“ঐতিহ্যে ঘেরা কুমিল্লা!”

Author Topic: “ঐতিহ্যে ঘেরা কুমিল্লা!”  (Read 963 times)

Offline SabrinaRahman

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 333
  • Never give up because great things take time
    • View Profile
“ঐতিহ্যে ঘেরা কুমিল্লা!”

সময় নেই নেই করে বেড়ানো হয় না, মনের মাঝের সুখপাখিতা উড়তে চায়, ঘুরে বেড়ানোর প্রবল ইচ্ছেটুকু সুপ্ত  থাকে,  সময়ের কাছে জিম্মি। আর এমন ভ্রমণপিপাসুরা  ঘুরে যেতে পারেন সাপ্তাহিক ছুটির দিনটিতে।
প্রতিবছর প্রচুর সংখ্যক ভ্রমণপিপাসুরা ঘুরতে আসে কুমিল্লায়। এখানে রয়েছে বহু সংখ্যক দর্শণীয় পর্যটক আকর্ষণ।
দর্শণীয় স্থান সমূহঃ

১। ওয়ার সেমেট্রি, ২। রুপসাগর, ৩। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ৪। রাণীর বাংলো পাহাড়,

৫। ধর্মসাগর ও সবুজ অরণ্য পার্ক , ৬। বিনোদন কেন্দ্র ফান টাউন, ৭। ইকোপার্ক, ৮। শাহ সুজা মসজিদ  ৯। বার্ড,

১০। ময়নামতি জাদুঘর, ১১। শালবন বিহার, ১২। ইটখোড়া মুড়া, ১৩। ময়নামতি লালমাই লেকল্যান্ড,

১৪। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্লুওয়াটার পার্ক, ১৫। গোমতী নদীরপাড় ইত্যাদি।

কি দেখবেন ও কিভাবে যাবেনঃ অবশ্যই সকাল ৭ টার মধ্যে বেড়িয়ে পরেনঃ

ঢাকা থেকে বাসে আসলে
ঢাকা যাত্রাবাড়ি থেকেএশিয়া ট্রান্সপোর্ট, এশিয়া লাইন বা তিশা ট্রান্সপোর্ট  (এসি,নন-এসি দুটুই আছে), কমলাপুর থেকে রয়েল কোচ এয়ার কন্ডিশেন করে আসতে পারেন । রয়েল কোচ অনেক কমফোর্টেবল কিন্তু স্লো। যেকোনটিতে ঊঠে পড়ুন, আসার সময় দেখবেন বুড়িগঙ্গা ব্রিজ, মেঘনা ব্রিজ, দাউদকান্দি ব্রিজ আর দুপাশের রাস্তায় সকালের সুর্যিমামার আলোরশ্মি আপনাকে বিমহিত করবেই । আপনি প্রকৃতিপ্রেমি বিদায় নয়ন জুড়ানোর জন্য অন্য কিছু প্রয়োজন হবে না।। দেখতে দেখতে চলে আসবেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এসে নেমে যাবেন। ভাড়া নেবে ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত। ২থেকে ২.৫ ঘন্টা সময় লাগবে।
চট্রগ্রাম থেকে বাসে আসলে
সৌদিয়া ট্রান্সপোর্টে (এসি,নন-এসি) চড়ে আসবেন কুমিল্লার পাদুয়ার বাজার বিশ্বরোড দিয়ে জাঙ্গালিয়া নেমে যাবে, ভাড়া নেবে ২০০-২৫০ টাকা। ২.৫থেকে ৩ ঘন্টা সময় লাগবে। চট্রগ্রাম বাসীদের কুমিল্লা-চট্রগ্রামে রোডের আশে পাশের দৃশ্য বর্ণনা করে দিতে হবে না, অপূর্ব সুন্দর এই পথের দু দিক। যাই হওক, জাঙ্গালিয়া নেমে চলে আসবেন টমছমব্রিজ অটুতে করে ৫টাকা নিবে।। আপনারা যাবেন এই ক্রমানুসারেঃ ফান টাউন, ইকোপার্ক, ধর্মসাগর ও সবুজ আরন্য পার্ক, গোমতী নদীরপাড়। নিচের বর্ণানা অনুসারে।
ট্রেনে করে আসলে
কুমিল্লা স্টেশন আসতে পারবেন ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম, চাঁদপুর, নোয়াখালী ইত্যাদি স্থান থেকে, কুমিল্লা নেমে চলে আসবেন অটো-রিক্সা বা  রিকশা করে কান্দিরপাড়, তার পর যাবেন নিচের বর্ণনা অনুসারে ভাড়া নিবে ১০ টাকা প্রতিজন। ট্রেন ভাড়া সম্পর্কে রেলওয়ে স্টেশনের নিজস্ব ওয়েব সাইট হতে জেনে নেবেন।
১। ওয়ার সেমেট্রিঃ

