বাংলাদেশ কি পারবে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হতে?

Author Topic: বাংলাদেশ কি পারবে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হতে?  (Read 976 times)

Offline Md. Alamgir Hossan

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 935
  • Test
    • View Profile
বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান গতিপ্রকৃতি দেশে ভবিষ্যত্ অর্থনীতি সম্পর্কে ইদানীং কেবলই সুসংবাদ আসছে। ক্ষুদ্র এ দেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রায়ই প্রশংসাসূচক রিপোর্ট উঠে আসছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোয় আর তাতে সাহায্য নেয়া হচ্ছে জগদ্বিখ্যাত অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের তথ্য-উপাত্তের। তাদের গবেষণা, জরিপ ও প্রাক্কলন থেকেই জানা যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট সব আশা জাগানিয়া তথ্যাদি। প্রাইসওয়াটারহাউজ কুপার্স-এর প্রাক্কলন বিশ্বাস করলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে পিপিপির (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি) হিসেবে পৃথিবীর তেইশতম অর্থনীতি আর ২০৩০ সাল নাগাদই বনে যাবে বিশ্বের আটাশতম অর্থনীতির দেশ। যদিও এসব খবর আহামরি কোনো কিছু নয়। কেননা জনসংখ্যাবহুল এ দেশটি মোট জিডিপির ভিত্তিতে ইতোমধ্যে হয়ে আছে ধরার ৩১তম অর্থনীতি।

বাংলাদেশের অর্থনীতি বিষয়ক চমকপ্রদ খবরগুলো বিস্মিত ও পুলকিত করাটাও আবার অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রথমত. র্যাংকিংয়ে আট ধাপ উপরে উঠে আসাটাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। ওই স্থানগুলোতে এখন যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, সেটা জানার পর বিস্ময়ের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ত. প্রাক্কলন দেখাচ্ছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার যেখানে ৬২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের, সেখানে ২০৩০ ও ২০৫০ সাল নাগাদ তা দাঁড়াবে যথাক্রমে ১,৩২৪ ও ৩০৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ রাশিগুলোকে অবশ্যই হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। অর্থনীতির আকারের প্রশ্নে ২০৫০ সালে কানাডার (৩১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) পরের স্থানটিই থাকবে বাংলাদেশের দখলে। অর্থাত্ ২০১৬ থেকে ২০৫০, এ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বৃদ্ধি পাবে প্রায় পাঁচগুণ। একই সময়ে কানাডার অর্থনীতির আকার দাঁড়াবে বর্তমানের চেয়ে দুইগুণ বেশি। বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্রুত আকার বৃদ্ধির এ অবিশ্বাস্য সম্ভাবনা অবশ্য প্রাইসওয়াটারহাউজ কুপার্সকেও চমকে দিয়েছে । তাইতো রিপোর্টের এক পর্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমরা প্রাক্কলন করি, ওই সময়জুড়ে (২০১৬ থেকে ২০৫০) ভিয়েতনাম, ভারত ও বাংলাদেশ হবে সবচে’ দ্রুততার সঙ্গে বাড়তে থাকা পৃথিবীর সেরা তিন অর্থনীতি’।

সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চের একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী মানুষ মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ। এদের মধ্যে প্রায় এক কেটি ১০ লাখ লোক বর্তমানে নিষ্ক্রিয়; অর্থাত্ তারা কোনো ধরনের লেখাপড়া অথবা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়। যেটি জেনে অনেকটাই হতাশ হতে হয়, সেটি হচ্ছে বেকারত্বের আধিক্য সর্বোচ্চ শিক্ষিত তরুণদের মাঝেই সবচে’ বেশি। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশই হচ্ছে তরুণ। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি ভয়ানক বাস্তবতা। কারণ এদের মধ্যেই বেকারত্বের হার সবচে’ বেশি। যুগপত্ভাবে এ দেশ হচ্ছে উচ্চ অদক্ষতার ধ্রুপদী দৃষ্টান্ত, যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে। এ ব্যাপারে অনেকেই হয়তো যুক্তি দাঁড় করাবেন, যুবকরাই দেশের সবচে’ মূল্যবান ও প্রভূত সম্পদ। এদের বেশিরভাগকে অন্তত মূল ধারার অর্থনীতিতে যুক্ত করতে না পারলে মধ্যম আয়ের বা উন্নত দেশে পরিণত হওয়াটা শুধু কঠিন নয়, বেশ কঠিন। কারণ এরাই দেশের জনসংখ্যার সবচে’ শিক্ষিত অংশ।

সম্ভাবনাকে সত্যিকার অর্থেই কাজে লাগাতে চাইলে এ অবস্থার পরিবর্তন অত্যাবশ্যক।  অধিকহারে তরুণদেরকে কাজে যুক্ত করাটা শুধুমাত্র সার্বিক উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিকে সাহায্য করা নয়, বিভিন্ন বহির্বিভাগীয় খরচ কমিয়ে দেয়ার মাধ্যমে অর্থনীতির জন্য বিশাল মুনাফা বয়ে আনা। অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে যেটি বোধগম্য হয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা  পুরোপুরিভাবে উপলব্ধি এবং কাজে লাগাতে চাইলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়নের জন্য কাঠামোগত সংস্কারের বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পিডব্লিউসি’র মতে, এর মাঝেই বাংলাদেশের সবচে’ বড় চ্যালেঞ্জটি নিহিত। এগুলোর মধ্যে দুর্নীতি আর সুশাসনের ঘাটতিও রয়েছে।

 ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দায় কী হয়েছে, তা আমরা দেখেছি। ব্যাংকের ‘উত্তরণের’ ঘটনাবহুল ফলাফলও দৃষ্টি এড়ায়নি। তথাপি মনে হয়, তা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারিনি। একই পথ অনুসরণ করলে বাংলাদেশের জন্য যে অনুরূপ তারল্য সংকট ভবিষ্যতে অপেক্ষা করছে না, তা কে বলতে পারে। সেইসাথে বলা যায়, দুর্নীতি বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের সবচে’ বড় প্রতিবন্ধক। পরিষ্কারভাবে বললে, বৃহত্তর পরিসরে ব্যবসা অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সহযোগিতা যোগাতে পুরোই অপর্যাপ্ত। যে কারণে বিদেশ থেকে খুব বড় বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না বাংলাদেশে। এ ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন ঘটছে, তার গতি খুবই ধীর। বিদেশি বিনিয়োগ আসার গতি ত্বরান্বিত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠা এবং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জরুরিভিত্তিতে সরকারের উচিত অনেক কাঠামোগত সংস্কার সাধন ও পরিবর্তন আনয়ন।

আসল কথা হচ্ছে, দ্রুততার সঙ্গে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সকল উপকরণই রয়েছে বাংলাদেশের। সবার আগে প্রয়োজন কিছু মৌলিক সমস্যা দূর করা, যে সমস্যাগুলোর পরিষ্কার সমাধান থাকা সত্ত্বেও বছরের দশকের পর দশক ধরে ‘অচিহ্নিতই’ থেকে যাচ্ছে। সেজন্য দায়ী হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে কে বলতে পারবে যে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পরাশক্তি হয়ে উঠবে না এবং সকল নাগরিককে শান্তিপূর্ণ ও মানসম্মত জীবন উপহার দিতে সমর্থ হবে না?