৫ গাড়ির যন্ত্রাংশ দিয়ে লিমোজিন!
বিয়েতে চমক দেখাতে কে না চায়! তাই ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা শহরে হাজারো সমস্যা থাকলেও, বিয়েবাড়িগুলোতে বিলাসবহুল গাড়ির বেশ চাহিদা আছে। তা মেটাতে শেষমেশ একদল স্থানীয় কারিগর তৈরি করে ফেললেন আস্ত লিমোজিন। আর তা বানাতে যন্ত্রাংশ নেওয়া হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মডেলের পাঁচটি গাড়ি থেকে!
এ ভাবনা প্রথম আসে সালামা আল-ওদির মাথায়। বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করেন তিনি। বিয়ের অনুষ্ঠানকে আরও জাঁকজমক করে তুলতে মক্কেলদের লিমোজিন গাড়িতে ওঠার অভিজ্ঞতা দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দশ বছর ধরে অবরুদ্ধ গাজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহে যেখানে অহরহ অভাব, সেখানে লিমোজিন গাড়ির আমদানি প্রায় অসম্ভব কাজ। তবুও চেষ্টা করেছিলেন সালামা। কিন্তু পারেননি।
গাজায় ঢোকা ও বের হওয়ার রাস্তাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। সেদিক দিয়ে গাড়ি আনা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে মিসরের সঙ্গে থাকা সীমান্ত পথও কয়েক বছর ধরেই বন্ধ রয়েছে।
তাই বলে দমে যাননি সালামা। নিজের ছোট্ট গ্যারেজেই একদল কারিগর নিয়ে কাজ শুরু করে দেন তিনি। পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন মডেলের
গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ দিয়ে বানিয়ে ফেলেন সাদা রঙের লিমোজিন গাড়ি। এ কাজে শ্রম দিয়েছেন মোট ৩০ জন। লিমোজিনের নকশা ও তৈরির পরিকল্পনা নিজেরাই করেছেন তাঁরা। এতে খরচ হয়েছে মোট ২১ হাজার ডলার।
সালামা বলেন, ‘লিমোজিন গাড়িটি তৈরি করতে আমাদের প্রায় তিন মাস সময় লেগেছে। এর ভেতরের অলংকরণের সম্পূর্ণ কাজ গাজাতেই করা হয়েছে। হাতে আঁকা নকশাও রয়েছে এতে।’
অবশ্য তৈরি করা গাড়িটি নামে লিমোজিন হলেও, দেখতে অন্য রকম। গাড়ি ও মহাকাশযানের মিশেল রয়েছে। এর ছাদ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ উঁচু ও গোলাকার।
এখনো টুকটাক কিছু কাজ বাকি। সালামার আশা, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এই লিমোজিন রাস্তায় চলার উপযোগী হয়ে উঠবে। সেদিনই এক বিয়েবাড়িতে যাওয়ার কাজও পেয়ে গেছেন তিনি।
সালামা আল-ওদি বলেন, তরুণ দম্পতিদের জন্য কম দামে এই লিমোজিন ভাড়া দেবেন তিনি। কারণ দরিদ্রতা ও চরম বেকারত্বের গাজা শহরে প্রায় সময়ই অর্থের অভাবে পিছিয়ে যায় বিয়ের অনুষ্ঠান।
এই গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে শহরের বাসিন্দাদের একটি বার্তাও দিতে চান সালামা। তাঁর কথায়, ‘ইসরায়েলের অবরোধের মুখে এ শহরের মানুষের সৃষ্টিশীলতা নষ্ট হয়ে গেলে চলবে না। উদ্ভাবনের মাধ্যমেই এর জবাব দিতে হবে।’