১৯৪১-১৯৪৫ সালের ২য় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ৭৩৭ জন সৈনিকের সমাধি ক্ষেত্র ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট, সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত। সর্ব সাধারনের জন্য উন্মুক্ত এই স্থানটি নয়নাবিরাম। সবুজ বনানী আর ফলে ফুলে ভরা বাগানও বিশাল আকারের স্তম্ভ। আচর্য ও লক্ষণীয়  বিষয় এই যে, বেশির ভাগ সৈনিকের বয়স ছিল ২০ থেকে ২২ বছর। জীবনের শুরুটা যখন ঠিক তখনই যুদ্ধে মহীয়ান বীর সৈনিক।
যাবেন যেভাবেঃ ঢাকা থেকে আসলে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট নেমে দেখবেন তিন রাস্তার মোড়, এই মোড়ের দক্ষিনে সুপার মার্কেট এর বিপরীত (উত্তর) দিকের রাস্তা ধরে অর্থ্যাৎ সিলেটগামী রোডে ১০ মিনিটের মত হাঠলে পৌঁছে যাবেন ইংরেজ কররস্থান (এখানকার লোকজনের কাছে এই নামে পরিচিত) বা ওয়ার সিমেন্ট্রি। ক্যান্টনমেন্ট নেমে লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেই দেখিয়ে দেবে। অটো-রিক্সা করে গেলে প্রতিজন ৫ টাকা করে নিবে।

কুমিল্লা কান্দির পাড় থেকে আসলেঃ সিএনজি করে শাসনগাছা (ভাড়া ১০ টাকা), শাসনগাছা থেকে মাইক্রোবাস বা লেগুনা করে ক্যান্টনমেন্ট (ভাড়া ১০ টাকা) সরাসরি কান্দিরপাড় হতে যাওয়া যাবে না, পার্সোনাল গাড়ী ব্যতীত।

২।  রুপসাগরঃ

এই স্থানটা সেনাবাহিনীর নিজস্ব নির্মাণ, খুব সুন্দর একটা জায়গা, বিকেল বেলা দেখতে বেশি ভাল লাগে, আগে দেখলেও সমস্যা নেই খারাপ লাগবে না ।
যাবেন যেভাবেঃ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট নেমে দেখবেন তিন রাস্তার মোড়, এখান হতে পশ্চিম দিকের রাস্তা বা ঢাকা দিকের রাস্তা ধরে ১০ মিনিট হেঠে যাবেন নাজিরা বাজার, সেখান থেকে সেনাবাহীনি চেক আপ পোস্ট এর ভিতর দিয়ে বা আর একটু সামনে গেলে দক্ষিন দিকের রাস্তা ধরে এগুলে পৌঁছে যাবেন , ৫ মিনিট লাগবে।। লেগুনায় গেলে নাজিরা বাজার নামিয়ে দেবে ৫ টাকা নিবে। বলে দিবেন যেন নাজিরা বাজার নামায়। প্রয়োজনে লোকজের সাহায্য নিয়ে যেতে পারবেন।।

৩। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরঃ

এখানে কুমিল্লা সেক্টর সহ মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস সম্বলিত জাদুঘর রয়েছে, এসেছেন যেহেতু দেখে যাবেন অবশ্যই।
যাবেন যেভাবেঃ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট নেমে দেখবেন তিন রাস্তার মোড়ে সেনাবাহিনী জামে মসজিদ, এর পাশের সেনা বাহিনী চেক পোস্ট এর সামান্য ভিতরে এই জাদুঘরটি।

৪। রাণীর বাংলো পাহাড়ঃ

এখানে ময়নামতি পাহাড়ের উপর রানীর বাংলোটির অবস্থান, এখন এই স্থানের তেমন জনপ্রিয়তা নেই, তারপর ও সময় নিয়ে ঘুরতে আসলে দেখে যেতে পারেন, পাশে আছে রেশম উন্নয়ন কেন্দ্র, দেখে যেতে পারের কেমন হয় রেশম গাছ কিভাবে তৈরি হয় রেশমি কাপড়ের সুতা।
যাবেন যেভাবেঃ ঢাকা থেকে আসলে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট নেমে দেখবেন তিন রাস্তার মোড়, এই মোড়ের দক্ষিনে সুপার মার্কেট এর বিপরীত দিকের রাস্তা ধরে অর্থ্যাৎ সিলেটগামী রোডে ইংরেজ কবরস্থান দেখে সি এন জি বা অটো-রিকশা করে, ময়নামতি পাহাড় বললে নামিয়ে দিবে । জন প্রতি ভাড়া ১০ টাকা বা ৫ টাকা করে নিবে।

৫। ধর্মসাগর ও সবুজ অরণ্য পার্কঃ

ত্রিপুরা রাজ্যের অধিপতি মহারাজ ধর্মানিক্য ১৪৫৮ সালে জনগনের পানির সুবিধার জন্য এ দিঘী খনন করেন। দিঘীটির এক পাশে তম্রালিপির পাঠ আছে ফলকে। বিস্রামের জন্য রয়েছে বেদি যা অবকাশ নামে পরিচিত। দিঘিটির বাম পাশে রয়েছে ড.আখতার হামিদ খানের বাংলো যা রাণীর কুটির নামে পরিচিত। এছাড়া ও রয়েছে যার অবদান বাংলা আজ বাংলা নামে পরিচিত এমন কৃতী সন্তান ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের বাড়ি, বিপ্লবী অতীন্দ্র মোহন সেনের বাড়ি এবং রয়েছে নজরুল ইসলামের কুমিল্লা জীবনের অনেক স্বাক্ষর। বলা যায় শিক্ষা  শিল্পসাহিত্য সংস্কৃতির পাদপিঠে কুমিল্লা প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ করেছে। কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে যেতে যেতে অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্যের মুখমুখি হবেন আপনি।।
কান্দিরপাড় আসবেন যেভাবেঃ জাঙ্গালিয়া থেকে উত্তর দিকে কান্দিরপাড় ১০ টাকা বা টমছম ব্রিজ থেকে উওর দিকে সি এন জিতে ৫ টাকা। । ক্যান্টনমেন্ট থেকে শাসনগাছা ১০ টাকা লেগুনা। শাসনগাছা থেকে সি এন জি বা রিক্সা করে কান্দিরপাড় ১০ টাকা।

যেভাবে যাবেনঃ  কুমিল্লা কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর থেকে বাহার মার্কেটের সামনে থেকে ৩মিনিট পশিচম দিকে হাটলে পৌঁছে যাবেন ট্রাস্ট ব্যাংকের সামনে আর একটু সামনে গেলেই পাবেন মহিলা মহাবিশ্ববিদ্যালয় কলেজ গেইট, এর ভিতর দিয়ে একটু আগালেই ধর্মসাগর। এর পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাবেন পূর্ব পাশে অবকাশের সামনে, ওখান থেকে আর একটু এগুলেই সবুজ আরন্যের নতুন সাঁজ আপনার মনকে আনন্দলিত কররে, কুমিল্লা বাসীদের অবসর সময়টার ক্লান্তি দূর করার জন্য তৈরি করা হয়েছে এই মনঃমুগ্ধকর স্থানটি। এর ভিতর থেকেই দেখতে পাবেন রানীর কুটির ও নজরুল এভিনিউ। এখান থেকে সোজা পূর্ব দিকে হাঁটতে থাকলে দেখবেন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদ্গাহ, ঈদ্গাহ চৌমুনী উঠে দেখতে পারবেন নজরুল একাডেমি। চৌমুহনী থেকে দক্ষিন দিকে হাঠতে থাকলে আবার কান্দির পার ২য় চৌমুনী আসবেন, এখান থেকে সোজা দক্ষিন দিকে গেলে ভিক্টোরিয়া কলেজ ক্যাম্পাসে আসবেন, এর পিছনের দিকে আছে নজরুল ইসলাম স্মৃতিস্থাপক ও শহীদ মিনার। ঘুরে। আবার পূবালী চত্বর এসে , দক্ষিন দিকের রাস্তা গেছে টমছম ব্রীজে, পূবালীব্যাংকের পাশের পশ্চিমদিকের রাস্তা গেছে ধর্মপুর ভিক্টোরিয়া ডিগ্রি কলেজ (ভাড়া ১০ টাকা), সেখানে দেখবেন ক্যাম্পাসের সৌন্ধর্য্য, আরো দেখবেন বঙ্গবন্ধু মোড়ালটি। এখানথেকে যাবেন দৌলতপুর ৫ টাকা। দৌলতপুর থেকে যাওয়া যাবে কোটবাড়ি, দক্ষিন দিকে সিএনজি করে যাবেন ১৫ টাকা প্রতিজন। পূব দিকের রাস্তাটি গেছে টমছম ব্রীজ।

