বিশ্বকাপ...যেকোনো খেলোয়াড়ের আজন্ম আরাধ্য এক স্বপ্ন। তা তিনি ফুটবলার হোন কিংবা ক্রিকেটার। সেই স্বপ্ন পূরণও হয় অনেকের। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার চ্যাম্পিয়ন দলেরও সদস্য হওয়ার গৌরব গায়ে মাখেন। কিন্তু এমন কেউ কেউ আছেন, যাঁরা নিজেদের দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত হওয়ার পরেও কখনোই বিশ্বকাপে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাননি। অথচ এই ক্রিকেটারদের কারও কারও দেশ বিশ্বকাপ জিতেছে একাধিকবার। এমনই কয়েকজনের গল্প নিয়ে এই লেখা...
জাস্টিন ল্যাঙ্গার (অস্ট্রেলিয়া): যেকোনো বিচারেই অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ওপেনার জাস্টিন ল্যাঙ্গার। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান দেশের হয়ে খেলেছেন ১০৫টি টেস্ট। ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে ৪৫.২৭ গড়ে করেছেন ৭ হাজার ৬৯৬ রান। সেঞ্চুরি ২৩টি। এমন দুর্দান্ত একজন ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ারেই অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জিতেছে তিনবার। অথচ ল্যাঙ্গার কখনোই এই গৌরবের অংশ হতে পারেননি। বিশ্বকাপ দলে সুযোগই যে পাননি কোনো দিন।
ম্যাথু হগার্ড (ইংল্যান্ড): টেস্টে ম্যাথু হগার্ডের যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বকালের সেরা ১০ উইকেট-শিকারির তালিকায় আছেন এই ফাস্ট বোলার—৬৭ টেস্টে ২৪৮ উইকেট। ২০০৫ সালে রিকি পন্টিংয়ের সর্বজয়ী অস্ট্রেলীয় দলের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ জয়ে দারুণ ভূমিকা রেখেছিলেন হগার্ড। তবে টেস্টে সফল এই বোলার কেন যেন ৫০ ওভারের ক্রিকেটে খুব ভালো করতে পারেননি কখনোই। ওয়ানডে খেলেছেন মাত্র ২৬টি, উইকেট পেয়েছেন ৩২টি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি ৫ উইকেট-কীর্তি অবশ্য আছে তাঁর। বিশ্বকাপ না খেলেই ২০০৬ সালে শেষ হয়ে যায় তাঁর ক্যারিয়ার। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ইংলিশ স্কোয়াডে থাকলেও ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি তাঁর।
ক্রিস মার্টিন (নিউজিল্যান্ড): ক্রিস মার্টিনের টেস্টের সংখ্যা ৭১। বড় সংস্করণে নিজের যোগ্যতা তিনি প্রমাণ করেছেন ২৩৩ উইকেট নিয়ে। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে উইকেট শিকারে স্যার রিচার্ড হ্যাডলি আর ড্যানিয়েল ভেট্টোরির পরেই তাঁর অবস্থান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারটা কেন যেন কিছুতেই বাগে আনতে পারেননি। ১৮টি ম্যাচে মাত্র ২০ উইকেট নিয়েই ছোট সংস্করণে নির্বাচকদের সুদৃষ্টি হারিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ড্যারিল টাফির চোটের কারণে জায়গা অবশ্য পেয়েছিলেন, কিন্তু কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি তাঁর।
ভিভিএস লক্ষ্মণ (ভারত): শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড় আর ভিভিএস লক্ষ্মণ। এক নিশ্বাসেই উচ্চারিত হয় ‘দুর্দান্ত চতুষ্টয়ে’র নাম। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার পরও লক্ষ্মণের ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ না খেলেই। অথচ কী দুর্দান্ত তাঁর ক্যারিয়ার-রেকর্ড। দেশের হয়ে খেলেছেন ১৩৪টি টেস্ট। ৪৫.৯৭ গড়ে করেছেন ৮ হাজার ৭৭১ রান। ২০০১ সালে কলকাতা টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই ২৮১ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসই তাঁকে অমর করে রাখবে ক্রিকেট ইতিহাসে। ওয়ানডে রেকর্ডটা খুব ভালো নয় সে হিসাবে। ৮৬ ওয়ানডেতে রান মাত্র ২ হাজার ৩৩৮। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে সুযোগ হতে গিয়েও হয়নি লক্ষ্মণের।
অ্যালিস্টার কুক (ইংল্যান্ড): বিশ্বকাপ না-খেলা বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার সদ্যই সাবেক হওয়া এই ইংলিশ অধিনায়ক। কিছুদিন আগেই ইংলিশ ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ১০ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেছেন। দেশের হয়ে ১৪১টি টেস্ট খেললেও ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দলে সুযোগ নেই তাঁর। কুককেও হয়তো ভিভিএস লক্ষ্মণ কিংবা জাস্টিন ল্যাঙ্গারের মতো বিশ্বকাপ না খেলতে পারার আক্ষেপ নিয়ে বিদায় নিতে হবে ক্রিকেট থেকে।