এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগামী বিশ্বকাপে দলটির সরাসরি খেলা নিয়েও ঘোর সংশয়। অথচ এই দলটিই একসময় দোর্দণ্ড প্রতাপে শাসন করেছে ক্রিকেট বিশ্ব। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে দুবার করে, একবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। নিজের দলটাকে এভাবে পতনের মুখে দেখতে কারই-বা ভালো লাগে! সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি যেমন খুব চিন্তিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের এই দুর্দিন দেখে। আর এর জন্য তিনি মূলত দায়ী করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডকে। ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের (সিডব্লুআই) হর্তাকর্তাদের অযৌক্তিক অনেক সিদ্ধান্তই আজ ক্যারিবীয় ক্রিকেটকে এই পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে বলে মনে করেন স্যামি।
বেতন-ভাতা নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ডের দ্বন্দ্ব বেশ পুরোনো। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে ২০১৪ সালে একবার ভারত থেকে সফরের মাঝপথে ফিরে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। খেলোয়াড়দের সঙ্গে বোর্ডের এই দ্বন্দ্ব শেষ তো হচ্ছেই না, বরং বাড়ছে।
সিডব্লুআই নিয়ম করে রেখেছে, ঘরোয়া ক্রিকেটের কোনো নির্দিষ্ট সংস্করণে না খেললে কোনো খেলোয়াড় ওই সংস্করণের জাতীয় দলে সুযোগ পাবেন না। যার মানে, কেউ যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না খেলেন, তাহলে তিনি টেস্ট দলের জন্য বিবেচিত হবেন না। কিংবা ঘরোয়া ওয়ানডে না খেললে সুযোগ মিলবে না ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ানডে দলে।
ক্যারিবীয় টি-টোয়েন্টি লিগে খেলতে অবশ্য আপত্তি নেই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারদের। তবে ঘরোয়া ওয়ানডে বা প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্টগুলোর চেয়ে তাঁরা ওই সময়টায় বিদেশি টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে খেলাটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আর্থিক কারণেই তাঁদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আর প্রথম সারির বেশির ভাগ খেলোয়াড় যেহেতু ঘরোয়া ওয়ানডে বা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেন না, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ানডে বা টেস্ট দলেও তাঁদের জায়গা হচ্ছে না। ক্রিস গেইল, কাইরন পোলার্ড ও ডোয়াইন ব্রাভোর মতো ক্রিকেটাররা যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলেও তাই তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত। কেউ কেউ নেই ওয়ানডেতেও। ড্যারেন স্যামি নিজেও সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৩ সালে, ওয়ানডে ২০১৫ সালে। ২০১৬ সালের আগস্টে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয় টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব থেকেও। অথচ দুবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র অধিনায়ক স্যামি!
গেইল বা ব্রাভোর মতো খেলোয়াড়দের সব ধরনের দলে ফেরানোর কোনো উদ্যোগও নিচ্ছে না সিডব্লুআই। যে কারণে বোর্ডের ওপর ভীষণ খ্যাপা ড্যারেন স্যামি, ‘ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্তমান প্রশাসন যত দিন থাকবে, আমি এটা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখি না। আপনি তো একজন খেলোয়াড়কে বিদেশি টি-টোয়েন্টি লিগে খেলতে নিষেধ করতে পারেন না। ওটা দিয়েই তো আর্থিকভাবে একটু সচ্ছল হয়, পরিবার চালায়।’
এই মুহূর্তে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয় নম্বরে, টেস্টে আটে। এ রকম চলতে থাকলে সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থা আরও খারাপ হবে বলেই মনে করেন স্যামি, ‘আমাদের ক্রিকেটের এখন যে অবকাঠামো, তাতে আমি কোনো আশা দেখি না। আমার খুব ভয়, একদিন না অবনমিত হয়ে আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে আমাদের খেলতে হয়। এটা খুবই দুঃখজনক হবে।’
স্যামিদের এই দুঃখটা সিডব্লুআই উপলব্ধি করে কি? এএফপি।