৬। বিনোদন কেন্দ্র ফান টাউনঃ

এই বিনোদন কেন্দ্রটি ২০১৬ সাল থেকে চালু হয়েছে, ছোটদের জন্য সকল প্রকার বিনোদন ব্যবস্থা আছে, এখানে রয়েছে 15D  সিনেমা হল আরো  অনেক অনেক রাইডের সমারহ এবং কৃতিম ঝর্ণা সহ অনেক কিছুই এই বিনোদন কেন্দ্রের উপস্থিতি জানান দেয়। টিকেট নিয়ে এখানে প্রবেশ করতে হয়। টিকেট মূল্য ৫০-১০০ টাকা হবে, প্রতিটি রাইডের মুল্য ৫০ টাকা।
যেভাবে যাবেনঃ কুমিল্লা টমছমব্রিজ থেকে  পূর্ব দিকে অটো-রিকশা করে কুমিল্লা এয়ারপোর্ট রোড। ফান টাউন বললেই নামিয়ে দেবে। ভাড়া নিবে ১০ টাকা।

৭। ইকোপার্কঃ

এই স্থানটি প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য জনপ্রিয়। অপূর্ব রোমান্টিক এই স্থানটিতে প্রেমিক-প্রেমিকারা নিবির পরিবেশে সময় কাটানো রোমাঞ্চকর বটে। আপনিও দেখে আসতে পারেন এই স্থানটি।
যেভাবে যাবেনঃ কুমিল্লা টমছমব্রিজ থেকে পূর্ব দিকে অটো-রিকশা করে কুমিল্লা এয়ারপোর্ট রোড ফান টাউনের সামনে দিয়ে যেতে হয়।, অটোরিক্সা নিয়ে গেলে ১৫ টাকা নিবে প্রতিজন।

৮। শাহ সুজা মসজিদঃ

শাহ সুজা মসজিদ ৩৫২ বছর ধরে কুমিল্লা জেলায় স্ব মহিমায় টিকে আছে। এই মসজিদ উপমহাদেশের প্রাচীন মসজিদ গুলোর মধ্যে অন্যতম। মসজিদটি মূগলটুলিতে অবস্থিত। ১৬৫৮ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। মসজিদটির আয়তন খুব একটা বড় না হলে ও এর কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সার্বিক অবয়ব আভিজাত্যের প্রতীক বহন করে। স্রষ্টার প্রতি ভক্তি, ধর্ম অনুরাগ ও রুচিশীলতার প্রমান বহন করে এই মসজিদটি। বর্তমানে মসজিদটির মাঝে কোন শিলালিপি নেই।
কিভাবে যাবেনঃ কুমিল্লা কান্দিরপাড় হতে আটো-রিকশা বা রিক্সা করে যেতে পারবেন। শাহ সুজা মসজিদ বললে সে কেউ দেখিয়ে দিবে। ওখান থেকে গোমতী নদীরপাড় যাওয়া যায়।

