প্রথম দেখায় কী বলব?
দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। হোক সেটা কোনো কাজে, বন্ধুদের আড্ডায় অথবা অন্য যেকোনো অনুষ্ঠানে। জায়গাভেদে আচার-আচরণ ভিন্ন হবে অর্থাৎ একটা অনুষ্ঠানে আচরণ যেমন হবে, নিজের পেশাগত কাজে আচরণ ভিন্ন হবে। জায়গাভেদে আচরণ কেমন হবে তা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। কারণ প্রথম দেখাতেই আপনার ব্যক্তিত্ব কেমন তা ফুটে উঠবে এবং ভবিষ্যতে তা যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
প্রথমেই যেটা বিবেচনা করতে হবে আমরা কোন জায়গায় পরিচিত হতে যাচ্ছি, সেখানে আচার-আচরণ কেমন করা উচিত। যার সঙ্গে বা যাদের সঙ্গে পরিচিত হতে যাচ্ছি তাদের সামাজিক, আর্থিক ও পারিবারিক অবস্থা কেমন এবং অবশ্যই তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার উদ্দেশ্য অর্থাৎ শুধুই কি সৌজন্যমূলক পরিচিতি নাকি ভবিষ্যতেও সেটা বাড়বে।
দ্বিতীয়ত, আমরা যার সঙ্গে পরিচিত হতে যাচ্ছি বা কথা বলব, বিবেচনা করে দেখতে হবে তার আগ্রহ কতটুকু অর্থাৎ ব্যাপারটা দুই দিক থেকে আসছে কি না, সম্পর্কটা একই পর্যায়ে থাকবে কি না। একটা কথা অনেক বেশি শোনা যায় তা হলো, আমরা খুব তাড়াতাড়ি ঘনিষ্ঠ হয়ে যাই। এটার ভালো-মন্দ দুটো দিকই আছে। কারণ, হয়তো দেখা যায় এই ঘনিষ্ঠ হওয়ার ব্যাপার প্রথম পরিচয়েই অনেকের ভালো লাগতে নাও পারে। যেমন জনৈক এক ব্যক্তি তার একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন। কিছুদিন আগে তিনি দেশের বাইরে গিয়েছিলেন সেখানের পরিবেশ নতুন হওয়ায় সেখানকার একজন ব্যক্তি তাঁকে সাহায্য করলেন। এমনকি তাঁকে থাকার জায়গাও দেখিয়ে দিলেন। তাঁর সঙ্গে পরিচয় কাজের মাধ্যমে। জনৈক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে যখন আরও ঘনিষ্ঠ হতে চাইলেন তখন তিনি এক বাক্যে না করলেন। তিনি এ ক্ষেত্রে তাঁর সম্পর্কটা পেশাগত অর্থাৎ প্রফেশনাল পর্যন্ত রাখতে চেয়েছিলেন। এ ব্যাপারে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিদিন কোনো না কোনো মানুষের সঙ্গে পরিচিত হই। কিন্তু সম্পর্কটা কোন পর্যায়ের হবে, সেটা বিবেচনা করেই এগোতে হবে। সব জায়গায় সব রকম আচরণ মানায় কি না তা বুঝতে হবে, তবে আন্তরিকতা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে।
একজন ব্যক্তির সঙ্গে যখন প্রথম পরিচয় হবে তখন ‘পার্সোনাল স্পেস’-এর ব্যাপারটা বিশেষভাবে মাথায় রাখতে হবে। প্রথম পরিচয়ে এমন কিছু জিজ্ঞেস করা বা বলা যাবে না যা খারাপ শোনায় কিংবা যা দৃষ্টিকটু। এতে করে সম্পর্কে ভবিষ্যতে অধঃপতন ঘটতে পারে। এমন কোনো প্রশ্ন করা উচিত নয় প্রথম দেখায় যেটা ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে। তার কথা বলায় আগ্রহ আছে কি না, সেটাও খেয়াল করতে হবে।
কথায় আছে, প্রথম দেখায় ছেলেদের বেতন এবং মেয়েদের বয়স জিজ্ঞাসা করা উচিত নয়। আরও অনেক ব্যাপার আছে যা প্রথম দেখায় জিজ্ঞাসা করা উচিত নয়। যেমন:
১. প্রথম পরিচয়ে কোনো ব্যক্তির বিবাহিত অবস্থা নিয়ে কখনো কথা বলা উচিত না বা কোনো প্রশ্ন করা উচিত নয়।
২. কারও আর্থিক অবস্থান কেমন জিজ্ঞাসা করা উচিত নয়।
৩. আমরা প্রায়ই না বুঝে জিজ্ঞাসা করে ফেলি বাচ্চা আছে কি না? কতজন? না থাকলেও অনেক সময় জিজ্ঞাসা করি কেন নেই। এসব প্রশ্ন করাতে যে কেউ অনেক বেশি বিব্রত বোধ করতে পারে।
৪. কারও স্বামী, ছেলেমেয়ে বা সে নিজে কী করছে, কোনো পেশায় আছে কি না, জানতে চাওয়া উচিত নয়।
৫. অন্যকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। আপনি যদি কারও সঙ্গে পরিচয়ের পর ক্রমাগত কথা বলতে থাকেন তবে সেই ব্যক্তি মুখে কিছু না বললেও প্রচণ্ড বিরক্ত হবে এবং এড়িয়ে চলতে চাইবে।
৬. কারও সঙ্গে পরিচয়ের সময় তার ধর্মীয় অবস্থান বা পরিচয় কী জানতে চাওয়া উচিত নয়।
৭. কোনো হোটেল বা রেস্তোরাঁয় দেখা হলে খাবার অর্ডার করা নিয়ে তাড়াহুড়া করবেন না।
৮. কারও সঙ্গে প্রথম দেখা হলে বা পরিচয়ের সময় ক্রমাগত মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকা ঠিক নয়, এতে অপর পক্ষ বিরক্ত হতে পারে।
৯. পেশাগত কারণে পরিচয়ে কোনো রকম ব্যক্তিগত প্রশ্ন না করে বরং সম্পর্কটা প্রফেশনাল রাখা ভালো, তবে সেটা নির্ভর করে আন্তরিকতা কেমন তার ওপর।
১০. প্রথম পরিচয়ে কারও শরীর নিয়ে অর্থাৎ সে মোটা বা চিকন, ছবিতে এক রকম সামনে আরেক রকম, এসব কথা বলা উচিত নয়।
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, আইএনসি