কাতার নিয়ে অস্থির রাজনীতি

Author Topic: কাতার নিয়ে অস্থির রাজনীতি  (Read 739 times)

Offline milan

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 304
  • Test
    • View Profile
    • https://daffodilvarsity.edu.bd/page/show_page_detail/coordination-offices
কাতার নিয়ে অস্থির রাজনীতি
মধ্যপ্রাচ্য
শিল্পী রহমান
গত ৫ জুন সকালবেলা সৌদি আরব, ইউনাইটেড আরব এমিরেটস, বাহরাইন এবং ইজিপ্ট মিলে কাতারের সঙ্গে সব কূটনৈতিক বন্ধন ছিন্ন করে দিল। কারণ তারা বিশ্বাস করে, কাতার বিভিন্ন সন্ত্রাসীকে টাকা দিয়ে পুষছে, তাদের আশ্রয় দিয়েছে। কাতার এর বিরুদ্ধে সৌদি দলের সঙ্গে আরও যোগ দিল ইয়েমেন, মালদ্বীপ এবং লিবিয়া। আর এদের সবাইকে ইন্ধন জোগাচ্ছে আমেরিকা। ২২ মে ট্রাম্প সৌদি রাজার সঙ্গে মোলাকাত করে ফিরেছেন। আর ৫ জুন কাতারের ওপরে এই অত্যাচার শুরু।
নির্দেশ দেওয়া হলো- এই কয়টা দেশের যেসব মানুষ কাতারে কাজ করত তাদের সবাইকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কাতার ছেড়ে নিজের দেশে ফিরতে হবে। আবার কাতারিদের মধ্যে যারা ওইসব দেশে আছে তাদেরকেও ১৪ দিনের মধ্যে ওদের দেশ ছেড়ে কাতারে ফেরত আসতে হবে। আমার পরিচিত এক বন্ধুর অফিসে ৫ জন বাহরাইনি কাজ করত। তারা সঙ্গে সঙ্গে কাতার ছেড়ে ফিরে গেছে তাদের দেশে। আমার স্বামীর অফিসে প্রচুর ইজিপশিয়ান কাজ করে; কিন্তু তারা কেউ ফেরত যায়নি এখনও। অপেক্ষা করছে ব্যাপারটা আসলে কতদূর গড়ায় সেটা বোঝার জন্য। কারণ আমি যত ইজিপশিয়ানকে এখানে দেখেছি, এরা কেউই নিজের দেশে ফিরে যেতে চায় না ওদের দেশে দুর্নীতির কারণে। আমাদের খুব কাছের এক ইজিপশিয়ান বন্ধু তার ছোট ভাইয়ের বিয়েতে দেশে যাবে; সারা বছর আমাকে সেই আনন্দের গল্প বলেছে। কিন্তু এই ঝামেলায় ও দেশে যেতে পারছে না- এ কথা বলার সময় ওর চোখ ছলছল করে উঠল।
খবর এলো, সব রকমের খাবার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ কাতারে আমরা যেসব খাবার কিনি তার বেশিরভাগই আসে এই পার্শ্বর্বর্তী দেশগুলো থেকে। কিছু আসে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে। কিন্তু বেশিরভাগ দ্রব্যই আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। ওরা যদি না দেয় তাহলে তো খাবারের কমতি পড়বেই। সবাই বলাবলি করতে লাগল, আমাদের খাবার কিনে রাখা উচিত। প্রথমে কেনাকাটা করার কথা ভাবতেই পারছিলাম না। সত্যি সত্যিই কি এমন একটা অবস্থায় এসে পড়েছি আমরা? আমার বাসার কাছেই শপিং সেন্টার, হেঁটেই যাওয়া যায়। শপিং সেন্টারে গিয়ে ভাবছি, কী কেনা যায়? টুকটাক কিছু কিনে বাড়ি ফিরলাম। ততক্ষণে পুরো কাতারে সব দোকানপাটে মানুষের ভিড়। বাজারে মুরগি শেষ হয়ে গেল কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। দুধ শেষ হয়ে গেল। কেমন একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব!
