রোগের নাম স্কিজোফ্রেনিয়া

Author Topic: রোগের নাম স্কিজোফ্রেনিয়া  (Read 1665 times)

Offline Karim Sarker(Sohel)

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 521
  • Test
    • View Profile
স্কিজোফ্রেনিয়া

মেয়েটির নাম ছিল নিশি। ক্লাস সিক্স কি সেভেনে পড়তো। আমি তাকে অংক আর ইংরেজি পড়াতে যেতাম। পড়াশুনায় বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু একটাই সমস্যা, যখন-তখন খিল খিল করে হেসে উঠত। ব্যাপারটা খুব ভালো বুঝতে পারতাম না বা খুব একটা গুরুত্বও দেয়া হয়নি। কিছুদিন পর সমস্যাটা বাড়তে থাকে। আগে অকারণে হাসতো, কিন্তু কিছুদিন পর আমার পেছনে কাউকে দেখে তার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। তখন মনের অজান্তেই নিজের পেছনে তাকিয়ে চমকে উঠতাম, কারণ সেখানে কাউকেই দেখতে পেতাম না। তবে কাকে দেখে হাসে নিশি? একদিন তাকে পড়াচ্ছি, হঠাৎ সে আমার পাশে দাঁড়ানো একটি কল্পিত চরিত্রকে বলে বসলো, “এখন যা, আগে পড়া শেষ করে উঠি, তারপর খেলব।” বলার ভঙ্গিটা কেমন যেন অসংলগ্ন, আর তা শুনে ভয়ে আমার রক্ত যে হিম হয়ে এসেছিল, তা বলতে মানা নেই।

ধীরে ধীরে ব্যাপারটা বেশ বুঝে উঠতে পারছিলাম। এই বিষয়ে তখন ‘হাইড এন্ড সিক’, ‘বিউটিফুল মাইন্ড’, ‘সিক্রেট উইন্ডো’- এ ধরনের বেশ কিছু সিনেমা দেখা হয়ে গিয়েছিল। তাই ব্যাপারটা টের পেয়ে নেট ঘেঁটে জানতে পারলাম, সমস্যাটির নাম ‘স্কিজোফ্রেনিয়া‘। একথা মেয়েটির বাবা মাকে জানাতেই, তারা আমার উপর বেশ রেগে গেলেন; হয়তো লোকলজ্জার ভয়। আমার আর নিশিকে পড়ানো হয়নি। এরপরে নিশির কী হয়েছিল তাও আর আমার জানা নেই।

গ্রামাঞ্চলে এই রোগের প্রকোপ চোখে পড়ে অনেক। গ্রামে প্রায়ই শোনা যায়, কেউ একজন সবসময় অদৃশ্য কোনো চরিত্রের সাথে কথা বলছে বা কাউকে ভয় পেয়ে মূর্ছা যাচ্ছে। কেউ তাকে হত্যা করবে এই ভয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরুতে পারছে না। আবার অনেকে একে ভূত বলে আখ্যা দিয়ে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। এসবের বেশিরভাগই স্কিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ।

স্কিজোফ্রেনিয়া এক ধরনের জটিল মানসিক রোগ। এই রোগের কারণে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা লোপ পায়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বাস্তব ঘটনাকে অতিপ্রাকৃত ও অবাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে থাকে। স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের মধ্যে একটি কাল্পনিক জগৎ তৈরি করে নেয়, যার চিন্তা-ভাবনা ও কাজকর্মের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এই রোগীরা নিজেদের মধ্যে হ্যালুসিনেশন বা বিভ্রমের সৃষ্টি করে, যার মাধ্যমে নিজের চারপাশে মনের মতো করে কোনো চরিত্রের সন্ধান পায়।


