First Satellite of Bangladesh

Author Topic: First Satellite of Bangladesh  (Read 1025 times)

Offline Shihab Ahammed

  • Newbie
  • *
  • Posts: 41
  • Test
    • View Profile
First Satellite of Bangladesh
« on: May 13, 2018, 06:25:40 PM »
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট একটু আগে উড়ে গেল। এটা একটা #জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট। যদি জিওস্টেশনারি না হয়, তাহলে সেই স্যাটেলাইট থেকে হয় সারাদিন কাভারেজ পাওয়া যাবে না, অথবা কিছুকিছু ক্ষেত্রে গ্রাউন্ড স্টেশনের অ্যান্টেনা স্যাটেলাইটের সাথে সাথে ঘুরতে/নড়তে হবে, যাতে খরচ বেড়ে যায়।
সব স্যাটেলাইট জিওস্টেশনারি হতে পারে না, দরকারও নেই। কিন্তু যেসব স্যাটেলাইট জিওস্টেশনারি, তাদের দুইটা বৈশিষ্ট থাকেঃ
- তারা বিষুব রেখার ঠিক উপরে অবস্থান করে (এক ডিগ্রি কম/বেশি হতে পারে)
- পৃথিবী যেমন নিজের অক্ষকে কেন্দ্র করে ২৪ ঘন্টায় একবার ঘুরে আসে, এই স্যাটেলাইটগুলিও পৃথিবীর অক্ষকে কেন্দ্র করে ২৪ ঘন্টায় একবার ঘুরে আসে।

এই দুই শর্তের ফলাফল—পৃথিবীর ঘোরার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এই স্যাটেলাইটগুলি পৃথিবীপৃষ্টের একটা নির্দিষ্ট এলাকার ওপর থেকে যায়, অর্থাৎ জিও + স্টেশনারি হয়ে যায়।
বিষুব রেখার ওপরে মানে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে বিষুব রেখা বরাবর অসংখ্য লাইন টেনে যদি আকাশে বাড়ানো হয়, জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটগুলি সেই লাইনের উপরে থাকবে। কিন্তু এই দূরত্ব অসীম নয়; নিউটন আর কেপলারের কয়েকশ বছর আগে আবিষ্কার করা সূত্র অনুযায়ী আমরা জানি, জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে ৩৬,০০০ কিলোমিটার দূরে থাকবে। এটাকে সায়েন্স ফিকশন লেখক আর্থার সি ক্লার্ক-এর নামে ক্লার্ক অরবিটও বলা হয় কারন ক্লার্ক প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইটের এই ধারণা দিয়েছিলেন।

একটু ফিজিক্সঃ
কোন ঘূর্নায়মান বস্তুর ওপর কেন্দ্রমুখী বল, F = m r w^2 (m স্যাটেলাইটের ভর, r দূরত্ব, w কৌনিক গতি)। আর মহাকর্ষের সূত্র থেকে আমরা জানি, F = G M m / r^2 (F বল, G মহাকর্ষ ধ্রুবক, M পৃথিবীর ভর, m স্যাটেলাইটের ভর, r দূরত্ব)। এই দুইটা সমান,
অর্থাৎ
m r w^2 = F = G M m / r^2
বা, r^3 = (G M)/w^2

এটা ব্যাখ্যা করার জন্য কেপলারের ৩য় সূত্র সবচাইতে ভাল, কিন্তু আমি ইচ্ছা করেই আমাদের সবার জানা দুইটা সূত্র ব্যাবহার করছি। সেটার সমস্যা হচ্ছে, আমাদেরকে দুইটা ভ্যারিয়েবল/চলকের সমাধান করা লাগবে, কিন্তু আমাদের ইকুয়েশনও মাত্র দুইটা তাই সরাসরি সমাধান করা যায় না। তাই একটু চোখা মেরে দেই।
যদি r = ৪২,০০০ কিমি আর w = ৩.০৭ কিমি/সেকেন্ড ধরা হয়, তাহলে এই দুইটা ইকুয়েশন ব্যালেন্স হয়, এবং এই গতিতে এই উচ্চতায় একটি স্যাটেলাইট ২৪ ঘন্টায় একবার পৃথিবীকে ঘুরে আসে, অর্থাৎ জিওস্টেশনারি হয়ে যায়। এখানে ৪২,০০০ কিমি পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে দূরত্ব। সেটা থেকে যদি পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বিয়োগ করা হয়, তাহলে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ৩৫,৭৮৬ কিমি। অর্থাত সব জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট এই ব্যাসার্ধের একটা বৃত্তের ওপরে থাকা লাগবে।