এটা গেল প্রথম দিনের ঘটনা। ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে। এই টেকনোলজির যুগে খবর পাওয়া কোনো ব্যাপার না। কিন্তু এর পরই ইউনাইটেড আরব এমিরেটসের নিষেধাজ্ঞা এলো- তার দেশের কেউ যদি কাতারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে কিছু বলে, তাহলে তাদের ৫০০,০০০ দিরহাম (ইউএই মুদ্রা) জরিমানা করা হবে; সেই সঙ্গে ১৫ বছরের জেল।
প্রতিদিন শত শত প্লেন আসত ফ্লাই দুবাই, এমিরেটস, ইতিহাদ এবং ইজিপ্ট এয়ারলাইন্স থেকে। সব বন্ধ করে দিল। যাত্রীদের দুর্ভোগের আর সীমা রইল না। আকাশপথ অবরুদ্ধ করে দেওয়ায় কাতার এয়ারওয়েজের অনেক সমস্যা হচ্ছে। তবু তারা প্লেন বন্ধ করেনি। কাতারের চারপাশ ঘিরেই এ দেশগুলোর অবস্থান। আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়ায় এ দেশ থেকে বের হওয়ার পথগুলো সীমিত হয়ে গেছে। কাতার থেকে উড়ে সরু পথে ইরানের আকাশপথে ঢুকে, অনেকটা পথ ঘুরে এই প্লেনগুলোকে বের হতে হচ্ছে।
এর মধ্যে ইরানে গোলাগুলি হলো, মানুষ মারা গেল, ওদিক থেকে তুরস্ক তাদের ট্যাংক পাঠিয়ে দিল কাতারের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়ে। তখন উত্তেজনা আরও বেড়ে গেল। এত ছোট একটা দেশ, মনে হলো যে কোনো সময় কাতারের ওপরে একটা বম্ব ছেড়ে দিলেই কাতার শেষ হয়ে যাবে।
আমাদের বন্ধুদের মধ্যে কথা চলছে। একেকজন একেক রকম বুদ্ধি বের করছে। আমি এবং আমার স্বামী সিদ্ধান্ত নিলাম, বের হওয়ার অনুমতিটা নিয়ে রাখি। যদি বের হওয়ার সুযোগ পাই তখন যেন সেই অনুমতি নিয়ে দুশ্চিন্তা না হয়। তখনই ভাবনাটা এসেছিল- কী নেব সঙ্গে? আমার মনে হয়েছিল, আমি আমার ল্যাপটপটা সঙ্গে নেব। ওটা ভর্তি আমার সব লেখা। এই ব্যাগ গোছানোর কথা ভাবার সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো, এই দেশটার প্রতি একটা মায়া জন্মে গেছে। এদের বিপদে এমন করে নিজে পালিয়ে বাঁচব? আমি মাত্র কয়েক বছর ধরে কাতারের সঙ্গে বন্ধন স্থাপন করেছি, তাতেই এই মায়া। কিন্তু এখানে যাদের জন্ম হয়েছে এটা তো তাদের জন্মভূমি। যারা ৫০-৬০ বছর ধরে এখানেই বসবাস করছে, এটা তো তাদেরও দেশ হয়ে গেছে এখন। তারা কি পারবে ছেড়ে যেতে?
কেন এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়ল কাতার? কাতারের প্রতি নজর অনেকেরই। কারণ এই ছোট দেশটি তরতর করে ওপরে উঠে যাচ্ছে- এটা কারও সহ্য হচ্ছে না। সৌদির দাসত্ব মেনে নিলে, ওদের কথামতো চললে আর এসব ঝামেলা হতো না। কিন্তু কাতার কেন সেটা করবে? এরা কারও সাতে-পাঁচে নেই। কারও কোনো কিছুতে নাক গলায় না; নিজেই বেড়ে উঠছে, যেটা কিনা অন্যের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই ১৯৯১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বিভিন্নভাবে কাতারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে। ১৯৬৫ সালে কাতার ও সৌদির মধ্যে একটা বর্ডার এগ্রিমেন্ট হয়। কিন্তু ১৯৯২তে সৌদি সেই বর্ডার ঠেলে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। ফলত বেশ কিছুটা কাতারের অংশ সৌদি নিয়ে নেয়। সৌদির এই আগ্রাসনের আগে কাতারে আরব আমিরাত ও সৌদির বর্ডার ছিল। কাতারের বেশ কিছুটা তখন সৌদি দখল করে নেওয়াতে আরব আমিরাতের অংশটা বাদ পড়ে যায়। সে কারণে এখন স্থলপথে শুধু সৌদির সঙ্গেই কাতারের বর্ডার বিদ্যমান।