স্কিজোফ্রেনিয়ার রোগীরা নিজেদের মধ্যে বিভ্রমের সৃষ্টি করে। ছবিসূত্র: thetab.com

স্কিজোফ্রেনিয়া শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক শব্দমূল skhizein (to split বা দু’ভাগ করা) এবং phrēn, phren (mind বা মন) থেকে। তবে এর বুৎপত্তিগত অর্থ ‘split mind’ বা ‘দ্বিখণ্ডিত মন’ হলেও, এটি মূলত একজন ব্যক্তির আবেগ ও চিন্তা-ধারার ভারসাম্যহীনতা বা অসামঞ্জস্যতাকে বোঝায়। অনেকেই এটিকে ‘ডিসোসিয়েটিভ আইডেনটিটি ডিজঅর্ডারের’ সাথে গুলিয়া ফেলে। কিন্তু  ডিসোসিয়েটিভ আইডেনটিটি ডিজঅর্ডার হলো এক ধরনের মাল্টি পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার বা স্প্লিট পারসোনালিটি, যা সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের রোগ।

ডাঃ এমিলি সর্বপ্রথম স্কিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কে ধারণা পোষণ করেন বলে জানা যায়। এর আবিষ্কার খুব বেশিদিনের না হলেও, এই রোগটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো রোগগুলোর একটি। বিভিন্ন প্রাচীন নথিপত্র থেকে জানা যায়, প্রাচীন মিশরে এই রোগের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। অবশ্য সে সময়ে রোগটিকে শয়তান বা ভূতে পাওয়া হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, এই রোগের কারণেই ভূত-প্রেত বিষয়ক কুসংস্কারগুলো উৎপন্ন হয়েছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই এই রোগীর সংখ্যা সবচাইতে বেশি বলে মনে করা হয়ে থাকে। গবেষণায় লক্ষ্য করা যায় যে, পুরুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নারীদের থেকে দেড়গুণ বেশি। স্কিজোফ্রেনিয়ার রোগীদের চিন্তাধারা বা দেখার জগৎ বাস্তবতা থেকে ভিন্ন হয়।

গবেষকদের মতে কয়েক ধরনের স্কিজোফ্রেনিয়ার অস্তিত্ব রয়েছে। যেমন-
প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়া (Paranoid Schizophrenia): এর কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়ে, নিজেকে বিভিন্ন কারণে নির্যাতিত ভাবে এবং আশেপাশের মানুষের ব্যাপারে অহেতুক সন্দেহ প্রকাশ করে। কেউ তার ক্ষতি করতে চাচ্ছে বা তার ব্যাপারে সমালোচনা করছে- সবসময় এরকম ভেবে থাকে।
ডিজঅর্গানাইজড স্কিজোফ্রেনিয়া (Disorganized Schizophrenia): এর কারণে কথাবার্তা ও চিন্তাধারায় অসংলগ্নতা দেখা দেয়। তবে এতে আক্রান্ত ব্যক্তি হেলুসিনেশান বা বিভ্রমের শিকার হয় না।
ক্যাটাটোনিক স্কিজোফ্রেনিয়া (Catatonic Schizophrenia): এতে আক্রান্ত ব্যক্তির আবেগ বা আচরণগত পরিবর্তন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে তার কথা বলা ও অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপ আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি সে কোনোকিছুর প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখাতেও সক্ষম হয় না।
রেসিডিউয়াল স্কিজোফ্রেনিয়া (Residual Schizophrenia): এর  কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি বেঁচে থাকার সব আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং হতাশ হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচাইতে বেশি থাকে।
সিজোএফেক্টিভ ডিজঅর্ডার (Schizoaffective Disorder): এর কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে স্কিজোফ্রেনিয়ার সাথে বিষণ্নতার মতো অন্যান্য মুড ডিজঅর্ডারের লক্ষণ দেখা দেয়।
স্কিজোফ্রেনিয়ার কারণ ও ঝুঁকিগুলো

স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ খুঁজে চলেছেন গবেষকরা যদিও এখনো পরিপূর্ণভাবে সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, প্রতিকূল পরিবেশ, চাপা টেনশন, ক্ষোভ, রাগ, দুর্ব্যবহার ইত্যাদি কারণে স্কিজোফ্রেনিয়া হতে পারে। বংশগতি ও জেনেটিক কারণ, গর্ভ ও প্রসবকালীন জটিলতা, শারীরিক ও জৈবিক কারণ (মস্তিষ্কের রসায়ন ডোপামিনের আধিক্য), পরিবেশগত কারণ (শীতকালে জন্ম ও ফ্লু সংক্রমণ), নগরায়ন, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপ, পারিবারিক অশান্তি, বিকাশজনিত সমস্যা এবং মনোসামাজিক কারণকে স্কিজোফ্রেনিয়া রোগের মূল কারণ বলা হয়ে থাকে।

