ছোট্ট শিশুটি পৃথিবীর আলো দেখে পরিবারের সবার আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে। বাবা মায়ের নয়নের মনি হৈ – হুল্লোড় করতে করতে ধীরে ধীরে বড় হয় । পিতা মাতার অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে স্বপ্ন সাজায় নিজের ভবিষ্যতের এবং জয়-পরাজয়ের মধ্য দিয়ে উপনীত হয় জীবন সায়াহ্নে । এটা ই আমাদের সমাজ সংসার এর চলমান ধারা ।বার্ধক্য জীবনের শেষ পর্যায়ের স্বাভাবিক পালাবদল।আমাদের দেশে প্রবীণদের বয়সসীমা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তবে ৬০ বা তার ঊর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিকে সাধারণত প্রবীণ হিসেবে গণ্য করা হয়।জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে সপ্তম এবং দারিদ্রতা ও দূর্নীতি জর্জরিত বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের ১০ভাগই প্রবীণ নারী-পুরুষ। বয়স বারার সাথে সাথে কিছু রোগ দেখা দেয় যেমন যা হয়ত মৃত্যুর আগে পর্যন্ত পিছু ছাড়ে না ।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ
• হাঁপানি
• ডায়াবেটিস
• উচ্চ রক্তচাপ
• অস্টিওআর্থ্রাইটিস
• শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়া
• প্রস্রাবের সমস্যা
• পাইলস বা হিমোরয়েড
• ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স
• চোখের অসুখ
• শ্বাসকষ্ট
• আলঝেইমার
• ডিমেনসিয়া
• বাত
• মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা
একটু ভাবুনতো নিয়ম মেনে ঔষধ সেবন ই কি এসব রোগ থেকে প্রতিকারের একমাত্র উপায় ? প্রচলিত আছে -পথ্য নয় সেবায় ই নিরাময় । ছোটো বেলায় অসুস্থ হলে ঔষধ এর পাশাপাশি বাবা মায়ের সেবা যত্নে ই দ্রুত আমাদের সেরে উঠা । যে পিতা মাতা আমাকে আপনাকে ছোট্ট শিশু থেকে বড় করে আনন্দময় ভবিষ্যতের জন্য ক্ষয় করেন নিজের জীবন। তদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব বা কর্তব্য কতখানি হয়া উচিত ? আধুনিক সমাজের কতজন শিক্ষিত মানুষ সত্যিকারে বৃদ্ধ মা-বাবার কথা ভাবেন?সভ্য সমাজের গতিময়তা ধরে রাখতে এই মানুষ গুলকে আমরা জঞ্জাল মনে করে হিসাবের বাইরে ফেলে দেই । বয়সের ভারে ন্যুজ্ব পিতামাতা সংসারে হয়ে পড়েন অপাংক্তেয়।
বাবা মায়ের তথাকথিত ভালর কথা চিন্তা করে , নিজেদের দায় মুক্তির জন্য আমাদের সমাজে প্রবীণ দের আশার বানী শোনাচ্ছে “বৃদ্ধাশ্রম” ।আমি “বৃদ্ধাশ্রম” এর বিরুদ্ধে বলছি না। একজন অশহায় সন্তানহীন , সমাজ সংসারে একা পিতা –মাতা ই কেবল স্ব ইচ্ছায় বৃদ্ধাশ্রম কে আশীর্বাদ হিসাবে মেনে নিতে পারেন। কিন্তু একটু ঘুরে আসুন আমাদের দেশের বৃদ্ধাশ্রম , দেখবেন সেখান কার চিত্র যেন বড়ই বিচিত্র । বৃদ্ধা অশ্রমের গন্ডিতে ধুকে ধুকে সময় পার করে এই সব অবহেলিত অগ্রজরা ।আমার কানে বাজছে হিরন বানু , করিমন , আতাউর রহমান এর করুন আরতনাদ,আর ছলছল চোখের চাহনি, যারা বার্ধক্য জনিত রোগের সাথে লড়াই করে যাচ্ছেন আর শত কষ্ট দেওয়ার পর ও প্রানপ্রিও সন্তান এর অপেক্ষা করছেন।
কথা হয় একজন বৃদ্ধাশ্রম পরিচালক এর সাথে , দুখের সাথে তিনি বলেন আমি ও চাই না জীবনের শেষ দিনগুলো এই লোক গুলো খাঁচার পাখি হয়ে বিদায় নিক , তার ভাষায় ঃ‘‘দায়িত্ববান সন্তানের কাছে পরিবারের অন্যতম সদস্য হয়ে বেঁচে থাকুন পিতা-মাতা, দাদা-দাদী। বুক উঁচু করে বেঁচে থাকুক সেই সব সন্তান, যারা তাদের পিতা-মাতাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এতো টুকুও সম্মানহানী না করে, কষ্ট না দিয়ে তাদের আগলে রাখে’’।
পিতা-মাতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে লোভী দৃষ্টি সুদৃঢ়ভাবে তৈরি করতে চায় আপন সংসার , যার কেন্দ্রবিন্দু কিনা তার সন্তান। সন্তানের নিশ্চিত ভবিষ্যৎ তৈরী করতে বিলিয়ে দিচ্ছে নিজেকে,কিন্তু সময় বড় নিষ্ঠুর! কে জানে তার পিতামাতার মত সেও হয়ত অগ্রসর হচ্ছে সর্পিল দিনের কালো অধ্যায়ে। তার আদরের সন্তানেরা বড় হয়ে যে তার মতই নিষ্ঠুর ব্যবহার কবে না সে নিশ্চয়তা কে দেবে? আসুন সচেতন হই , বৃদ্ধ বাবা মায়ের বার্ধক্য কে আনন্দে পরিনত করি । নিজের সুস্থ ,স্বাভাবিক ,আনন্দময় ভবিষ্যৎ গড়ি।