গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির মতো বাংলা বর্ষপঞ্জিতেও থাকে বারোটি মাস বা ৩৬৫ দিন। সাত দিনে হয় এক সপ্তাহ।কার আমলে, কবে থেকে প্রথম বাংলা সন গণনা শুরু হয়েছে এ নিয়ে দুটি মত প্রচলিত থাকলেও সর্বাধিক প্রচলিত মতটি অনুযায়ী মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট আকবরের হাত ধরেই এ দেশে বাংলা সনের আগমন।
সম্রাট আকবর যখন দেখলেন হিজরি সালের কারণে ফসল তোলা বা কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে, তখনই তিনি নতুন একটি বর্ষপঞ্জির চিন্তা করতে শুরু করলেন। এ চিন্তা থেকেই তিনি ইরানের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লা শিরাজিকে দায়িত্ব দেন নতুন একটি বর্ষপঞ্জি তৈরির।
তবে সম্রাট আকবরের আমলে যে বর্ষপঞ্জি তৈরি হয় তারও একটি বড় সমস্যা ছিল। এ বর্ষপঞ্জিতে মাসের প্রতিদিনের আলাদা আলাদা নাম ছিল। সপ্তাহের প্রচলন করেন সম্রাট আকবরের নাতি সম্রাট শাহজাহান।
বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যে বারোটি মাস রয়েছে, এ মাসগুলোর নাম নেওয়া হয়েছে সূর্যসিদ্ধান্ত নামক জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন একটি গ্রন্থ থেকে।
তবে নামগুলো মূলত এসেছে বিভিন্ন নক্ষত্রের নাম থেকে। যেমন- বৈশাখ নামটি এসেছে বিশাখা নামক নক্ষত্রের নামানুসারে। জ্যৈষ্ঠ এসেছে জ্যেষ্ঠা থেকে। আষাঢ় নামটির উৎস হলো উত্তরাষাঢ়া নামক নক্ষত্র। শ্রাবণ ও ভাদ্র নাম দুটি এসেছে যথাক্রমে শ্রবণা ও পূর্বভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম থেকে। অশ্বিনী নামক নক্ষত্রের নাম থেকে এসেছে আশ্বিন মাসের নাম। কৃত্তিকা থেকে এসেছে কার্তিক ও মৃগশিরা থেকে অগ্রহায়ণ। পৌষ মাসটির নাম এসেছে পুষ্যা নক্ষত্রের নাম থেকে। মঘা নক্ষত্রের নামানুসারে রাখা হয়েছে মাঘ মাসের নাম। ফাল্গুন ও চৈত্র মাস দুটির নাম এসেছে যথাক্রমে উত্তরফাল্গুনি ও চিত্রা নামক নক্ষত্রের নাম থেকে।
সম্রাট শাহজাহান সাত দিনের যে সপ্তাহের প্রচলন করেন এর বারের নামগুলোর বেশিরভাগই নেওয়া হয়েছে গ্রহের নাম থেকে। যেমন- মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি। সপ্তাহের বাকি দুটি দিনের নাম এসেছে দেবতাদের নাম থেকে। সোম বা শিব দেবতার নামানুসারে আসে সোমবার এবং রবিবার নাম এসেছে সূর্য দেবতা রবির নাম থেকে।