স্কিজোফ্রেনিয়া রোগের লক্ষণ-
স্কিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীদের আচার-ব্যবহার অন্যান্য আর পাঁচজন থেকে আলাদা। তাদের সামাজিক সকল কার্যকলাপে অনাগ্রহ দেখা দেয়। স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে না পারা,  আবেগহীনতা, সমাজ বিচ্ছিন্নতা এসব কারণে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির বিচার-বিবেচনা শক্তি লোপ পায়। ফলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত ও সামাজিক জীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এক ধরনের অদৃশ্য শব্দ শুনতে পায় বা আস্ত মানুষ দেখতে পায়। অনেকে দেখতে পায় যে, তার হাতে কোনো পোকা বা মাকড়শা বসে আছে, তাকে কামড় দিচ্ছে, অথচ বাস্তবে এগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই।

স্কিজোফ্রেনিয়া রোগের চিকিৎসা-
এ রোগীদের চিকিৎসার পূর্বে তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের ইতিবাচক ভূমিকা একান্ত কাম্য। দীর্ঘমেয়াদে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য মনোসামাজিক প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসার গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে এ রোগের বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। এই রোগ নিরাময়ে নিয়মিত ওষুধ (অ্যান্টি-সাইকোটিক মেডিকেশন) গ্রহণ করতে হয়। ওষুধ ছাড়া এ রোগের উপসর্গের উপশম সম্ভব নয়। অনেক সময় রোগীরা ভালো হয়ে যাওয়ার পর ওষুধ বন্ধ করে দেওয়ায়, পুনরায় রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় ও চিকিৎসার জটিলতা বৃদ্ধি পায়। এজন্য মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হয়।

স্কিজোফ্রেনিয়া নিয়ে আমাদের সমাজে বিভিন্ন ভুল ধারণা ও কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। এই ধরণের রোগীদের পাগল বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা, অপমান করাসহ চিকিৎসাবঞ্চিত রাখা হয়। সামাজিক বৈষম্য ও লোকলজ্জার ভয়ে এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের লাঞ্ছিত জীবন যাপন করতে হয়। তারা সম্মানহীন, বন্ধুহীন ও আত্মীয়-স্বজনহীন জীবনযাপন করে। সামাজিক বন্ধন ছিন্ন হওয়ার ফলে তাদের ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বিজ্ঞানের এই যুগেও সামান্যতম জ্ঞানের অভাবে এ রোগের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন কবিরাজি ও ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নেয়া হয়। কিন্তু এই কুসংস্কারচ্ছন্ন চিকিৎসা রোগীর জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। স্কিজোফ্রেনিয়ার কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকলেও এ রোগের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে দ্রুত চিকিৎসা করানো হলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পরিবার ও সমাজের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

Collected -
https://roar.media/bangla/lifestyle/schizophrenia-where-mind-is-the-habitats-of-the-sickness/
Md. Karim Sarker (Sohel)
Administrative Officer
Daffodil International University
Uttara Campus.
Ph-58952710, Ex-201
Mob-01847140030

Offline Anuz

  • Faculty
  • Hero Member
  • *
  • Posts: 1988
  • জীবনে আনন্দের সময় বড় কম, তাই সুযোগ পেলেই আনন্দ কর
    • View Profile
Re: রোগের নাম স্কিজোফ্রেনিয়া
« Reply #1 on: July 12, 2017, 01:21:06 PM »
নতুন একটা বিষয় সম্পর্কে জানা হল .........
Anuz Kumar Chakrabarty
Assistant Professor
Department of General Educational Development
Faculty of Science and Information Technology
Daffodil International University