মা বেশি বোঝে?

Author Topic: মা বেশি বোঝে?  (Read 1761 times)

Offline Jannatul Ferdous

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 247
  • Test
    • View Profile
মা বেশি বোঝে?
« on: June 10, 2017, 01:22:08 PM »
সালেহা বেগম (ছদ্মনাম) মেয়েকে নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে এলেন। মেয়ের সম্পর্কে একরাশ অভিযোগ নিয়ে। চিকিৎসক ইতিহাস নিয়ে দেখলেন, মেয়ে লিমার ((ছদ্মনাম) জেদ, অবাধ্য, খিটিমিটি লেগে যাওয়া শুধু মায়ের সঙ্গেই ঘটছে, আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু মহলে যথেষ্ট জনপ্রিয় সে। মায়ের সঙ্গে ক্রমশ সম্পর্কের অবনতির মূলে রয়েছে সালেহা বেগমের অতিরিক্ত কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব এবং নিজের ইচ্ছা জোর করে সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার মনোভাব।

সালেহা বেগমের মতো ব্যক্তিত্বের ধরন (চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য) অনেকের থাকতে পারে। কোনো বিষয়ে নানা দিক দিয়ে বিবেচনা করা বা পরিস্থিতি অনুযায়ী সহজেই নিজের অবস্থান থেকে সরে আসা বা নিজের মতামতের বাইরে অন্যের ভিন্ন মতবাদকে গ্রহণ করা বা সহজে যেকোনো বিষয়ের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে এদের মধ্যে অপারগতা দেখা যায়। অনেকে নিয়ম, রীতিনীতি, গোছানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ইত্যাদির ব্যাপারে অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে থাকে। অন্যদের চোখে এরা জেদি, খুঁতখুঁতে মানুষ হিসেবে পরিচিত।

সালেহা বেগমের মতো ব্যক্তিরা মনে করেন, তিনি যেভাবে সব দেখছেন বা ভাবছেন, সেটাই একমাত্র ঠিক এবং এর বাইরে আর অন্য কিছু নেই। ফলে তাঁদের মনের বাইরে কিছু ঘটলেই তাঁরা সেটা গ্রহণ করতে পারেন না। একরকম উদ্বিগ্নতা থেকেই উত্তেজনা বা রাগ প্রকাশ করেন।

এ ধরনের বৈশিষ্ট্যের সমস্যা কী?

কখনোই নিজের ভুল দেখতে না পারার কারণে যেকোনো বিষয়ে সব সময় অন্যের দোষই এদের চোখে পড়ে। প্রতিটি জিনিসে ভুল ধরা বা সমালোচনা করা, সামান্য ত্রুটিতে তুলকালাম আচরণ, নিজের মতামত জোর করে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ইত্যাদি কারণে এসব ব্যক্তির সঙ্গে অন্যদের সব সময় তটস্থ থাকতে হয়। ফলে, এদের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়া বা জীবনযাপনের স্বাভাবিক আরাম অথবা স্বতঃস্ফূর্ততা—দুই-ই বিঘ্নিত হয়। মূল সমস্যা হয় আশপাশের মানুষের বিশেষত পরিবারের সদস্যদের। তবে এ ধরনের আচরণের মূল ভুক্তভোগী হয় মূলত সন্তানেরা।

অনেক ভালো গুণ যেমন দৃঢ়তা, গভীর মূল্যবোধ, চমৎকার আবেগ, যেকোনো কাজে নিপুণতা বা পারদর্শিতা থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ মানুষের কাছে এদের জনপ্রিয়তা যেমন কম থাকে, তেমনি শুধু যারা এদের মতামত প্রশ্নহীনভাবে মেনে নেয়, তাদের সঙ্গেই এরা সম্পর্ক ভালো রাখতে পারে।

শুধু তা-ই নয়, কোনো কিছু নিজের মতো হয় না বলে বা সহজে কোনো কিছু মানিয়ে না নিতে পারার কারণে ব্যক্তি নিজেও যথেষ্ট কষ্ট পান। অতৃপ্তিতে ভোগেন। কাছের মানুষদের সঙ্গে দূরত্বও তাঁদের একা করে দেয়।

পরিবারের মানুষের করণীয়

* মানুষের ব্যক্তিত্বের মূল বৈশিষ্ট্য সাধারণত খুব একটা পরিবর্তন হয় না বলে উল্টো তর্ক করা বা আচরণ পরিবর্তন করতে না চাওয়াই ভালো। এতে সম্পর্ক আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

* চাপানো মতামত নিয়ে তর্ক করার বদলে নিজের অবস্থানে দৃঢ় থাকুন এবং মতামতের কোনো অংশ গ্রহণ করার সুযোগ থাকলে সেটা গ্রহণ করুন।

* মায়ের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ বা জেদ যথাসম্ভব উপেক্ষা করুন। মনে আঘাত দিয়ে কথা বলা, চিৎকার-চেঁচামেচি ইত্যাদিতে যতটা সম্ভব পাল্টা উত্তর না দেওয়া, প্রয়োজনে সাময়িকভাবে কথা বলা বা আন্তরিকতা কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়া যেতে পারে, আপনার কাছে এ রকম আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। ভালো মুডে থাকাকালীন মাকে বলা যেতে পারে, তার এ ধরনের আচরণে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন।

* নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আগে নিজেকে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে মনোযোগী হন। পড়ালেখার মাধ্যমে ভিত্তি শক্তিশালী করা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ উপায়। আর্থিক বা সামাজিক স্বাবলম্বন আপনার পথচলা অনেক সহজ করে দেবে।

* মায়ের সঙ্গে জেদ করে দ্রুত কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেবেন না (যেমন হুট করে বিয়ে করে ফেলা, বাসা থেকে চলে যাওয়া, পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়া)। মনে রাখবেন, আপনার সিদ্ধান্তের খেসারত শুধু আপনাকেই দিতে হবে।

* বড় ধরনের সিদ্ধান্ত জোর করে চাপিয়ে দিতে চাইলে (জোর করে বিয়ে দেওয়া) রাগারাগি না করে দৃঢ়ভাবে আপনার মতামত জানান। এ ক্ষেত্রে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে প্রয়োজনে কথা বলুন।

* বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ান।

* মায়ের মানসিক কর্তৃত্বপরায়ণতা সীমাবদ্ধতা হিসেবে মেনে নিয়ে নিজের মনের যত্ন নিন। আপনার ভালো লাগার বিষয়গুলো চর্চা করুন, মানুষের সঙ্গে মিশুন, প্রকৃতির কাছে যান, বই পড়ুন, নিজেকে সমৃদ্ধ করুন। মনে রাখবেন, আপনার আত্মবিশ্বাস যেকোনো সমস্যা মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।

মেখলা সরকার

সহকারী অধ্যাপক (মনোচিকিৎসা)

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
Mosammat Jannatul Ferdous Mazumder
Student Counselor (Counseling & Admission)