সিঁড়ি বেয়ে উঠতে নামতে গেলে বা পুজো দেওয়ার সময় নিচে বসলে, হাঁটুর ব্যথা কী? তাঁর টের পাওয়া যায়। হাঁটুর এমন বেসামাল জবাবে নাজেহাল হতে হয় একটু বয়স হলেই। হাড়ের এমন দুরাবস্থার জন্যই অনুভব হয় ব্যথার। হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সঠিক লাফিস্টাইলেরও যে বড় ভূমিকা রয়েছে, সেটা আমরা জেনেও অনেকসময় পাত্তা দিই না! ওষুধ বা নিয়মিত ডাক্তারি পরামর্শ তো আছেই, কিন্তু এর সঙ্গে কম বয়স থেকেই যদি খাওয়াদাওয়ায় কিছু নিয়মকানুন মেনে চলা যায় তাহলে বেশি বয়সে হাড়ের সমস্যার সম্ভাবনা অনেকটাই কমানো যেতে পারে। হাড়ের সমস্যা ও সমাধান হাড়ের নানা সমস্যার মধ্যে যেগুলি খুব বেশি দেখা যায় সেগুলি হল অস্টিওপোরেসিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস আর কোমরের নীচের দিকে ব্যথা। অস্টিওআর্থ্রাইটিসের প্রধান লক্ষণ হল গাঁটে ব্যথা। জয়েন্টের আশেপাশের মাংসপেশীর পেরিফেরাল নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কোনও গুরুতর চোটের ফলে, ওজন অত্যধিক বেড়ে যাওয়ার ফলে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হতে পারে। সমস্যার গুরুত্ব বুঝে ওষুধ বা সার্জারির সাহায্য নিতে হয়। তবে সমস্যা গুরুতর হোক আর না হোক, জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন কিন্তু অবশ্য প্রয়োজনীয়। হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে আগে থাকতেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আর এজন্য পুষ্টিকর ব্যালেন্সড ডায়েট আর নিয়মিত এক্সারসাইজ় খুব জরুরি। সেডেন্টারি লাইফস্টাইল এড়িয়ে চলতে যথাযোগ্য চেষ্টা করতে হবে। হাড়ের সঠিক বিকাশের জন্য কম বয়স থেকেই পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়ার অভ্যেস করতে হবে। বয়ঃসন্ধির সময়ে বিশেষ করে সঠিক ডায়েট মেনে চলা প্রয়োজন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মহিলাদের হাড়ের বিকাশ ঠিকমতো হয় না দু’টো কারণে: যদি ছোটবেলা বা বয়ঃসন্ধির সময় পুষ্টির অভাব হয় আর যদি কোনও মহিলা প্রেগনেন্সির সময় ম্যালনিউট্রিশনে ভোগেন, তাহলে তাঁর সন্তানের হাড়ের সমস্যা হতে পারে। অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা অস্টিওপোরেসিসের মতো সমস্যা কিন্তু আসলে লাইফস্টাইল ডিজ়িজ়। অন্যান্য কারণের সঙ্গে সঙ্গে তাই মাথায় রাখতে হবে সেডেন্টারি লাইফস্টাইলও কিন্তু একইরকম ক্ষতিকর। ভিটামিন ডি-র অভাবেও হাড় দূর্বল হয়ে যেতে পারে। এছাড়া কোনওরকম এক্সারসাইজ় না করার ফলে, ব্যালেন্সড ডায়েট না মেনে চলার ফলে, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবেও হাড়ের সমস্যা হতে পারে। খাবারে সবুজ পাতাওলা সবজি, ফল আর সিরিয়াল রাখুন বেশি পরিমাণে। দুধ বা দইও হাড়ের পুষ্টির জন্য উপকারী। স্কিনলেস চিকেন, সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। হাড় মজবুত রাখতে ডিমও খেতে পারেন। এছাড়া কোলেস্টেরলের সমস্যা না থাকলে পরিমিত পরিমাণে ঘি-ও খাওয়া যেতে পারে। সময়মতো খাওয়াও কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। সকাল আটটার মধ্যে পেটভরে ব্রেকফাস্ট করে নিন। লাঞ্চ হবে তুলনায় হালকা। আর রাত ৮.৩০-এর মধ্যে ডিনার করে নিতে পারলে খুব ভাল হয়। এক্সারসাইজ়ের মধ্যে স্কিপিং, জগিং খুব ভাল। নাচ বা স্পোর্টস করতে পারলেও উপকার পাবেন। আর এর কোনওটিই সম্ভব না হলে নিয়মিত ৪৫ মিনিট করে হাঁটুন। হাড়ের সমস্যা প্রতিরোধে এর বিকল্প নেই। অস্টিওপোরেসিসের মোকাবিলায় বেশি বয়সে অস্টিওপোরেসিসের সমস্যার সূত্রপাত কিন্তু খুব কম বয়স থেকেই হতে পারে। ক্যালশিয়ামের অভাব, অলস জীবনযাপন ইত্যাদির ফলে ভবিষ্যতে হাড়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত ধূমপান বা অ্যালকোহল সেবন, ইস্ট্রোজেনের অভাব, অ্যানোরেক্সিয়া ইত্যাদিও অস্টিওপোরেসিসের গুরুত্বপূর্ণ রিস্ক ফ্যাক্টর। অস্টিওপোরেসিসের ফলে হাড় দূর্বল হয়ে যায়, ফলে ফ্র্যাকচারের সম্ভাবনাও বাড়ে। বোন মিনারেল ডেনসিটি টেস্টের মাধ্যমে এই অসুখ ডায়াগনোজ় করা হয়। বোন মিনারেল ডেনসিটি বাড়ানোর জন্য কম বয়স থেকেই স্ট্রেংথ ট্রেনিং করতে পারলে ভাল হয়। তবে অস্টিওপোরেসিসের সমস্যায় যাঁরা ইতিমধ্যেই ভুগছেন, তাঁরা এক্সারাসাইজ় করার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। একজন মহিলার ৩৭ বছর বয়স পর্যন্ত ‘পিক বোন মাস’ থাকে। তারপর থেকে হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়। প্রতিরোধ করতে হলে দিনে ১২০০ থেকে ১৫০০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম ও ৮০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ডি ইনটেক জরুরি। ডিমের কুসুম, দই, দুধ, এক্সারসাইজ় আর সূর্যের আলো-এগুলো সবক’টিই হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে জরুরি।
- See more at:
http://www.deshebideshe.com/news/details/40489#sthash.7NQ0SgQn.dpuf