্ষবৃত্তের পরিধি ৪০,০৭৫ কিলোমিটার ৯২৪,৯০১ মাইল)।
৬। চিনের মহাপ্রাচীর ক্ষয়ের হুমকির মুখে। মহাপ্রাচীরের উত্তর-পশ্চিম অংশ (গানসু ও নিংজিয়া প্রদেশ অংশে) খুব দ্রুত ধসে যাচ্ছে। মনে করা হয় যে, এসব অংশ মানুষ ও প্রকৃত্রির দ্বারা আগামি ২০ বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে।
৭। দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ প্রতিবছর চিনের মহাপ্রাচীর প্রদর্শন করতে যান। মহাপ্রাচীরের সবচেয়ে বিখ্যাত অংশ – বাদালিং, যা তিনশতেরও বেশি রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ভ্রমণ করেন। এটাকেই প্রাচীরের সবচেয়ে ব্যস্ততম অংশ বলা হয়ে থাকে, যা পুনরুদ্ধার করা হয়।
৮। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যবন্ত যখন সাংস্কৃতিক বিপ্লব সংগঠিত হয়, সেসময় বাড়ি, খামার ইত্যাদি তৈরির জন্য মহাপ্রাচীরের অনেক ইট খুলে নিয়ে যাওয়া হয়। না হলে, এই মহাপ্রাচীরের অনেক অংশ আজকের তুলনায় অনেক বেশি সংরক্ষিত থাকতো।
৯। মহাপ্রাচীরের কিছু অংশ এতই প্রশস্ত যে, এর ওপর দিয়ে অনায়াসেই একটি গাড়ি দ্রুতবেগে চলতে পারে।
১০। চিনের মহাপ্রাচীর নিয়ে যত লোককথা প্রচলিত আছে, এগুলোর মধ্যে ‘মেন জিয়াংগুর বেদনাদায়ক কান্না’ বেশ সুপরিচিত। মেন জিয়াংগু’র স্বামী এই প্রাচীর তৈরির সময় মারা যান। কথিত আছে, মেনের কান্না এতই বেদনাদায়ক ছিল যে, মহাপ্রাচীরের একটি অংশ ধসে যায়। আর সেখান থেকে তার স্বামীর হাড়গোড় বের হয়, যেন সে সেগুলো কবর দিতে পারে। -সূত্র: চায়না ট্রাভেল।