এই কেন্দ্রমুখী বল বা মহাকর্ষের জন্য স্যাটেলাইটটা সবসময় পৃথিবীর দিকে পড়তে থাকে, কিন্তু শুরুর গতিজড়তা/ঘুর্ননজড়তার জন্য সামনের দিকেও আগাতে থাকে। এই পড়ার পরিমান যদি কক্ষপথের বক্রতার সমান হয়, তাহলে এটা একটা বৃত্তাকার কক্ষপথকে অনুসরন করতে থাকবে, কখনই পড়ে যাবে না বা মহাকাশে ছুটে যাবে না।

এখানে গরিব দেশগুলির জন্য একটা ঝামেলা হয়েছে। সেই ঝামেলা কি বলার আগে #ফুটপ্রিন্ট কি জেনে নেই। দূর থেকে টর্চের আলো যেমন একটা আলোকিত বৃত্ত তৈরি করে, তেমনি স্যাটেলাইটের রেডিও সিগন্যাল শুধুমাত্র একটা এলাকা থেকে পাওয়া যায়। সেই এলাকাটাকে সেই স্যাটেলাইটের ফুটপ্রিন্ট/পদচিহ্ন বলা হয়ে থাকে। রাতের আকাশে যেমন সূর্য পৃথিবীর আড়ালে পড়ে যায়, তেমনি অ্যামেরিকার আকাশে জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট বাংলাদেশের জন্য পৃথিবীর আড়ালে—বাংলাদেশ সেই স্যাটেলাইটের ফুটপ্রিন্টে নাই এবং সেই স্যাটেলাইট দিয়ে বাংলাদেশের কোন কাজ হবে না। সুতরাং বাংলাদেশের জন্য এমন জায়গায় স্যাটেলাইট স্থাপন করা লাগবে, যাতে বাংলাদেশ তার ফুটপ্রিন্টে পড়ে। কোথায় স্যাটেলাইট বসবে, সেই জায়গাগুলিকে বলা হয় অরবিটাল স্লট, এবং Internanational Telecommunication Uniton (ITU) প্রতিটি দেশকে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে স্লট দিয়ে থাকে। ক্যাচালটা এইখানেই—বাংলাদেশের উপরে বা আশেপাশের সব স্লট অন্য কিছু দেশ নিয়ে নিয়েছে। এটা ITU কাউকে দেয়ার আগে আপত্তি করার একটা ব্যাবস্থা থাকে কিন্তু বাংলাদেশে কেন সেটা নিয়ে সময়মত আপত্তি করে নাই, আমি জানি না। টংগা নিজেদের পাঁচটা স্লট বছরে ২ মিলিয়ন ডলার ১৯৮৮তে নিলাম করেছে। যাই হোক, ব্যাপারটা অনেকটা এরকম হয়ে গিয়েছে যে আপনি থাকেন চট্টগ্রামে, কিন্তু জমি আছে শুধু রংপুরে। বাসা বানাতে হলে রংপুরে বানাতে পারেন, কিন্তু তাতে আপনার লাভ কি? অন্য কেউ সেই বাসা ভাড়া নিতেও ইচ্ছুক না। সুতরাং আপনাকে এখন চড়া দাম দিয়ে অন্যের কাছ থেকে চট্টগ্রামেই জমি কেনা লাগবে। বাংলাদেশও সেটাই করেছে, ১১৯.১ ডিগ্রিতে একটা স্লট লিজ নিয়েছে ১৫ বছরের জন্য রাশিয়ানদের কাছ থেকে ২৮ মিলিয়ন ডলার দিয়ে। স্যাটেলাইট ১৫ বছর টিকবে (সাধারনত এরকমই হয়ে থাকে), তারপর আবার হয়তো এই স্লট লিজ নেবে, অথবা ততদিনে টেকনলজি আরো ছড়িয়ে যাবে, আর স্যাটেলাইট লাগবে না। মাত্র ১৮০০ জিওস্টেশনারি স্লট আছে--একটা থেকে আরেকটা ১০০০ কিমি দূরে যাতে ধাক্কা না লাগে এবং একটা আরেকটার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিটে ঝামেলা না করে। (স্লটের দাম বাড়ছে, কমছে না। সেই হিসাবে বাংলাদেশ টংগার ১৯৮৮ সালের দামের চাইতে সস্তাতেই পেয়েছে। আফসোস; টংগা যদি ১৯৮৮ সালে এটা নিয়ে ভাবতে পারে, আমরা কেন নিজেদের স্লট নিয়ে তখন ভাবতে পারি নাই যার ফলে এখন টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে?

