Entertainment & Discussions > Story, Article & Poetry

'ছিনতাইকারীদের হাতে ঝরবে আর কত প্রাণ?' ইত্তেফাক পত্রিকায় আমার কলাম, ১৩.১১.২০১৭

(1/1)

kekbabu:
ছিনতাইকারীদের হাতে ঝরবে আর কত প্রাণ?
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু
জনসংখ্যাধিক্য ও কর্মসংস্থানের অভাব এবং মাদকের সহজলভ্যতা সম্বলিত ক্ষুদ্র আয়তনের এ দেশে ছিনতাই-রাহাজানি দিনে দিনে বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে ছিনতাই-রাহাজানির ঘটনা প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে উঠছে। বাস্তব অবস্থা এই যে, প্রতিনিয়তই দেশের সাধারণ মানুষ ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ছে। আর এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে হেঁটে কিংবা রিকশায়, বাসে কিংবা ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাফেরা করার সময়, সকালে-দুপুরে-সন্ধ্যায়-রাতে, জনাকীর্ণ স্থানে কিংবা ফাঁকা জায়গায়। এক কথায় সর্বদা-সর্বত্র। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে, ছিনতাইকারীরা এখন শুধু লোকজনের টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্রই ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না, ছুরিকাঘাত করে আহত করছে, হত্যা করছে। এমনকি গুলি করতেও এখন দ্বিধা করছে না ছিনতাইকারীরা।  ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে সর্বশেষ গত ৮ অক্টোবর রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় অকালে প্রাণ হারালেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী খন্দকার আবু তালহা। ওইদিন ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে তিনি দেখতে পান, রাস্তায় এক রিক্সাযাত্রী ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছে। তখন তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে ছিনতাইকারীরা তালহাকে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। এসময় কেউ তালহাকে বাঁচাতে এগিয়ে না আসলে আহত তালহা নিজেই ফিরে যায় তার বাসায়। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। আর এভাবেই ছিনতাইকারীদের ছুরির নিচে একটি মূল্যবান জীবনসহ একটি পরিবারের স্বপ্ন-সাধ নিমিষেই মাটিতে মিশে গেলো।

শুধু তালহা-ই নন, তালহার মতো দেশের অনেককেই মূল্যবান জীবন হারানোসহ আহত হয়ে সর্বস্ব খোয়াতে হয়েছে ছিনতাইকারীদের হাতে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চলতি বছরের ২৪ আগস্ট রাতে নেত্রকোনার পূর্বধলায় কাকন মিয়া নিহত; ২৫ আগস্ট রাজধানীর শনির আখড়ার শেখদী এলাকায় বদরুল আজিজ নামের এক ব্যক্তি আহত; ১ অক্টোবর রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর এলাকায় ছিনতাইকারী ধরতে গিয়ে মোঃ আরিফ  নামের এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয় ছিনতাইকারীদের হাতে। দেশের অন্যান্য স্থানেও থেমে নেই ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য। এই পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ মানুষ আজ নির্বিঘ্নে-নিরাপদে চলাফেরা করার সাহস করতে পারছেন না। আর এ ধরনের ঘটনা যে নিঃসন্দেহে একটি দেশের নাজুক, দুর্বল ও ভঙ্গুর আইন পরিস্থিতিরই চিত্র তুলে ধরে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।  দেশে ছিনতাইকারীদের ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক দৌরাত্ম্যের মাধ্যমে একটি বিষয় পরিষ্কার, আর তা হচ্ছে-এসব পেশাদার ছিনতাইকারীর কাছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এখন অনেক সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি এসব অপরাধীর মধ্যে শাস্তির ভয়ও সম্ভবত কমে গেছে। সর্বোপরি, তারা ছিনতাই-ডাকাতির কাজে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে তথা হত্যার ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করছে না। এসবের কারণ হতে পারে আইনের ফাঁক-ফোকর থাকাসহ রাজনৈতিক ও ক্ষমতাবান দাদা ভাইদের আশ্রয়-প্রশ্রয় তথা সান্নিধ্য লাভ। দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশে আশঙ্কাজনক হারে ছিনতাই-ডাকাতি আর নৈরাজ্যের ঘটনা ঘটে চললেও সেই তুলনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার, বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের ঘটনা খুবই কম চোখে পড়ে। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ‘প্রশাসন ম্যানেজ পদ্ধতি’, আইনের ফাঁক-ফোকর ও ক্ষমতাবান দাদা ভাইদের কারণে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। ফলে পরবর্তীতে এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার লক্ষ্যে তাদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে এবং তাদেরকে দেখে এ ধরনের অপরাধ করতে অন্যরাও পা বাড়াচ্ছে।

অনেক সময় দেখা যায়, কোনো ছিনতাইকারীকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করে  আদালতে পাঠানোর পরও সে জামিনে বেরিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে তাহলে পুলিশ কি প্রতিবেদনে এমন কোনো ফাঁক-ফোকর রেখে দেয়, যাতে আদালত থেকে ছিনতাইকারীদের জামিন পেতে কোনো অসুবিধা না হয়? এ ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের মনে এ জাতীয় ক্ষোভ দেখা দেওয়াটাই স্বাভাবিক। অপরদিকে ছিনতাইকারীদের প্রতিরোধে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও যেন প্রতিরোধ করার মানসিকতা গড়ে উঠছে না- ঠিক যেন ঝড়ের সময় মরুভূমির উটপাখির ন্যায়। তালহার ঘটনা থেকে যা স্পষ্টতই প্রমাণিত হয়। দেশে প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটবে, তালহার মতো সাহসী তরুণদের জীবন দিতে হবে, জনগণকে হতে হবে আহত আর খোয়াতে হবে সর্বস্ব? এসব ঘটনার মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক। তবে দেশের জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং নির্বিঘ্নে জনগণের চলাচলের পথকে সুগম করতে জনগণের টাকায় পরিচালিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিনতাইকারীদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে একযোগে দ্রুত এগিয়ে আসবে-এমটাই সকলের প্রত্যাশা।
লেখক: ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক; বর্তমানে ফিলিপাইনের লাইসিয়াম অব দ্য ফিলিপাইন্স ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কর্মরত।
ই-মেইল: kekbabu@yahoo.com

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/sub-editorial/2017/10/13/228688.html

Navigation

[0] Message Index

Go to full version