বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদ সেনাদের পরিবার প্রতি ১০ হাজার রুপি করে দেওয়ার ঘোষণা দিলেন নরেন্দ্র মোদি। এই ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আমি এবং আমার দেশের জনতা মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সেই আত্মত্যাগের প্রতি স্যালুট জানাই।
বাংলাদেশর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছিলেন যে ভারতীয় সেনারা তাদের প্রতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মাননা জানানো ও পরিবারকে সহায়তা দিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শনিবার বিকেলে নয়াদিল্লির মানেক শ’ সেন্টারে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মাননা তুলে দেন।
এ সময় মোদি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের জন্মের গল্পটিই অনেক আত্মত্যাগের গল্প। তিনি স্মরণ করেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি বাড়িতে (৩২ নম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার আটকা পড়ে যায় তখন ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর অশোক তাদের উদ্ধার করেন।
প্রতিবেশী দেশটির উন্নয়নের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এই দেশটির জিডিপি তার জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ৩১ গুণ বেড়েছে, যা অনন্য সাধারণ এক অগ্রগতি।
মোদি আরও বলেন, ভারত তার প্রতিবেশীদের নিয়েই উন্নত হতে চায়, এগিয়ে যেতে চায়। প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব সবসময়ই আমাদের কাছে বড় কিছু।
এই সম্পর্ক সরকারে-সরকারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি নেতৃত্বের সাথে নেতৃত্বের নয়, এই সম্পর্ক দুই দেশের জনগণের সঙ্গে জনগণের। আর আমরা কোনো সুময়ের বন্ধু মাত্র নই। আমি যেমন আমার দেশের মানুষের শুভ চাই, তেমনি বাংলাদেশসহ সব প্রতিবেশী দেশর মানুষেরও সুন্দর জীবন কামনা করি।
তবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশের (পাকিস্তান) কথা তিনি উল্লখ করেন যারা বাংলাদেশ কিংবা ভারতের মতো নয়, এই দেশ সন্ত্রাস লালন করে, তাই তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব নেই বলেও উল্লেখ করেন নরেন্দ্র মোদি।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি ছিল গত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ঘটনাগুলোর একটি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারতীয় সৈনিকরা কাজ করেছেন। তাদের আজ সম্মাননা জানানো হচ্ছে, যা একটি মহৎ উদ্যোগ।
মোদি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাকি থাকা কাজ করছেন তার কন্যা শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার (শেখ মুজিবুর রহমান) প্রতিটি সিদ্ধান্ত ছিল জনতার জন্য, আজও বাংলাদেশের উন্নতির ধারা প্রশস্ত হচ্ছে তারই সিদ্ধান্তের ওপর ভর করে।
তিনি বলেন, সোনার বাংলার স্বপ্ন সত্যি করতে বঙ্গবন্ধু কাজ করেছেন। তার মেয়ে আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, সেটি তিনিই এগিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়া জীবনের যেই অবস্থা থেকে নিজেকে উত্তরণ করেছেন শেখ হাসিনা, দেশকে উত্তরণ করিয়েছেন; উন্নতির ধারায় নিয়েছেন- এই সাহস সবার নেই। পরিবারের ১৬ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এটা কল্পনা করা যায় না। তারপরও তিনি দেশের জন্য এগিয়ে এসে কাজ করছেন। তার চিন্তাই বাংলাদেশের প্রগতি ও উন্নতির।
এসময় তিনি বাংলার নানামাত্রিক উন্নয়ন তুলে ধরেন এবং প্রশংসা করেন। আরও বলেন, আমরা চাই না উন্নতি শুধু শত কোটি ভারতীয়র হোক, চাই প্রতিবেশীদেরও উন্নতি হোক। সবাই মিলে একত্রে কাজ করতে চাই। আমরা সুখ-দুখের সাথী। যে স্বপ্ন ভারতের জন্য দেখি সেই শুভ কামনা বাংলাদেশের জন্যও করি।
এসময় মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এ সময় বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠান শেষে হাসিমুখে স্থান ত্যাগ করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।