শিল্প খাতের গতির ওপর ভর করে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান দ্বার চট্টগ্রাম বন্দরে এবারও কনটেইনার পরিবহন বেড়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ বন্দরে কনটেইনার পরিবহনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ।
বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়লে কনটেইনার পরিবহন বাড়ে। এ থেকে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির একটা ধারণা পাওয়া যায়। সরকারের বার্ষিক প্রতিবেদন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, গেল অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ। কনটেইনার প্রবৃদ্ধির হারও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধির সমান। শিল্প খাতের পাশাপাশি কনটেইনার পরিবহনে সেবা খাতেরও প্রভাব রয়েছে। সাময়িক হিসাবে বিগত অর্থবছরে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসি অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, অর্থনীতিতে কাঠামোগত রূপান্তর ঘটছে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষি খাতের চেয়ে শিল্প খাতের অবদান বাড়ছে। এর ফলে শিল্প খাতে কাঁচামাল আমদানি ও রপ্তানির জন্য কনটেইনার পরিবহনও বাড়বে। এ জন্য নতুন বন্দর বা টার্মিনাল নির্মাণে দ্রুত হাত দেওয়া উচিত।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার পরিবহন হয় প্রায় ২৪ লাখ ১৯ হাজারটি। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৮৯ হাজার। তবে সংখ্যা বাড়লেও বিগত বছর কনটেইনার পরিবহনে প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে কনটেইনার পরিবহনে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পরের বছর প্রবৃদ্ধি বেড়ে ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় ১৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে হয় ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় সাড়ে ১০ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিসি) তথ্য অনুযায়ী, অর্থনীতিতে তিনটি খাতের মধ্যে শিল্প খাতের অবদান ক্রমেই বাড়ছে। সর্বশেষ অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ধরা হয়েছে ৩২ দশমিক ৪৮ শতাংশ; যা ছয় বছর আগের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে একই সময়ের ব্যবধানে কৃষি খাতের অবদান কমেছে। গত অর্থবছর এই খাতের অবদান ১৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। জিডিপিতে সেবা খাতের অংশ সামান্য কমেছে, তবু জিডিপির ৫২ দশমিক ৭৩ শতাংশই আসছে সেবা খাত থেকে। শিল্প ও সেবা খাত পণ্য আমদানি ও রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল।
চট্টগ্রাম বন্দরের পর্ষদ সদস্য মো. জাফর আলম গত রোববার বলেন, ‘আমাদের হিসাবে কনটেইনার পরিবহনে প্রতিবছর গড়ে ১০ থেকে ১২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা। ভবিষ্যতে কনটেইনার পরিবহনে যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য নতুন একটি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে।’
বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, গেল অর্থবছর চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার পরিবহন বৃদ্ধির হার সাড়ে ১২ শতাংশ হতে পারত। জেটি সংকটে গত জুনের শেষে অন্তত অর্ধলাখ কনটেইনার ওঠানো-নামানো যায়নি।
জাফর আলম আরও বলেন, গত মাসে ঘূর্ণিঝড় মোরা ও ঈদের ছুটির কারণে বন্দরের কার্যক্রম তিন দিনের বেশি বন্ধ ছিল। আবার বন্দর থেকে ডিপো কর্তৃপক্ষ ও আমদানিকারকেরা খালাস করে না নেওয়ার কারণেও কনটেইনারের জট তৈরি হয়েছে।