৯। বার্ডঃ

এখানে ঘুরতে আসা অনেক পর্যটকই বার্ড প্রতিষ্ঠানটির নাম শুনলে ভাবেন এখানে অনেক অনেক পাখি থাকবে। যেমন নাম তেমনটা হওয়া উচিত। এর আশা দুইই। ছায়া সুনিবিড়ি মমতা ঘেরা রাস্তা। দু’পাশে নানা রকমের নানা রংয়ের ফুল ও ফলের বাগান। পাখির কূজন আর ফুলের গন্ধে চারদিক ঘিরে রেখেছে বার্ডকে। কিস্তর সবুজের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে কৃষ্ণচূড়া আর রঙ্গন। এ অপরূপভার গড়ে তোলেন ড. আখতার হামিদ খান। বার্ড মূলত বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত মানুষের প্রশিক্ষন একাডেমি।
যেভাবে যাবেনঃ কুমিল্লা টমছমব্রিজ চৌমুহনী হতে পশ্চিম দিকের রাস্তায় দাঁড়ানো সিএনজি যোগে কোটবাড়ি যেতে পারবেন। ভাড়া ২০ টাকা। দৌলতপুর হয়ে যাবে। সিএনজি থেকে নেমেই দেখতে পাবেন তাক লাগানো বার্ডের গেট। তবে বার্ডের ভিতরে ঢুকতে দিবে না কারও রেফারেন্স ছাড়া। অবশ্য জাতীয় দিবসগুলোতে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। বার্ডের গেট দেখে সোজা পশ্চিম দিকে হাঠতে থাকুন,  সাইনবোর্ডই আপনাকে জানিয়ে দিবে ইটাখোলা মুড়ার কথা। সেখানে একটা প্রাচীন বিহার আছে। সাথে ধ্যানমগ্ন এক মূর্তি। দেখা শেষ করে আবার কোটবাড়ি বাজারে ফিরে আসুন।

১০। ময়নামতি জাদুঘরঃ

বাংলাদেশে বেশ কয়টি জাদুঘর আছে তার মধ্যে ময়নামতি উল্লেখযোগ্য। এ জাদুঘরে স্থান পেয়েছে (খ্রি : অষ্টম শতাব্দীর) শ্রী ভবদেব মহাবিহার, কোটিলা মুড়া, চাপত্র মুড়া, রুপবান মুড়া, ইটাখোলামুড়া আনন্দবিহার, রানীর বাংলো ও ভোজ রাঙার বাড়ি ইত্যাদি থেকে উদ্ধারকৃত মূল্যবান পুরাবস্ত। জাদুঘরটি আকারে নির্মিত এবং পাশে বিশ্রাগার আছে ও ফুলের বাগান দিয়ে ঘেরা সবুজে সবুজে।
যেভাবে যাবেনঃ শালবন বিহার থেকে বের হয়ে কাউকে বললেই দেখিয়ে দেবে, টিকেট মুল্য ১০ টাকা।

১১। শালবন বিহারঃ

শালবন বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। কুমিল্লা জেলার লালমাই-ময়নামতি প্রত্নস্থলের অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি এই বৌদ্ধ বিহার। এতে ৭ম-১২শ শতকের প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় যে খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। আকারে এটি চৌকো। শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের চার দিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চার দিকের বেষ্টনী দেয়াল পিঠ করে নির্মিত। বিহারে ঢোকা বা বের হওয়ার মাত্র একটাই পথ ছিল। এ পথ বা দরজাটি উত্তর ব্লকের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মাঝে ১.৫ মিটার চওড়া দেয়াল রয়েছে। বিহার অঙ্গনের ঠিক মাঝে ছিল কেন্দ্রীয় মন্দির। বিহারে সর্বমোট ১৫৫টি কক্ষ আছে। কক্ষের সামনে ৮.৫ ফুট চওড়া টানা বারান্দা ও তার শেষ প্রান্তে রয়েছে অনুচ্চ দেয়াল। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে তিনটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। কুলুঙ্গিতে দেবদেবী, তেলের প্রদীপ ইত্যাদি রাখা হতো। এই কক্ষগুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকতেন। সেখানে বিদ্যাশিক্ষা ও ধর্মচর্চা করতেন। বিহারের বাইরে প্রবেশ দ্বারের পাশে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি হলঘর রয়েছে। চার দিকে দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত সে হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের মাপ ১০ মিটার গুণন ২০ মিটার। হলঘরের চার দিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রৌঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে। এগুলো বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে ।
যেভাবে যাবেনঃ কোটবাড়ি থেকে সিএনজি বা অটো-রিকশাকে বললেই বিহারে নিয়ে যাবে। এরপর টিকেট কেটে ঢুকে পরুন প্রাচীন ঐতিহ্যে ঘেরা শালবন বিহারে। ২০ টাকা প্রবেশ ফি। বিহারের চারপাশের কৃত্রিম পরিবেশটাও আপনাকে মুগ্ধ করবে।

