শহরে গ্রামীণ মেলা

Author Topic: শহরে গ্রামীণ মেলা  (Read 777 times)

Offline SabrinaRahman

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 333
  • Never give up because great things take time
    • View Profile
শহরে গ্রামীণ মেলা
« on: April 24, 2017, 11:44:27 AM »
শহরে গ্রামীণ মেলা

 
বটতলায় বায়োস্কোপ। সেখানে একচোখা হয়ে ছেলে-বুড়ো বাক্সের ভেতরের ছবি দেখছেন। আর অন্য পাশে সেটা ঘোরাচ্ছেন জলিল মণ্ডল। ভেতরের দৃশ্যের সঙ্গে মিল রেখে তিনি গাইছেন, ‘আআআরে, এই বারেতে দেখেন ভালো, ঢাকা শহর সামনে আছে, শেখ মুজিবুর আইসা গেছে, ’৭১-এর যুদ্ধ হচ্ছে...।’

বায়োস্কোপ দেখে ছয় বছরের রাইয়ান বলল, ভালো। তবে এর চেয়ে ভালো ইউটিউব। প্রায় ৩০ বছর ধরে মেলায় বায়োস্কোপ দেখাচ্ছেন রাজশাহীর বাগমারার জলিল মণ্ডল। রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিবছরের মতো এবারও আয়োজন করা হয়েছে বৈশাখী মেলা। সেখানেই দেশের ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের উপকরণ নিয়ে হাজির হয়েছেন কয়েক শ বিক্রেতা। কী নেই এই মেলায়! শখের হাঁড়ি, মাটির সরা, শোলার ফুল, মাটির পুতুল, কাঠের একতারা, বাঁশের বাঁশি, নকশিকাঁথা, বাঁশ ও বেতের সামগ্রী, মোয়া, মুড়কি, বাতাসা বা মিষ্টি। মাগুরা থেকে মেলায় এসেছেন নিমাই মণ্ডল মালাকার। শোলার ফুল-পাখিসহ নানা ধরনের খেলনা তৈরি করছেন দোকানে বসে। তৈরির পরই তা বিক্রি হয় যাচ্ছে। গত বছর এই মেলাতেই সেরা কারুশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
 
মেলায় শখের হাঁড়ি আর টেপা পুতুল তৈরি করছেন মৃৎশিল্পী সঞ্জয় কুমার পাল। রোদে শুকানোর পর তাতে রং লাগিয়ে বিক্রি করছেন শিকেয় ভরে। চারটা হাঁড়ি দিয়ে সাজানো এই শিকের দাম ১০০ টাকা। চাইলে ৩০ টাকায় একটা করেও কেনা যাবে। মেলায় আছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের নাগরদোলা। হাতে ঘোরানো এই নাগরদোলায় চড়ে বড়রাও ফিরে যেতে পারেন শৈশবে। একপাশে বড় ঘর করে দেখানো হচ্ছে পুতুলনাচ। ‘হৃদয় ঝুমুর ঝুমুর পুতুলনাচ’-এর ঘরেও নানা বয়সের দর্শকদের দেখা গেল। আছে উলের বুননে তৈরি নানা ধরনের পুতুল। আঙুলে ভরে এসব পুতুল দিয়ে ছোটদের সামনে গল্প বলা সহজ হয়। পাটের জুতা, ব্যাগসহ ঘর সাজানোর পণ্য সবই আছে মেলায়। দুই সন্তানকে নিয়ে মেলায় এসেছেন পারভিন সুলতানা। বললেন, ‘ছোটবেলায় গ্রামে থাকতে বাবার সঙ্গে মেলায় যেতাম। এখানে এসে গ্রামীণ মেলার অনেক জিনিস চোখে পড়ল। ছেলেমেয়েরাও মজা পাচ্ছে। অনেক জিনিস আছে, যা ঢাকায় সাধারণত পাওয়া যায় না। তাই টুকটাক কেনাকাটাও করেছি।’
 
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) এবং বাংলা একাডেমি এই মেলার আয়োজন করেছে। ১৯৭৮ সাল থেকে বিসিক এই মেলায় আয়োজন করছে। বৈশাখের প্রথম দিন থেকে ১০ বৈশাখ পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে মেলা। এবারও মেলায় ছয়জন কারুশিল্পীকে পুরস্কার দিয়েছে বিসিক। তাদের মধ্যে কারুরত্ন পুরস্কার পেয়েছেন ঝিনাইদহের গোপেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী। এ ছাড়া কারুগৌরব পুরস্কার পেয়েছেন সুবোধ কুমার পাল, হোসনে আরা, বিউটি বেগম, শেখ মো. আমিরুল ইসলাম ও জেসমিন আক্তার।
মেলা নিয়ে বিসিকের নকশা কেন্দ্রের উপপ্রধান নকশাবিদ মনোয়ারা বেগম বলেন, হস্ত ও কারুপণ্য তৈরিতে কারিগরদের উৎসাহিত করতেই এই মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের সমাগমও ভালো। এবার ১৯০টি স্টলে নানা ধরনের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।
Sabrina Rahman
Lecturer
Department of Architecture, DIU