বাসা বানাতে গেলে যেরকম প্রথমে জমি ঠিক করা লাগে, তার পর জমি বুঝে প্ল্যান, সেই প্ল্যান রাজউক থেকে পাশ করানো লাগে, স্যাটেলেইটের জন্যও তাই। প্রথমে জমি (স্লট) আশেপাশে কি স্যাটেলাইট আছে, তারা কোন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যাবহার করে, সেগুলির সাথে যাতে কোন সঙ্ঘর্ষ না হয়, সেটা হিসাব করে ITU ফ্রিকোয়েন্সি অনুমোদন দেয় (প্ল্যান পাশ)। তারপর স্যাটেলাইট (বাসা) বানানো লাগে। বাংলাদেশ জমি পেয়েছে, প্ল্যান পাশ হয়েছে, এবং সব শেষে স্যাটেলাইট তৈরী হয়ে উড়ে গেল মহাকাশে।

#লঞ্চ_উইন্ডোঃ প্রথমবার উড়তে গিয়েও স্পেইস এক্স-এর ফ্যালকন-৯ রকেট শেষ মুহুর্তে এসে উতক্ষেপন বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সমস্যা সমাধানের সাথে সাথে কেন আবার উতক্ষেপন করা হলো না? কারন এই লঞ্চ উইন্ডো। জ্বী না, এটা ঢাকা বরিশাল লঞ্চের জানালা নয়, এটা ঠিক কখন উতক্ষেপন করলে সবচাইতে কম খরচে স্যাটেলাইট জায়গা মত পৌছান যাবে, সেটার একটা হিসাব। ছুটন্ত কিছুর দিকে কখনো ঢিল মেরে দেখেছেন? আপনার ঢিল পৌছাতে পৌছাতে টার্গেট সরে যায়; তাই টার্গেট আর ঢিলের গতি হিসাব করে সামনে ঢিল মারা লাগে। এখানেও তাই; স্লট কোথায় সেটা হিসাব করে উতক্ষেপন করা লাগে কারন পৃথিবী ঘুরছে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, উতক্ষেপনস্থল আর অরবিটাল স্লট একই সরলরেখায় থাকলে জ্বালানী কম লাগে। সেটা স্লটটা কোথায়, সেটার ওপরে নির্ভর করে। মহাকাশে কিছু পাঠানোর খরচ অনেক; প্রতি কেজি পাঠাতে খরচ প্রায় ২৫,০০০ ডলার বা ২০ লক্ষ টাকা। সুতরাং বাড়তি জ্বালানী পাঠাতেও অনেক খরচ। তাই খরচ কমানোর জন্য এই দুইটা হিসাব মাথায় রেখে দিনের যে সময়ে উতক্ষেপন করলে সবচাইতে কম খরচ হবে সেটাকে লঞ্চ উইন্ডো বলা হয় (উতক্ষেপনের মোক্ষম সময়)।

রাত জেগে বাংলাদেশের অনেকেই দেখলেন কিভাবে রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মহাকাশের দিকে ভেসে গেল আমাদের বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট। এই ধারাবর্ননায় অনেকেই শুনেছেন, রকেটের স্টেইজ-২ #ট্র্যান্সফার_অরবিট-এ পৌছে দিল। ধরুন, প্লেনে করে বিদেশ থেকে দেশের এয়ারপোর্টে নামলেন। এবার বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়িতে করে যেতে হবে। ট্র্যান্সফার অরবিট এরকম মধ্যবর্তি একটা স্থান, যেখানে রকেট থেকে স্যাটেলাইট আলাদা হয়ে যায়। এর পর স্যাটেলাইট নিজের জ্বালানী ব্যবহার করে তার নিজস্ব স্লটে পৌছে যাবে। এই কাজটা করবে থালিস-এর প্রকৌশলীরা; স্পেইস-এক্স এর এখানে আর কোন ভূমিকা নেই। কিছুদিন পরীক্ষা-নিরিক্ষার পরে শুরু হবে এর বানিজ্যিক ব্যাবহার। দেশের দুটা উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র অন্যের স্যাটেলাইটের বদলে আমাদের নিজেদের স্যাটেলাইটের সাথে যোগাযোগ রাখবে।

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ!

Courtesy: Javed vai
Shihab Ahammed
Lecturer, Civil Engineering
Permanent Campus
Daffodil International University