কাতারকে ছোট মনে করা ভুল হবে ওদের। আকারে ছোট হলেও এরা খুবই শক্ত। একা একাই অনেক কিছু অর্জন করেছে এরা। কাতারের প্রাক্তন আমিরের স্ত্রী, শেখা মউজার বদৌলতে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এখানে। গত ৮ বছরে আমি নিজের চোখে কাতারের উন্নতি দেখেছি, সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু সেটা আমার চোখে, অন্যের সেটা গাত্রদাহের কারণ। আলজাজিরার পেছনেও লেগেছে। কারণ একমাত্র আলজাজিরাই বোধহয় সত্য কথা বলার সাহস রাখে। বিভিন্ন দেশে আলজাজিরার সমর্থক এতই বেড়ে চলেছে যে, সিএনএন, বিবিসির মতো বাঘা বাঘা টিভি চ্যানেল ও আলজাজিরার কাছে হার মানছে। তাই এটাও বন্ধ করে দিলে ওদের সুবিধা হয়। এটাও কাতার মেনে নেয়নি।
রাজনৈতিক আশ্রয় তো পৃথিবীর সব দেশেই হয়। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতারা এই অনুমতির জন্য দরখাস্ত করে এবং সেই দরখাস্ত একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। কাতার ইজিপ্ট থেকে বিতাড়িত 'মুসলিম ব্রাদারহুড' এবং গাজা থেকে বিতাড়িত 'হামাস'কে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে। এরা কেউই সন্ত্রাসী নয়। এরা এসব দেশে ভোটে নির্বাচিত রাজনৈতিক দল ছিল। যেহেতু কাতার ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কিছু নেতৃস্থানীয় মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে, এটাতে ইসরায়েল অসন্তুষ্ট। এই এটার সঙ্গে আরেকটা সূত্র ধরে কাতারের সঙ্গে শত্রুতা শুরু করেছে এরা। কিন্তু সত্যি এটাই কি মূল কারণ?
২২ মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসে ইরানের বিরুদ্ধে ছয়টি (জিসিসি) দেশ নিয়ে একটি সম্মিলিত শক্তি গঠন করতে চেয়েছিলেন। কারণ ট্রাম্প মনে করেন, ইরান পৃথিবীর সব সন্ত্রাসীকে সমর্থন করে, যেটাতে কাতার সহমত প্রকাশ করেনি। ইরানের সঙ্গে কাতারের কোনো শত্রুতাও নেই। অকারণে সহমত হবেই-বা কেন? সেই থেকে কাতার হয়ে গেল আমেরিকারও শত্রু। এখন সবাই মিলে লেগেছে কী করে কাতারের বর্তমান আমিরকে সরিয়ে তাদের পছন্দমতো একজন আমিরকে বসাবে, যাতে তাকে ইচ্ছামতো চালাতে পারে।
আরও কিছু ঈর্ষার কারণ হলো- কাতারে মানুষের গড়প্রতি আয় পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি। এখানকার হামাদ এয়ারপোর্ট ঞযব ভরহবংঃ ধরৎঢ়ড়ৎঃ রহ ঃযব ড়িৎষফ টাইটেল পেয়েছে। কাতার দ্বিতীয় বৃহত্তর গ্যাস সরবরাহকারী। ৪৫ শতাংশ গ্যাস যায় কাতার থেকে। ১৫ বিলিয়ন ব্যারেল তেল আছে, যা ৪০ বছর চলবে। ৯০০ ট্রিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস আছে, যা ১৪০ বছর চলবে। ২০২২ সালে ওয়ার্ল্ড কাপ অনুষ্ঠিত হবে। মানবিক উন্নতি, উন্নত ইন্টারনেট, খাবারের নিরাপত্তা- এসবই অন্যের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন।
সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে যে দেশে পৃথিবীর মুসলমানরা হজ করতে যায়, সেই দেশ থেকে হুলিয়া জারি হলো_ ওরা কাতারের কাউকে হজ করতে ভিসা দেবে না। এই অন্যায়ের কী জবাব? কোথায় ধর্ম, কোথায় মনুষ্যত্ব? মন ভেঙে যায় সত্যি! কবে থামবে এই পৃথিবী? সেই ছোটবেলায় ফিরে যেতে মন চায়, যখন সবাই মিলেমিশে ছিলাম, ভালোবেসে ছিলাম। কোনো রক্তপাত ছিল না, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি ছিল না। আমার প্রতি ওয়াক্তের নামাজে একটাই প্রার্থনা- পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে দাও; শান্তি চাই আবার।
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী
http://bangla.samakal.net/2017/06/22/302842#sthash.f1i1qHa9.dpuf
Milan Hossain
Sr. Coordination Officer
Department of Civil Engineering
Faculty of Engineering
Cell: 01847140165
e-mail: ceoffice@daffodilvarsity.edu.bd
Ext. 258
https://daffodilvarsity.edu.bd