Bangladesh > Agricultural

ভরা বৈশাখে ‘চৈতের নিদান’

(1/1)

Md.Shahjalal Talukder:
সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ। ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের দুই দিকে হাওর। চলতি পথে কাছ থেকে দেখার মধ্যে পড়ে যে হাওর, তার নাম ‘দেখার হাওর’। বৈশাখের এ সময় সড়কপথে যানবাহন চলত ধীরগতিতে। কারণ, সড়কলাগোয়া হাওর থেকে কাটা ধান মাড়াই, শুকানোর কাজ চলে সড়কে। পুরো বৈশাখ এ সড়ক দিয়ে পথ চলতে হতো পাকা ধানের গন্ধ মেখে। এবার ভরা বৈশাখে সড়কপথে নেই সেই দৃশ্য। পাকা ধানে বিস্তৃত থাকার কথা ছিল দেখার হাওর। এখন দেখার মধ্যে শুধু পানি আর পানি। যেন শান্ত এক সাগর।

গত ৩০ মার্চ থেকে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে একের পর এক হাওরে পানি ঢুকে ফসল তলিয়ে যায়।
অতীতে চৈত্র মাসে এভাবে ফসলহানির ঘটনা ঘটেনি। আবহাওয়াবিদ ও পানিবিশেষজ্ঞরা এই আগাম ফসলহানির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন।

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শ্যামরচর গ্রামের কৃষক অমর চাঁদ দাশ বললেন, ‘আমার বয়স ৭২। আমি তো দেখিইনি, আমার বাবার মুখেও এভাবে চৈত্র মাসে কাঁচা ধান হাওরের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কথা কখনো শুনিনি। হাওর এলাকার মানুষ ফসল ঘরে তোলার আগে চৈতের নিদান (অভাব) মোকাবিলা করত। এখন বৈশাখ মাসে পড়েছি নিদানের মুখে।’ ফসলডুবির পরবর্তী অবস্থা নিয়েও নতুন করে উদ্বেগ তাঁর। জানালেন, তিন দিন ধরে হাওর-নদীর মাছ ভেসে উঠছে। কাঁচা ধান পানিতে তলিয়ে উৎকট গন্ধ ছড়াচ্ছে। মানুষ কী করে বাঁচবে!

শুধু কৃষক অমর চাঁদ দাশই নন, গত সোমবার সুনামগঞ্জের হাওর পরিদর্শন করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও বলেছেন, হাওর এলাকায় অতীতে অসময়ে এভাবে কখনো ফসলহানির ঘটনা ঘটেনি। এবার কৃষকদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।

‘হাওরকন্যা’ হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জকে বলা হয় বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলের রাজধানী। হাওরের ওপর নির্ভরশীল জেলার মানুষ। শুষ্ক মৌসুমে মাছ আর বর্ষার আগের বৈশাখে ফলে একমাত্র বোরো ধান। এই জেলায় এ বছর ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। প্রশাসন বলছে, ৮২ শতাংশ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কৃষকেরা বলছেন ৯০ শতাংশ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাহেদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, হাওরে এবার ফসলহানি না ঘটলে ধান থেকে ৮ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হতো।

Navigation

[0] Message Index

Go to full version