বেশির ভাগ পেশাজীবীই পেশাগত কাজের ই-মেইল করে যান্ত্রিকভাবে। দ্রুত এ মেইলগুলো করায় এতে থেকে যায় অনেক ভুল। এ সামান্য ভুল অনেক সময় বড় ভুল তৈরি করে। তাই ই-মেইল করার সময় খেয়াল রাখতে হবে এ ভুলগুলো আপনার হচ্ছে কি না। ই-মেইল করা সহজ কাজ হলেও একবার তা পাঠানোর পর আর ফেরত আনা যায় না। এ কারণে মেইলে কী লিখছেন, তা সঠিকভাবে যাচাই করেই পাঠানো উচিত। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে বিজনেস ইনসাইডার। এ লেখায় পাচ্ছেন ই-মেইলের ১২টি সাধারণ ভুল।
১. সম্ভাষণ জানাতে ভুলে যাওয়া
কোনো কথাবার্তার শুরুতে অবশ্যই অন্য পক্ষকে সম্ভাষণ জানানো স্বাভাবিক ভদ্রতার মধ্যে পড়ে। আর এটি ভুলে গেলে তা আপনার ভদ্রতার ঘাটতি হিসেবে দেখা হতে পারে। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি হিসেবে ই-মেইলের প্রতিটি কথাই আপনার প্রতিষ্ঠানকে উপস্থাপন করে। আর এ ক্ষেত্রে ঘাটতি প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করবে।
২. অতিরিক্ত আনুষ্ঠানিকতা
আপনার ই-মেইলে পেশাদার ভাব থাকলেও তা যেন অতিরিক্ত হয়ে না যায়, এটা খেয়াল রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে আপনি একজন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। মানবিক দিকটা রাখতেই হবে।
৩. অতিরিক্ত বন্ধুসুলভ আচরণ
অফিশিয়াল কাজে মেইলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপনার কারো সঙ্গে অতিরিক্ত বন্ধুসুলভ আচরণ করা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে তাঁর সঙ্গে আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কোনো কাজে যোগাযোগ করতে হচ্ছে।
৪. অনির্দিষ্ট প্রাপক
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে মেইল করলে ঠিক কার কাছে মেইলটি যাচ্ছে, তা সম্বন্ধে আপনার ধারণা থাকতে হবে। যদি আপনি অনির্দিষ্ট কোনো প্রাপকের কাছে ‘to whom it may concern' শিরোনামে মেইল করেন তাহলে তা সঠিক হবে না। কারণ এমন কথা সার্টিফিকেটের ক্ষেত্রেই মানায়, ই-মেইলে নয়।
৫. সাবজেক্ট লাইনে কিছু লিখতে ভুলে যাওয়া
কোনো মেইলের সাবজেক্ট লাইনে কিছু লিখতে ভুলে যাওয়া মানে মেইলটা বরবাদ করে দেওয়া। ই-মেইলের এটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর এ গুরুত্বপূর্ণ অংশটি খালি রাখা হলে তা আপনার মেইলের গুরুত্ব অনেকখানি কমিয়ে দেয়।
৬. 'রিপ্লাই অল' করা
ধরুন, আপনিসহ আরো ৫০ জনকে মেইল করা হয়েছে কোনো একটা মিটিংয়ে থাকতে পারবেন কি না, তা জানার জন্য। আর এ মেইলের উত্তর শুধু মেইলদাতাকেই পাঠানো উচিত। কিন্তু আপনি যদি সেই মেইলের রিপ্লাই সবাইকে দিয়ে দেন, তাহলে তা অন্যের বিরক্তির কারণ হবে।
৭. বিস্তারিত মনোযোগ না দেওয়া
ই-মেইলের ছোটখাটো বিষয়গুলো ঠিকঠাক না রাখলে তা আপনার মনোযোগহীনতা প্রকাশ করবে। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না আপনার নামের বানান কেউ ভুল করুক। আর একই ভাবে অন্যরাও তাদের নামের বানান ভুল দেখতে চাইবে না। এ ছাড়া নামের শুরু, কোনো স্থানের নাম ইত্যাদির শুরুর অক্ষরগুলো বড়হাতের লেখা উচিত।
৮. অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য লেখা
কাজের জন্য একটি ই-মেইলে যতখানি পড়তে সময় দেওয়া দরকার তার চেয়ে যদি বেশি সময় লাগে তাহলে মানুষ বিরক্ত হয়ে যাবে। আর এ বিরক্তি আসতে পারে আপনি যদি ব্যক্তিগত কিংবা বাড়তি কিছু কথাবার্তা লেখেন। ব্যবসায়ীরা শুধুই ব্যবসা চায়। তারা আপনার বাবা কিংবা দাদার কথা শুনতে চায় না। আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, ইতিহাস ইত্যাদি গল্প অফিসের ই-মেইলে লেখার কোনো প্রয়োজন নেই।
৯. অস্পষ্ট কথা
ই-মেইলে আপনি অন্য কাউকে কোনো একটা তথ্য জানাচ্ছেন কিংবা জানতে চাইছেন। এ ক্ষেত্রে এসব বিষয় স্পষ্ট করে লেখা খুবই প্রয়োজন। কোনো বিষয় যদি অন্য পক্ষের জানা না থাকে তাহলে তা জানিয়ে দেওয়া উচিত। অন্যথায় ই-মেইল করাটাই বৃথা যাবে। এ জন্য মেইল করার আগে পুরো মেইলটি আবার পড়তে হবে।
১০. উত্তর পাওয়ার পরও একই প্রশ্ন করা
এর আগের মেইলে আপনি কোনো একটি প্রশ্ন করেছেন এবং তার উত্তরও পেয়েছেন। এর পরও যদি সেই প্রশ্নই করেন তাহলে তা অন্য পক্ষের চরম বিরক্তির কারণ হবে। আর এর অর্থ দাঁড়াবে আপনি আগের মেইলগুলো পড়েননি। এর একটি ভালো সমাধান হতে পারে ই-মেইলের প্রতিটি বিষয় পয়েন্ট আকারে লেখা ও উত্তর দেওয়া। অর্থাৎ অন্য পক্ষ আপনাকে যে প্রশ্নগুলো করবে সেগুলো পয়েন্ট আকারে উত্তর দেওয়া এবং আপনার প্রশ্নগুলোও পয়েন্ট আকারে করা।
১১. মুখোমুখি বলার বদলে ই-মেইল
মুখোমুখি এমন অনেক কথা বলা যায়, যা ই-মেইলে লেখা যায় না। এসব কথা যদি মেইলে চলে যায় তাহলে তা ভিন্ন পরিস্থিতি বা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করতে পারে। যেমন কারো সমালোচনা করা। সামান্য কোনো সমালোচনা হলে তা মুখোমুখি কিংবা টেলিফোনেই সেরে নেওয়া যায়। আর ই-মেইলে বিষয়টি তোলা হলে তা লিখিত আকারে চলে যায়, যা অন্যকে আঘাত করতে পারে।
১২. শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার
ই-মেইলে কোনো নাম বা শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করা উচিত নয় (যেমন appointment = appt.)। অনেক সময় শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ পাঠকের কাছে অস্পষ্ট থাকতে পারে। আবার কখনো কখনো তার ভিন্ন কোনো অর্থও মনে হতে পারে। তাই বানান করে পুরো শব্দটাই লিখে দেওয়া উচিত।