১২। ইটখোলা মড়াঃ

উত্তর পশ্চিম কালিবাজার সড়কের সংলগ্ন উত্তর কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত। পাশাপাশি দুটি প্রাচীন প্রত্নস্থাপনার ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এগুলো একটি মন্দির ও অপরটি বিহার। আবিস্কৃত পুরাবস্তুগুলোর মধ্যে চুনবালিজাত উপকরনে তৈরি একটি বড় আকারে লোকত্তর বৃদ্ধ (আবক্ষ অংশ ব্যতীত) আজও বিদ্যমান। ইটাখোলা মুড়ার দক্ষিনে কালিবাজার সড়কের ওপারেও রুপবান মুড়া। টিলাটি সড়ক পথ থেকে ১১. মি উঁচুতে। তিনটি বসতি আমলের অস্তিত্ব রয়েছে এই শৈলিতে। রুপবান মুড়া ক্রুসাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত। পেছনের অংশটি মূর্তিকোঠা এবং সামনেরটি মণ্ডপ। মূর্তির চারদিকে ঘোরানো পথ আছে। প্রত্মমানের বিচারে মন্দির ও বিহারটি খ্রি. অষ্টম শতাব্দীর নির্মিত যা আজও কালের সাক্ষী।
১৩। ময়নামতি লালমাই লেকল্যান্ড

কুমিল্লার ময়নামতি-লালমাইয়ে স্থানটির অবস্থান। পাহাড়ের উপরের বিশাল অংশ নিয়ে এই লেকল্যান্ড নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক এই স্থানটি কে ভ্রমণ উপযোগী করা হয়েছে। পাহাড়ের উপর ট্রেন রাইড চড়ে এই পাহাড়টি ঘুরে দেখা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিকৃতি এই খানে স্থান পেয়েছে। যা আপনাকে মুগ্ধ করবে। ভিন্ন ধর্মী করে তৈরি এটি।
যেভাবে যাবেনঃ কুমিল্লা পাদুয়ার বাজার বিশ্বরোড চৌমুহনীর দক্ষিণ দিকের রাস্তার পাশে দাঁড়ানো সিএনজি করে যেতে পারবেন। ভাড়া ২০-২৫ টাকা জন প্রতি।

১৪। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্লুওয়াটার পার্কঃ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কে কেন্দ্র করে ব্লুওয়াটার পার্কের অবস্থান। লালমাই পাহাড়ের ৫০ একর জায়গায় বেষ্টিত এই প্রতিষ্ঠানটি। সাথে সাথে দেখতে পারবেন পার্কটিকে ও।
যেভাবে যাবেনঃ শালবন বিহার হতে আটো-রিকশা বা সিএনজি করে বা হেঁটে হেঁটে যাওয়া যাবে। ভাড়া ৫-১০ টাকা।

১৫। গোমতী নদীরপাড়

কুমিল্লা গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত, কুমিল্লা শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। দুই পারের সংযোগস্থাপন করার জন্য তৈরি করা হয়েছে ব্রিজ! গোমতী ব্রিজ নামে খ্যাত। এই ব্রীজকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পিকনিক স্পট। মনঃমুগ্ধকর এই পরিবেশটিতে সকাল আর বিকেল বেলাটা অসাধারণ কাটবেই। গোমতী নদীর পাড়টির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পথটায় বন্ধুদের সাথে উচ্চস্বরে গান গাইতে সাইতে উল্লাস করতে আপনার অবচেতন মনে অভিমানী বন্ধুটির সাথে ও এনে দিবে বন্ধুত্বের মানে। আনন্দমুখর দিনটি শেষ সময়টা মনে রাখতেই হবে আজীবন।
যেভাবে যাবেনঃ কুমিল্লা কান্দির পাড় পূবালী চত্বর থেকে ৫০ মিটার পূর্ব দিকে গিয়ে আর একটি চৌমুহনী দেখবেন । এখান থেকে উত্তর দিকে দাঁড়িয়ে থাকা অটো-রিক্সা গুলিকে বললেই নিয়ে যাবে। জন প্রতি ১০-১৫ টাকা করে নিবে। ব্রীজটির কিছু আগে নামিয়ে দেবে, অতঃপর হেটে হেটে দেখে একই দিক দিয়ে শহরে ফিরবেন।

বাসায় ফেরার সময় প্রিয়জনের জন্য ঐতিহ্যবাহী খদ্দরের পোশাক এবং রসমলাই নিয়ে যেতে ভুলবেন না কিন্তু!”
Sabrina Rahman
Lecturer
Department of Architecture, DIU