রিকন্সট্রাকটিভ টেকনোলজি বা পুনর্গঠন প্রযুক্তির সাহায্যে যে কোন মানুষের মুখাবয়ব কেমন ছিল বা তার চেহারার আদল কেমন ছিল তা জানা যায়।আর ঠিক এই প্রযুক্তির সাহায্যেই প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এমন এক ব্যক্তির মুখের আদল পুনঃনির্মান করতে সক্ষম হয়েছেন, যিনি কিনা ৭০০ বছর আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।মধ্যযুগীয় এই মানুষটি প্রায় শত শত মানুষের সাথে একটি গণকবরে শায়িত ছিলেন।এই গণকবরটি সেইন্ট জর্জ কলেজের ওল্ড ডিভিনিটি স্কুল ভবনের নিচে অবস্থিত।এটি আজকের যুক্তরাজ্যে অবস্থিত।
এই মানুষটির মুখাবয়ব ও জৈবিক গঠন কেমন ছিল তার ওপর গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে ১৩ শতকের দিকে এই মানুষটির মৃত্যু হয়েছিল।
গবেষকদলের প্রধান জন রব বলেছেন, “ঐতিহাসিক নানা দলিল থেকে দেখা যায় যে বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যুর দলিল রেকর্ড করে রাখা হয়েছে যারা ছিলেন অবস্থা সম্পন্ন পরিবারের এবং যাদের জমিজমার পরিমাণ ভালোই ছিল।”
তিনি আরো বলেন, “আর্থিক অবস্থার পরিমাণ যত খারাপ হবে,মানুষ সম্পর্কে তথ্য ততটাই কম রেকর্ড করে রাখা হয়েছে। আমরা যে মানুষটির দেহাবশেষ পেয়েছি, তার মাধ্যমে এবার আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব হবে যে, মধ্যযুগীয় আমলে মানুষের দিনকাল আসলে কেমন করে কাটত। কারণ, এই হতভাগ্য মানুষদের দিনলিপি সম্পর্কে খুব কম তথ্যই আমাদের জানা রয়েছে।”
সেইন্ট জর্জে আরো যেসকল কংকাল পাওয়া গিয়েছে,তাদের বেশিরভাগই ছিলেন দরিদ্র পরিবারের।তাদের কবরে শায়িত করার সময়কাল ছিল ত্রয়োদশ থেকে পঞ্চদশ শতক।ঐ সময়কালের যে সমস্ত হাসপাতাল কিংবা দাতব্য সংস্থা ছিল, তাদের সহায়তায় এই হতভাগ্য মানুষদের কবর দেয়া হয়।
বিজ্ঞানীরা আরো বলছেন যে,তাদের প্রাপ্ত যে কংকালটি রয়েছে তার দৈহিক গঠনের পরীক্ষা করলে জানা যায় যে তিনি চল্লিশোর্ধ্ব ছিলেন।তার হাতের গঠন ও মুখের গঠন দেখলে বোঝা যায় তিনি কায়িক শ্রমের প্রতি বেশি মনোযোগ দিতেন। অর্থাৎ, তিনি হয়তবা একজন দিনমজুর বা ঐ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তার মেরুদন্ড ও কাঁধের হাড় লক্ষ্য করলে দেখা যায় তিনি ব্যাকপেইন বা কাঁধের ব্যথায় ভুগতেন। কায়িক শ্রম না করলে ঐ সময়ে এই ধরণের ব্যথায় আক্রান্ত হবার কোন সম্ভাবনা নেই বলেই বিজ্ঞানীদের ধারণা।
নতুন এই আবিষ্কার মধ্যযুগীয় সময়ে অর্থনৈতিকভাবে নিম্নশ্রেণীর মানুষের দিনলিপি বা সামাজিক অবস্থান কেমন ছিল, এবার তাই নিয়েই গবেষণা করতে চান বিজ্ঞানীরা।