মুসলমানদের নামের শেষে “খান” বংশগত না কি অন্য কারন !!!

Author Topic: মুসলমানদের নামের শেষে “খান” বংশগত না কি অন্য কারন !!!  (Read 2619 times)

Offline shyful

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 219
    • View Profile
দ্বাদশ এবং ত্রয়োদশ শতাব্দীতে পৃথিবী বিখ্যাত বিজেতা চেঙ্গিস খান তাঁর বিজয় পতাকা পূর্বের চীন হতে পশ্চিমের পোলান্ড পর্যন্ত ওড়ান। আমরা অনেকেই জানি না যে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠিত হয়েছিল চেঙ্গিস খানের গড়ে তোলা বা নির্ধারিত সেই সম্রাজ্য অনুসারে। মঙ্গোলদের রাজা বা গোত্র প্রধানকে বলা হত “খান”। চেঙ্গিস খানের আসল নাম “ তেমুজিন খান”। মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর বাবাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। নিয়ম অনুসারে বাবার মৃত্যুর পর উনিই হবেন তাঁর গোত্র প্রধান। আর এ কারনেই তাঁর বেড়ে ওঠার আগেই তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু প্রত্যেকবারই ভাগ্যক্রমে উনি বেঁচে যান। উনি ছোট বেলা থেকেই শত্রু পক্ষের দ্বারা চরম নির্যাতিত হন। খুব ছোট বেলা থেকেই মার খেতে খেতে বেড়ে ওঠেন। কিন্তু যার ভাগ্য লেখা আছে পৃথিবী বিখ্যাত বিজেতা হিসেবে তাকে কে দাবীয়ে রাখতে পারে? এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন চেঙ্গিস খান খুব ছোট বেলা থেকে এতোই বেশি নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হয়েছিলেন যে তাঁর মানব জাতির প্রতি কিছুটা ঘৃনা ছিল। উনি মঙ্গোলদের সম্রাট হবার পর যে সব রাজ্য দ্বারা লাঞ্ছিত হন সে সব রাজ্যকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেন।

মঙ্গোলরা ছিল চরম বর্বর, যাযাবর জাতি । তাদের ছিল না কোন কেন্দ্রীয় শাসন। এখনও তারা ঠিক আগের মতই যাযাবর জীবন যাপন করে। চেঙ্গিস খান চেয়েছিলেন সমগ্র মঙ্গোল জাতিকে এক পতাকা তলে নিয়ে আসতে।

মঙ্গোলদের সম্রাট হবার পর “ তেমুজিন খান” “চেঙ্গিস খান” নাম ধারন করে পৃথিবী বিজয়ে নামেন। তাঁর সম্রাজ্য ছিল চতুর্ভুজ আকৃতির। তিনি পূর্বে চীন থেকে শুরু করে পশ্চিমে পোল্যান্ড পর্যন্ত চতুর্ভুজ আকৃতি করে তাঁর সম্রাজ্য বিস্তার করেন। তাঁর মৃত্যুর পূর্বে সম্রাজ্যের বিশালতা এবং ব্যপকতা এতই বেড়ে যায় যে মধ্য এশিয়া তথা মঙ্গোলিয়া থেকে এতো বড় সম্রাজ্য নিয়ন্ত্রন করা কঠিন হয়ে যায়। তাই তিনি তাঁর সম্রাজ্যকে চারটি ভাগে ভাগ করে তাঁর চার দৌহিত্রের মধ্যে ভাগ করে দেন।

এই চারটি সম্রাজ্যের একটির নাম ছিল গোল্ডেন হোরড। এই গোল্ডেন হোরড অংশের সম্রাট ছিলেন বারক খান। এক সময় বারক খান পোল্যান্ড বিজয় করে তাঁর সম্রাজ্যে ফিরছিলেন। সে সময় উনি ইরাকে আশ্রয় নেন। তাঁর ইরাকে অবস্থান কালে এক দল মুসলিম ক্যারাভেন তাঁর সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাদের ডেকে তাদের ধর্ম, ধর্ম বিশ্বাস, তাদের প্রভু এবং পরজগত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। ক্যারাভেনের সুফি সাধকদের উত্তরে উনি প্রচন্ড সুন্তুষ্ট হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন এবং নিজেকে ইসলামের সেবায় নিয়োজিত করেন এবং ধীরে ধীরে তাঁর সম্রাজ্যের অধিকাংশ লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। পরবর্তীতে মঙ্গোলদের বাকি তিনটি অংশের খানদের(রাজাদের) তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে প্রলুব্ধ করেন এবং তারাও ইসলাম গ্রহন করেন। ধীরে ধীরে সমগ্র মধ্য এশিয়াতে ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে যায়, সমগ্র মধ্য এশিয়া চলে আসে ইসলামের ছায়াতলে।

মঙ্গোলদের আরেক নেতা হালাকু খান বাগদাদ আক্রমন করেন, পুরো বাগদাদ নগরী ধ্বংস করে দেন এবং মিশরের দিকে অগ্রসর হন। এ খবর বারক খানের কাছে পৌছালে বারক খান হালাকু খানকে প্রতিহত করেন। এর কিছুদিন পর যখন মঙ্গোলদের সম্রাট(Khan of all Khans) নির্বাচনের সময় হয় তখন হালাকু খান মঙ্গোলিয়ায় ফিরে যান যার কারনে সে সময়ের মিশরের ফাতেমিয়া খিলাফত ধংশের হাত থেকে রক্ষা পায়।

খোদ মঙ্গোলিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহন না করলেও তাদের অন্যান্য রাজ্য এবং অন্যান্য বংশধরেরা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। যার কারনে মঙ্গোল বংশদ্ভুত মুসলমানদের নামের শেষে “খান” বংশগত নামটি টিকে থাকে। মধ্য এশিয়াতে চেঙ্গিস খানের এতোটাই প্রভাব ছিল যে মধ্য এশিয়ার মানুষেরা নিজেদের চেঙ্গিস খানের বংশধর হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন। পরবর্তীতে মধ্য এশিয়ার মুসলমানরা পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে যায় যার কারনে মুসলমানদের নামের সাথে “খান” বংশগত নামটি খুব প্রচলিত হয়।

ভারতীয় মুসলমানদের নামের পেছনে “খান” যুক্ত হবার কারন হচ্ছে মুঘল শাসনামল। কারন মুঘল সম্রাট বারর ছিলেন জাতিতে চেঙ্গিস খান এবং তৈমুর লং এর বংশধর। আর মুঘল শব্দটি এসেছে মঙ্গোল শব্দ থেকে। ভারতীয় মুসলমানরা অধিকাংশই আফগান, পশতুন, কাজাখ এবং তুর্কি বংশদ্ভুত যার কারনে পূর্ব পুরুষদের নামের শেষের “খান” তারাও গ্রহন করেছেন। আর খোদ ভারতীয় যারা মুসলিম ধর্ম গ্রহন করেছেন তারাও গর্বের সাথে তাদের নামের শেষে “খান” বংশগত নামটি গ্রহন করেছেন।এই হচ্ছে ইতিহাস বিখ্যাত মঙ্গোলদের ইতিহাস, মঙ্গোলদের ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার কারন এবং মুসলমানদের নামের শেষে “খান” বংশগত নাম থাকার কারন।
সংগ্রহীত শুদু মাত্র জ্ঞান চর্চার উদ্দেশে ঃ  https://noyonislam25.wordpress.com/2017/05/07/%E0%A6%AE%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A6%BF-%E0%A6%96%E0%A6%BE/
With best regards and Thanks in advance,

S.M.Saiful Haque