দুই দশকের বেশি সময় ধরে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত আলোচনা চালিয়ে আসছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত শনিবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর এ চুক্তি নিয়ে নতুন আশার কথা শুনিয়েছেন।
তবে এ আশাবাদের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ চুক্তির বিষয়ে একেবারে নতুন প্রস্তাব হাজির করলেন। তাঁর নতুন তত্ত্বের মূলকথা, তিস্তা বাদ থাক। অন্য কিছু নদীর পানি ভাগাভাগির চুক্তি নিয়ে কথা হোক। মমতার এ প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে পানির ভাগাভাগির বিষয়কে আরও ঘোলাটে করে ফেলতে পারে। নিরাপত্তা এবং সীমান্ত সমস্যার সমাধানের পর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সম্পর্ক এক ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছেছিল। তিস্তা চুক্তি না হলে এ সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে শেখ হাসিনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
পানি চুক্তির বিষয়টি রাজ্য পর্যায়ে সমাধা হওয়ার কথা। এ চুক্তির বিষয়ে তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৎপর না হলে কেন্দ্র ততটা বেশি কিছু করতে পারবে না। পানি ভাগাভাগির চুক্তি এমনিতেই খুব জটিল। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি আন্তসীমান্ত নদী আছে। এর মধ্যে কেবল গঙ্গার পানি নিয়েই চুক্তি আছে। ১৯৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে ওই চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
‘ওয়াটার, এশিয়াস নিউ ব্যাটলগ্রাউন্ড’ নামের বইয়ের লেখক এবং বিশেষজ্ঞ ব্রহ্মচেলানি বলেন, ‘এই শতাব্দীতে বিশ্বের কোথাও পানির ভাগাভাগি নিয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হয়নি। এটি প্রমাণ করে, পানির ভাগাভাগি এবং সহযোগিতার বিষয়টি কত জটিল হয়ে উঠছে।’
পানির ভাগাভাগির এই জটিল বৃত্তের বাইরে গিয়ে তিস্তার পানি চুক্তির বিষয়টি বাংলাদেশের কাছে একটি রাজনৈতিক এবং সেই সঙ্গে আবেগেরও বিষয় হয়ে উঠেছে। ২০১১ সালে চুক্তির একেবারে দ্বারপ্রান্তে এসেও তা স্বাক্ষর না হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনাকে এমন কথা শুনতে হচ্ছে, তিনি ভারতকে অনেক বেশি দিয়েছেন। বিনিময়ে পেয়েছেন কমই।
বাংলাদেশ অভিযোগ করে আসছে, দিন দিন তিস্তার পানির প্রবাহ কমছে। ঢাকা বলেছে, ২০১৫ সালের মার্চের শেষ ১০ দিন তিস্তার গড় প্রবাহ ছিল ৩১৫ কিউসেক। এই শুকনো মৌসুমে এর আগের বছর প্রবাহ ছিল ৫৫০ কিউসেক।
ঠিক একইভাবে পশ্চিমবঙ্গ তিস্তা চুক্তির বিরোধিতা করে বলে আসছে, এ নদীতে পানি নেই। সরকারের এক সূত্র বলেছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের নতুন প্রস্তাব নিয়ে আমরা কিছু জানি না। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানোও হয়নি।