পড়ার উপযুক্ত সময় ভোরে না রাতে?
পড়ার পরিবেশটা যদি কোলাহলে ভরপুর থাকে, তবে পড়ার প্রকৃত পরিবেশ কখনই পাওয়া যায় না। পড়ার জন্য চাই শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ। সেটা যে কোনো সময়ই হতে পারে। তবে অনেকেই শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশের জন্য ভোর অথবা রাতের সময়টুকুই বেছে নেয়। এবং সেভাবেই তারা পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে রাখে। কারও পছন্দ ভোরে আবার কারও পছন্দ রাত জেগে পড়া। তবে হ্যাঁ, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে রাতে পড়ার চেয়ে ভোরে পড়া অধিক উপকারী। ভোরে পড়ার ক্ষেত্রে তুমি যে সুবিধাগুলো পেতে পার তা হল-রাতে ঘুমানোর কারণে চনমনে স্নায়ুতন্ত্র ও ক্লান্তিমুক্ত শরীর পাওয়া যায়। পড়া মুখস্থ করে মনে রাখার জন্য এটি খুবই দরকারি। এছাড়াও ভোরের আবহাওয়ায় থাকে স্নিগ্ধতার পরশ, চারদিকে থাকে নিস্তব্ধতা। সবাই ঘুমিয়ে থাকার কারণে বিরক্ত করার মতো কেউ থাকে না। পড়ায় মনোসংযোগের জন্য এমন পরিবেশ খুবই সহায়ক। ভোরের পৃথিবীর শীতল বাতাসে শরীর ও মন শান্ত, স্নিগ্ধ ও কোমল হয়ে ওঠে। সবচেয়ে বড় কথা যতটুকু পড়া হয় তা একেবারে খাঁটি, যা সহজেই বোঝা যায় এবং মনে থাকে বেশি। ঘুম থেকে জাগার ফলে মনে কোনো অস্থিরতা বা টেনশনও এ সময় কাজ করে না। তাই ভোরে পড়াশোনা করলে পড়া বেশি মনে রাখা যায়।
তবে হ্যাঁ, তোমার যদি রাতে পড়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে রাতে পড়ার অভ্যাস ত্যাগ করার প্রয়োজন নেই। কেননা এ সময় যদি তুমি পড়তে বসে পড়ায় অধিক মনোসংযোগ করতে পার তবে স্বাচ্ছন্দ্যে রাতে পড়তে পার। ভোরে পড়ার অভ্যাস তৈরি করলে তুমি কিছু অসুবিধায় পড়বে। খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার ফলে দিনে ঘুম ঘুম লাগতে পারে। ফলে আবার ঘুমাতে ইচ্ছা করবে। তবে এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে তা কেটে যাবে। তাছাড়া খুব সকালে ওঠার জন্য তোমার অ্যালার্ম ঘড়ির দরকার হবে। তবে এটাও ঠিক রাত জেগে পড়ার কারণেও দিনে তোমার ঘুম পেতে পারে। শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আসলে পুরো ব্যাপারটাই নির্ভর করবে তোমার অভ্যাসের ওপর। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে ভোরে তুমি কয়টায় উঠবে? রাত ৩টার আগে কখনই উঠবে না। সাড়ে ৩টা পৌনে ৪টায় ঘুম থেকে ওঠাই উত্তম। মনে রাখবে রাত সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা পড়া অন্য যে কোনো সময় ৫ ঘণ্টা পড়ার সমান। তবে লক্ষ্য রাখবে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা ঘুম হওয়া চাই। অন্যথায় শরীর খারাপ করবে। ৬ ঘণ্টার কম ঘুম কোনোভাবেই কাম্য নয়। ৮ ঘণ্টার বেশি ঘুমানোরও প্রয়োজন নেই। তবে লক্ষ্য রাখ পরীক্ষার দিন যাতে কোনোভাবেই ঘুম কম না হয়, কম ঘুমে টেনশন বাড়বে বরং কমবে না। তবে সবশেষে বলব, পড়ার সময় পড়া-তা যে সময়ই হোক না কেন। তখন মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
দেবাশীষ চন্দ্র রায়
সহকারী অধ্যাপক
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা।