পরিমিত ঘুম যে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা দরকারী তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ঠিকমত ঘুম না হলে সারাদিন ক্লান্তিভাব, খিটখিটে মেজাজ, অযথা দুশ্চিন্তা এসব লেগেই থাকে। আমাদের নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা রোজকার পর্যাপ্ত ঘুমকে অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। আর সেই সাথে এখন এসেছে রমজান মাস। রোজার পরিবর্তিত লাইফস্টাইলে প্রায় সবাইকেই ঘুম নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। ইফতারে ভরপেট খেয়ে পরিবার, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবের সাথে একটু সময় কাটিয়ে ঘুমোতে দেরী হয়ে যায়, আবার রাতের টানা ঘুমের বদলে সেহরীতে ওঠা লাগে। সকালের ক্লাস বা অফিসে বা ঘরের কাজে যেন আর শরীর চলে না। ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে সারাদিন কাটে, অথচ রাতে ঘুমানোর সময় হলে চোখের পাতা থেকে ঘুম উধাও। এক অদ্ভুত দুষ্টচক্র। কি করা যায় এর সমাধানে?
রোজার সময় দিনের পরিবর্তে আমাদের খাদ্যগ্রহণ হয় রাতের বেলা। ফলে রাতে শরীরে কর্টিসোল ও ইনসুলিনের নিঃসরণ বাড়ে। হরমোনঘটিত এসব পরিবর্তনের কারণে রাতের ঘুম, ক্ষুধাবোধ সবই প্রভাবিত হয়। তা থেকে আসে যে সারাদিনের ক্লান্তি একে কাটিয়ে উঠতে কিছু নিয়ম মেনে চলুন-
সেহরীর আগে তুলনামূলক লম্বা সময় ঘুমানোর চেষ্টা করুন। অন্য সময় যখন ঘুমান তার থেকে একটু আগেই শুয়ে পড়ুন। ৪-৫ ঘন্টার টানা ঘুম আপনাকে অনেকটাই সতেজ রাখবে।
ঘুমানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। শোবার ঘর অন্ধকার এবং আরামদায়ক রাখুন, আর শুতে যাবার এক ঘন্টা আগে থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন এসব ইলেকট্রনিক গ্যাজেটকে বিদায় দিন। এগুলো থেকে যে আলো বেরোয় তা আপনার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাবে।
ভালো ঘুমের জন্য চাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস। ইফতারে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া এবং তেলযুক্ত খাবার খেলে তা থেকে এসিডিটি, গ্যাসের সমস্যা, বুক জ্বালা ইত্যাদি হতে পারে, যা ঘুমোতে দেবে না আপনাকে। আর ঝরঝরে দেহমনের জন্য ঘুমের শুধু দৈর্ঘ্যটুকুই নয়, ঘুম কতটা গভীর হল তাও জরুরী। বেশী ক্যালরিবহুল খাবার শরীর হজম করতে সময় নেয়, ফলে ঘুম ভালো হয় না।
ইফতারের পর ক্যাফেইনযুক্ত খাদ্য-পানীয় ও ধূমপান থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকুন। মনে রাখবেন ক্যাফেইনের প্রভাব শরীরে প্রায় সাত ঘন্টার মত থেকে যায়, সুতরাং যতই আগে খান না কেন ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবেই। রাতে শোবার আগে বরং এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ খেয়ে নিন, এতে থাকে ট্রিপটোফ্যান যা প্রাকৃতিকভাবে ঘুম আনতে সাহায্য করে।
সেহরীর আগে পরে মিলিয়ে চেষ্টা করুন আপনার স্বাভাবিক ঘুমের সময়টুকু পুরো করতে। তবু যদি দিনের বেলা খুব ক্লান্ত লাগে, দুপুরে ২০ মিনিটের ‘পাওয়ার ন্যাপ’ নিন। ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে রাখুন যাতে এর বেশী না ঘুমান। কারণ এসময় গভীর ঘুমে চলে গেলে চাঙা হবার বদলে আরো দুর্বল বোধ করবেন। যারা অফিসে বা এমন অবস্থায় রয়েছেন যে ঘুমানো সম্ভব নয়, তারা অন্তত ১৫ মিনিট সব কাজকর্ম বন্ধ রেখে একটু রিলাক্স করে নিন।
সারাদিনের স্ট্রেস দূর করতে সন্ধ্যার পর হালকা ব্যায়াম বা মেডিটেশন করতে পারেন। পরের দিনের কাজের প্ল্যান আগেই করে ফেলুন, ঘুমোবার আগে শুয়ে শুয়ে এসব নিয়ে ভাববেন না। আর যদি এরপরও ঘুম আসতে না চায়, বারবার ঘড়ি দেখে অস্থির হবেন না। বিছানা থেকে উঠে পড়ুন, কিছু একটা কাজে মন দিন বা বইয়ের পাতা উল্টান। শান্ত হোন, ঘুম আসবে ধীরে ধীরে।
রোজার শুরুতে ঘুম একটু উল্টোপাল্টা হলেও নিয়মমাফিক চললে আমাদের দেহঘড়ি আস্তে আস্তে নতুন রুটিনে নিজেকে অভ্যস্ত করে নেয়। তাই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস বর্জন করুন, নিজেকে একটি সুন্দর লাইফস্টাইল উপহার দিন।