হুট করে ওজন বাড়তে পারে সবার ক্ষেত্রেই
পুষ্টিবিদ আখতারুন্নাহার বলেন, ‘ডায়েট করার আগে যে ওজন ছিল, দেখা যায় ডায়েট করার পরও সেই ওজন উল্টো বেড়ে গিয়েছে। অনেকের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা দেয় আবার বেশ কিছুদিন পর। যেমন এক থেকে দুই বছরের মধ্যে দেখা গেল, ওজন আগের চেয়েও পাঁচ থেকে সাত কেজি বেড়ে গিয়েছে।’
তাহলে অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, ‘ডায়েট করেই কী লাভটা হলো?’ আখতারুন্নাহার জানান, শুধু ডায়েট করলেই ওজন কমে যাবে, এমন ধারণা ঠিক নয়। আমাদের শরীরের কিছু মেটাবলিজম আছে, যার ফলে এই ওজন বৃদ্ধির সমস্যা দেখা দেয়। এর কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে—
১. সঠিকভাবে ব্যায়াম না করা
শুধু খাদ্যতালিকা মেনে চললেই হবে না, সেই সঙ্গে প্রয়োজন নিয়মিত ব্যায়াম করা। কেননা, যেই পরিমাণ ক্যালরি বা শর্করা আপনি খাচ্ছেন, সেই নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরিই আপনাকে খরচ করতে হবে। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই ঘণ্টা হাঁটার পাশাপাশি অল্প কিছু সময় দৌড়ানো কিংবা ইয়োগা করতে পারেন।
২. খাদ্যতালিকা যাচাই করে
ডায়েটের তালিকায় যেই খাবারগুলো রেখেছেন, সেগুলোর পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে আপনাকে সচেতন হতে হবে। নতুবা ভিটামিন, কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। যার ফল হতে পারে নিম্ন রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা কিংবা হিমোগ্লোবিনের অভাব।
আখতারুন্নাহার জানান, শর্করা আমাদের সবার প্রয়োজন। কিন্তু ডায়েটে থাকাকালীন অনেকেই এই উপাদান এড়িয়ে যান। এর ফলে অল্প কিছুদিন পরই পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিলে বেশি মাত্রায় খেতে হয়। তাই এমনভাবে খাদ্য বাছাই করুন, যা একই সঙ্গে আপনার ওজন কমাতে সহায়তা করবে এবং পুষ্টির চাহিদাও ঠিক রাখবে।
৩. অতিরিক্ত বিষণ্নতা
শুনতে অবাক লাগলেও এটি সত্য! কেননা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, দীর্ঘদিন ডায়েট করার পরেও ব্যক্তি যখন অতিরিক্ত বিষণ্নতায় ভোগেন, তখন তার আর ডায়েটের ইচ্ছাই থাকে না। সে হয়তো নিজেও সচেতন থাকছে না, কিন্তু বেশি পরিমাণে ক্যালরিযুক্ত খাবার খাচ্ছে। আর অনেক দিন পর অতিরিক্ত ক্যালরি খাওয়ার ফলে ওজন খুব দ্রুতই বেড়ে যায়।
মূলত এর জন্য দায়ী করা যেতে পারে ‘করটিসল’ নামের হরমোনকে। মানসিকভাবে বিষণ্ন থাকার ফলে এই হরমোন নিঃসরণের পরিমাণও অনেক বেড়ে যায়।
৪. ঘুম না হওয়া
পর্যাপ্ত পরিমাণে যদি আপনার ঘুম না হয়, তাহলে আপনার ক্লান্তি স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে। আর রাত জাগার ফলে আপনার খিদে বেড়ে যায়। যার ফলে আপনি হয়তো স্ন্যাক্স-জাতীয় খাবার খাচ্ছেন। এটি কিন্তু ওজন বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ।
৫. এ ছাড়া ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অনেক বহুমূত্র রোগীর এই সমস্যা দেখা দেয়। ইনসুলিন গ্রহণ করার ফলে শরীরে সুগার তৈরি হয়, যার ফলে চর্বি বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া থাইরয়েডসহ বিভিন্ন হরমোনের ঘাটতি, মেটাবলিজমের হার কমে যাওয়া এসবের কারণেও ওজন বেড়ে যায়।
মেনে চলা দরকার
প্রতিদিন ব্যায়াম করার বিকল্প নেই।
মানসিকভাবে হতাশা যেহেতু ওজন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ সে ক্ষেত্রে এটি কাটিয়ে উঠতে কিছুদিনের জন্য বেড়িয়ে আসতে পারেন। খুব দূরে কোথাও না হলেও কাছের কোনো বন্ধুর বাসায় না হয় গেলেন, যেখানে আপনি স্বস্তিবোধ করবেন।
যেকোনো ওষুধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নিন।
হুট করেই ডায়েটের শুরু করা যাবে না। পরিকল্পনা বা খাদ্যতালিকার পুষ্টি উপাদান যাচাই করে তারপর শুরু করুন।
Collected